পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে সেজেছে কুয়াকাটা

আব্দুল কাইয়ুম (আরজু), কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
 | প্রকাশিত : ২৩ জুন ২০২২, ২০:৫৯

পদ্মাসেতু উদ্বোধনকে ঘিরে কুয়াকাটা পর্যটন নগরী সজ্জিত করা হয়েছে লাল-নীল আলোয়। পর্যটকদের বরণে নানা আয়োজনে প্রস্তুত রয়েছে স্থানীয় পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে দেশের অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় হয়ে উঠবে দক্ষিণাঞ্চলের এই জনপদ।

আগামী ২৫ জুন দেশের বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা উপকূলবাসীদের মধ্যে ব্যপক উল্লাস বিরাজ করছে। উপকূলের বাসিন্দারা মনে করছেন বর্তমান সরকারের সফলতায় পদ্মা সেতু উদ্বোধন মানে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন।

স্থানীয় বাসিন্দারা আরো জানান, বিশেষ করে পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগমন হবে। রাজধানীর সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার সুযোগ হওয়ায় নানা শিল্প, মিল-কলকারখানা গড়ে উঠবে। এর একটি বিশেষ প্রভাব ফেলবে এই অঞ্চলে যার ফলে কুয়াকাটা পর্যটন নগরী সমুদ্র সৈকত অঞ্চলের আমূল পরিবর্তন ঘটবে অচিরেই। তারা মনে করেন যে, দেশের পর্যটন শিল্পের স্বার্থে এবং পরিবেশের ভারসাম্যতা রক্ষায় উপকূলের অন্যতম আকর্ষণীয় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বেলাভূমি সমুদ্র সৈকত লাগোয়া তীরের অবশিষ্টাংশ বনাঞ্চল রক্ষায় বিশেষ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতি গুরুত্বপূর্ণ।

কুয়াকাটা পৌর এলাকার রাসেল মাহমুদ, নাহিয়ানসহ বেশ কয়েকজন বলেন, সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে আমরা ভবিষ্যৎ স্বপ্ন বুনছি। কুয়াকাটা আলিপুর দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান মৎস্য বন্দর। কলাপাড়ায় দেশের অন্যতম ২টি মেঘা প্রকল্প পায়রা তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও দেশের অন্যতম তৃতীয় পায়রা নদী বন্দর অবস্থিত।

স্থল ও নদী পথে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে দেশে এটি একটি আগামীর অর্থনৈতিক বিশেষ জোন হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।

তাই দক্ষিণ জনপদে এ সকল ব্যবস্থাপনাকে সামনে রেখে আমাদের অর্থনৈতিতে সমৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মসংস্থান উদ্ভাবনের আশার এক নতুন দীপ্ত উদয়ন হবে। সরকার দক্ষিণাঞ্চলের ভাগ্য পরিবর্তনে যেসকল প্রকল্পগুলো হাতে নিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম রেল যোগাযোগ ও সিক্স লেনের মহাসড়ক প্রকল্প যা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক বিশেষ কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে। এটি বর্তমান সরকারের সফলতায় ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের সমাপ্তি হবে।

কুয়াকাটা সৈকতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলেন, পদ্মাসেতু উদ্বোধন পরবর্তী আমাদের সমুদ্র সৈকতে ঋতুর সারা বছর পর্যটকদের সমাগম থাকবেই। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন দুর্যোগ সময়ের যে অর্থনৈতিক অবনতির মধ্যে ছিলাম তা ধীরে ধীরে লোকসান কেটে ওঠা সম্ভব হবে। এবং বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় ভবিষ্যতে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ব্যাপক উন্নয়ন হবে এবং একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে রূপ নিবে। যা ইতোমধ্যেই কুয়াকাটা পৌরসভা ও পর্যটন নগরীকে কেন্দ্র করে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট গাইডের সদস্য মিজান বলেন, আমাদের ভাগ্য বদলে পদ্মাসেতুর আবির্ভাব। কুয়াকাটার পর্যটকদের শতভাগ ভ্রমণের নিশ্চয়তা দানে আমরা কুয়াকাটা ট্যুর গাইডের সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করছি। আশা করছি শিগগিরই আমাদের পর্যটন শিল্পকে ঘিরে উপকূল অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা সচল হবে এবং দেশে উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকবে।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে আগত পর্যটকরা জানান, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের বিনোদনের জন্য পর্যটন নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে উন্নয়নের মহাসড়কে ঢেলে সাজাতে হবে, এবং সার্বিক নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে পারলে পর্যটকদের কুয়াকাটা ভ্রমণের আগ্রহ বাড়বে। তাহলেই পর্যটকদের কাঙ্ক্ষিত আগমন ঘটবে, এতে করে পর্যটন শিল্প প্রসার হবে এবং উপকূলের কর্মহীনদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। পর্যটকরা আরো বলেন, ঢাকা থেকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে কেউ চাইলেই একদিনে ভ্রমণ করে আবার ফিরতে পারবে যেটির একমাত্র সম্ভব হয়েছে পদ্মাসেতু নির্মাণের ফলে।

মাদারীপুর থেকে কুয়াকাটা আগত পর্যটক হাবিবা রহমান মিম বলেন, পদ্মাসেতু চালু হলে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দারা শিক্ষা ও চাকরি খাতে বেশ গুরুত্ব বহন করবে; যেমন শিক্ষার্থীরা পাঠদান শেষে পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিজ বাসায় ফিরতে পারবে এবং চাকরিজীবিদের ক্ষেত্রেও একইভাবে দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রে যোগাযোগ মাধ্যমের একটি সেতুবন্ধ হবে এমন মন্তব্য করেন পরিবহন কাউন্টার ব্যবসায়ীরা।

কুয়াকাটা হোটেল মোটেল কর্তৃপক্ষরা জানান, ইতোমধ্যে পর্যটকদের বরণ করে নিতে প্রতিটি হোটেল-রিসোর্টগুলোতে সাজসজ্জা সম্পন্ন হয়েছে এবং পদ্মাসেতু উদ্বোধন ঘিরে প্রতিটি হোটেলের রুম প্রতি বুকিংয়ের জন্য ৫০% ডিসকাউন্ট করা হয়েছে।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার জানিয়েছেন, কুয়াকাটা অত্যাধুনিক মানের মডেল পৌরসভা গঠনে পদ্মাসেতু চালু হওয়া যেন আমাদের বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে। তিনি ঢাকা টাইমস'কে আরো বলেন কুয়াকাটা পর্যটন নগরী ও একটি পৌরসভার সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করে যাচ্ছি এবং পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণার পরে থেকে অতি প্রয়োজনীয় একটি স্থায়ী বাস টার্মিনালের স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে বালু ভরাট ও ওয়াল বাউন্ডারি উন্নয়ন কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পরে বাড়তি যেসকল যানবাহনের চাপ বাড়বে সেইসব ভোগান্তি এড়াতে নেয়া হয়েছে বিশেষ পদক্ষেপ। পর্যটকদের সাচ্ছন্দ্যময় ভ্রমণ পিপাসা মেটাতে অতি দ্রুত স্থায়ী বাস টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।

দেশের উন্নয়ন অবকাঠামো টিকিয়ে রাখার জন্য গতিশীল উন্নয়নের মহাসড়কে সকল জনগণ কাঁধে কাঁধ রেখে চলতে না পারলে অচলাবস্থার পরিবেশ বিদ্যমান থাকলে দেশ চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাই আসুন সকলে উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আগামীর দেশ গঠনের অগ্রণী ভূমিকা পালন করি।

(ঢাকাটাইমস/২৩জুন/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফরিদপুরে রিকশা চালকদের মাঝে ছাতা-পানি বিতরণ জেলা প্রশাসনের

এক জমি পরিষ্কারের আগুনে পুড়ল আরও ২৫ বিঘার ভুট্টা

জানাজায় গিয়ে আইফোন হারালেন ধর্মমন্ত্রী

উপজেলা নির্বাচন: নোয়াখালীর সুবর্ণচরে প্রতিপক্ষের কর্মীকে পিটিয়ে জখম করলেন চেয়ারম্যান

ইসলামপুরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন আ. লীগের সালাম

মাছের সঙ্গে এ কেমন শত্রুতা

পাথরঘাটায় সাংবাদিকদের নামে সাইবার মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন 

চুয়াডাঙ্গায় ৬ বছরের শিশু ধর্ষণ মামলায় বৃদ্ধ গ্রেপ্তার

তীব্র গরমে ধান কাটতে গিয়ে কৃষকের মৃত্যু

শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে কাঁদলেন র‌্যাব কর্মকর্তা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :