গ্রেপ্তারের দিন যে কারণে ময়মনসিংহ গিয়েছিলেন হেলেনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৫৪ | প্রকাশিত : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৩৪

আওয়ামী লীগের উপকমিটি থেকে বহিষ্কৃত হেলেনা জাহাঙ্গীর গ্রেপ্তারের দিন সকালে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলেন। নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে তিনি ময়মনসিংহে গিয়েছিলেন একদাগে বড় পরিমাণের জমি কিনতে। বড় জমি পেয়েও ছিলেন, কিন্তু একদাগে ৩০ বিঘার বেশি মেলেনি বলে সেদিন জমি না কিনে ফিরে আসেন তিনি।

কত পরিমাণ জমি কিনতে চেয়েছিলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর? জানা গেছে, ময়মনসিংহের ওই এলাকায় এক দাগে ৫০ বিঘা জমির খোঁজে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একধিক সূত্র ঢাকা টাইমসকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামের একটি সংগঠনের সভাপতি হিসেবে হেলেনা জাহাঙ্গীরের নাম আসায় তাকে উপকমিটির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর তিনি ফেসবুক লাইভে এসে দলের নেতাদের নিয়ে কথা বলেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। গত ৩০ জুলাই রাতে হেলেনার বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব।

ওই দিন সন্ধ্যায় বিতর্কিত এই নারীনেত্রীর গুলশানের বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাবের একাধিক দল। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, ক্যাসিনো সরঞ্জাম, ওয়াকিটকি, বন্য প্রাণীর চামড়া ও চাকু। তাকে আটকের পর তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করে র‌্যাব। এ ছাড়া হেলেনার মাধ্যমে প্রতারিত একজন সাংবাদিক পল্লবী থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেন। বর্তমানে চারটি মামলায় তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পল্লবী থানার টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় জামিন পেয়েছেন এই আলোচিত ব্যবসায়ী। বাকি তিন মামলায় তার জামিন হয়নি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র বলছে, বিভিন্ন উপায়ে হেলেনা জাহাঙ্গীর বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিশেষ করে প্রতারণা, চাঁদাবাজি কিংবা ‘ব্ল্যাকমেইল’ করে অর্থ কামানোয় ব্যস্ত ছিলেন তিনি। তার আয়ের উৎস খুঁজছে সিআইডি ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সূত্রটি আরও জানায়, হেলেনা জাহাঙ্গীর যেদিন গ্রেপ্তার হন, সেদিন সকালে নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ময়মনসিংহে যান জমি কিনতে। একটি এলাকায় এক দাগে ৫০ বিঘা জমি খুঁজছিলেন তিনি। একটি জমির খোঁজ পেয়েছিলেন, কিন্তু সেটি ছিল ৩০ বিঘার মতো ছিল। নিজের চাহিদামতো জমি না পাওয়ায় পরে হেলেনা জাহাঙ্গীর ঢাকায় ফিরে আসেন। তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তার গুলশানের বাসভবনে অভিযান চালায় র‌্যাব। এরপর তিনি গ্রেপ্তার হন।

একাধিকবার রিমান্ড শেষে বর্তমানে কারাগারে আটক আছেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। তার বিরুদ্ধে চার মামলার তদন্তকাজ শেষ পর্যাটয়ে বলে জানা গেছে।

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হেলেনা জাহাঙ্গীরের চারটি মামলা তদন্ত করছে সিআইডি। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা মামলার তদন্তকাজ অনেকটা গুছিয়ে এনেছেন। কিছু আলামতের ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। সেগুলো হাতে পেলেই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’

বিদেশ সফরে মদ কেনাই ছিল হেলেনার নেশা

হেলেনা জাহাঙ্গীর বিদেশে বেড়াতে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে মদের বোতল কিনতেন। পরবর্তী সময়ে সেগুলো তিনি নিজের বাড়িতে রাখতেন। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ শেষে ফেরার সময় সেসব দেশের এয়ারপোর্ট থেকে বিদেশি মদ কিনে আনতেন। বিদেশি এসব মদের বোতল র‌্যাবের অভিযানের সময় তার বাসা থেকে উদ্ধার হয়। হেলেনার পাঁচটি গার্মেন্ট

হেলেনা পাঁচটি গার্মেন্টের মালিক। এগুলো হলো মিরপুর ১১ নম্বরের নিউ কনসার্ন প্রিন্টিং ইউনিট, নারায়ণগঞ্জের জয় অটো গার্মেন্টস, জেসি এমব্রয়ডারি, প্যাক কনসার্ন (যৌথ মালিকানা) ও হুমায়ারা স্টিকার। তদন্তে সাতটি সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার কথাও উঠে এসেছে। সেগুলো হলো জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন, আর্চারি ফেডারেশন ক্লাব, নোটারি ডোনেশনস, টেনিস ফেডারেশন, ইনারহুইল ক্লাব, জন্টা ইন্টারন্যাশনাল লেডিস ক্লাব ও ক্যারম ফেডারেশন।

আইপি টিভির নামে প্রতারণা

২০১৮ সালে নিবন্ধন ছাড়াই জয়যাত্রা নামের আইপি টিভির কার্যক্রম শুরু করেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। এই ভুঁইফোড় টিভিতে প্রায় ৭০ জন কর্মী নিয়োগ দেন। বেতন-ভাতা পাওয়া নিয়ে কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ আছে। কর্মীদের মধ্যে অনেকেই জয়যাত্রার আইডি কার্ড ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করে থাকেন। গত দুই বছরে বিভিন্ন মাধ্যম ও টেলিভিশনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে এবং এজেন্সি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্নজনের কাছ থেকে বিভিন্ন পরিমাণ টাকা আদায় করেন হেলেনা। কারো কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা, কারো কাছ থেকে ২০ হাজার; আবার কারো কাছ থেকে এক লাখ টাকাও নিয়েছেন।

হেলেনার যত ফ্ল্যাট

হেলেনা জাহাঙ্গীরের মালিকানায় রাজধানীতে ১৫টি ফ্ল্যাটের খোঁজ মিলেছে। এর মধ্যে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরে পাঁচটি ফ্ল্যাট, গুলশান ৩৬ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়িতে পাঁচটি ফ্ল্যাট, গুলশান ২ নম্বরের ৮৬ নম্বর সড়কের ৭/বি নম্বর বাড়িতে আট হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, গুলশান এভিনিউ ও নিকেতনে দুটি ফ্ল্যাট, মিরপুর ১১ নম্বরে একটি ফ্ল্যাট এবং কাজীপাড়ায় একটি ফ্ল্যাট আছে। এসব বিষয়ে অনুসন্ধান করছে সিআইডি।

(ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/এসএস/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :