শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

বাংলাদেশের যেন দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান
  প্রকাশিত : ১৭ মে ২০২২, ০৯:৩৯| আপডেট : ১৭ মে ২০২২, ১২:২৫
অ- অ+

দেশ-বিদেশের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের হত্যার পর বাংলাদেশ উল্টো পথে চলতে থাকে। বাংলার স্বাধীনতার চেতনার সূর্য্যটা অস্তমিত হয়ে যায়। দেশ অন্ধকারে পতিত হয়। শুরু হয় ইতিহাস বিকৃতি। যে পাকিস্তানি ভাবধারা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনদান, পাকিস্তানি সেই সাম্প্রদায়িক ভাবধারা দেশে পুনরায় জাগ্রত হয়। ধর্মান্ধ-মৌলবাদী গোষ্ঠী মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হয় সমগ্র দেশ। শোষক শ্রেণির হাতে চলে যায় দেশের নিয়ন্ত্রণ। সঠিক নেতৃত্বহীন ও দিকহারা হয়ে যায় লাখ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ। অযোগ্য, অসৎ, মানবিক গুণহীন মানুষের কাছে চলে যায় দেশের নেতৃত্ব। শুরু হয় মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা।

তবে তখনও বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা নামের আশার আলো নিভু নিভু প্রদীপের মতো জ্বলছিল। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বিদেশে থাকার কারণে ঘাতকদের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যান। এটা ছিল আল্লাহর অশেষ রহমত। আসলে বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন একটি স্বাধীন দেশ। আর সেই দেশকে সব দিক দিয়ে পুনর্গঠনসহ বাংলার মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দান এবং উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্যই মহান আল্লাহ বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা ও কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।

বঙ্গবন্ধু-কন্যা দেশে ফিরে আসার পরেও তাকে বারবার হত্যার চেষ্টা করা হয়। তবে আল্লাহর অশেষ রহমতে খুনিদের সে চেষ্টা বারবারই ব্যর্থ হয়েছে। এটা বাংলাদেশের জনগণের জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এর প্রমাণ প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাওয়া আজকের বাংলাদেশ।

প্রকৃতপক্ষে, বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশের সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর পুনরায় বাংলাদেশকে স্বাধীনতার চেতনার পথে এগিয়ে নিয়ে যান। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক এবং শোষণহীন সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশের মানুষ পুনরায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিজেকে শিহরিত করার সুযোগ পায়। এ জন্যই আমি শিরোনামে বলেছি, শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: বাংলাদেশের যেন দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন।

আমি বিশ্বাস করি, এই দেশের জনগণেরও বিশ্বাস তাই, আর সেটা হলো- প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ। বাংলাদেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকলে পথ হারাবে না আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সঠিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাঁর নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি, অবকাঠামো, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করেছে। সব বাধা অতিক্রম করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যথার্থ বাস্তবায়ন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অবশ্যই একদিন উন্নত দেশে পরিণত হবে।

এবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। পনেরই আগস্টের পর বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা যখন বিদেশে অবস্থান করছিলেন, তখন তাঁকে আওয়ামী লীগের প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা জননেতা জিল্লুর রহমান, আব্দুস সামাদ আজাদ, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, আইভি রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, বেগম জোহরা তাজউদ্দীন, আব্দুল মালেক উকিলসহ অনেকে। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।

বুকভরা অসীম শোককে ধারণ করে নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনতে তার দুই শিশুসন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে রেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফেরেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

এর আগে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে প্রায় ছয় বছর ভারতে অবস্থান করেন। সব বাধা ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে ঝড়-বৃষ্টির মাঝে বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হয়ে ফিরে এসেছিলেন। মুষলধারা বৃষ্টিবাদল উপেক্ষা করে সেদিন বিমানবন্দরে লাখো জনতা অপেক্ষা করছিল কখন আসবেন তাঁদের প্রাণের নেত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন বিমানবন্দরে মানুষ স্লোগান তুলেছিল ‘ঝড় বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’, ‘পিতৃহত্যার বদলা নিতে, লক্ষ ভাই বেঁচে আছে’, ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ ইত্যাদি।

দেশের মাটিতে পা দিয়ে লক্ষ লক্ষ জনতার সংবর্ধনায় আপ্লুত শেখ হাসিনা সেদিন বলোছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।... আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই।’ শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি নিতেই হয়, মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’

দেশে ফেরার পর জননেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৮ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়াও ১১ বছরের বেশি সময় তিনি ছিলেন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা।

বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের মানসকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, বাংলাদেশে যা ছিল একসময় কল্পনাতীত।

পরিশেষে বলব, প্রতিটি ক্ষেত্রেই জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এবং এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, মহান আল্লাহ তাআলার রহমতে তিনি যেন শতায়ুপ্রাপ্ত হন এবং অবশ্যই ২০৪১ সাল পর্যন্ত দেশ পরিচালনার সুযোগ পান। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেঁচে থাকলে এবং দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবেই। বাংলাদেশের জনগণ হবে বিশ্বের বুকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী উন্নত দেশের সৌভাগ্যবান গর্বিত নাগরিক।

লেখক: চেয়ারম্যান, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ এবং কোষাধ্যক্ষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

(ঢাকাটাইমস/১৭মে/এফএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বৈষম্যবিরোধী ও এনসিপির আন্দোলনের মুখে পটিয়া থানার ওসি প্রত্যাহার
বাংলামোটরে এনসিপির জুলাই চিত্র প্রদর্শনীর গাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ
তাড়াশে সম্পত্তি লিখে নিয়ে বাবা-মাকে বাড়িছাড়ার অভিযোগ
সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা