দুই কীর্তিমানের চলে যাওয়ার দিন

দুই বছর আগে এই দিনে দেশের অভিনয় জগতে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। একইদিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মারা গিয়েছিলেন জনপ্রিয় দুজন অভিনেতা। একজন হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানের নিয়মিত শিল্পী ও সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব মহিউদ্দিন বাহার, অন্যজন চলচ্চিত্রের নামকরা খল অভিনেতা ও ডাক বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা সাদেক বাচ্চু।
মহিউদ্দিন বাহার
২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথম মৃত্যুর খবরটা আসে ভোর ৫টায়। সে সময় মারা যান অভিনেতা মহিউদ্দিন বাহার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি হার্ট অ্যাটাক ও কিডনি রোগসহ নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। ১৪ সেপ্টেম্বর ভোরে তিনি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত শাহবাগের বারডেম হাসপাতালে নেওয়া হয়।
বারডেমে নেওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসকরা মহিউদ্দিন বাহারকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর দিনেই আসরের নামাজ বাদে দয়াগঞ্জে জানাজা শেষে অভিনেতাকে সেখানকার একটি কবরস্থানে দাফন করা হবে। এই অভিনেতার পরিবারে স্ত্রী, দুই ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে। পরিবারের সঙ্গে তিনি দয়াগঞ্জে নিজ বাড়িতে থাকতেন।
মহিউদ্দিন বাহার ১৯৪৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর ফেনী সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব। চাকরি থেকে অবসরে যান ২০০৫ সালে। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ‘ইত্যাদি’র নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। অনুষ্ঠানটিতে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় হাস্য রসাত্মক সংলাপ বলার কারণে তিনি সুপরিচিত ছিলেন।
সাদেক বাচ্চু
জনপ্রিয় এই খল অভিনেতা মারা গিয়েছিলেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে তার করোনা টেস্ট করানো হলে ফলাফল পজিটিভ আসে। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর তাকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
ওই হাসপাতালের কোভিড বিভাগের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা ০৫ মিনিটে সাদেক বাচ্চু মারা যান। এই অভিনেতা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। সেই মানুষটিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে তার পরিবার। অভিনেতার সংসারে স্ত্রী শাহনাজ, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
সাদেক বাচ্চুর বড় মেয়ের নাম মেহজাবীন। তিনি গত বছর এইচএসসি পাস করেছেন। ছোট মেয়ে নওশিন গত বছর করেছেন এসএসসি পাস। সবচেয়ে ছোট ছেলে সোয়ালেহিন। সে অস্টম শ্রেণিতে পড়ছে। তাদের কেউই উপার্জনক্ষম নয়। কাজেই পরিবার নিয়ে স্ত্রী শাহনাজ গত দুই বছর ধরে খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সাদেক বাচ্চুর মৃত্যুর পর স্ত্রী শাহনাজ জানিয়েছিলেন, অভিনেতা ডাক বিভাগের চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর কিছু টাকা সঞ্চিত ছিল। ২০১৩ সালে সাদেক বাচ্চুর ব্রেনস্ট্রোক হয়। তাকে ৯ দিন লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ওই সময় ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়। ফলে পেনশনের সব টাকাই শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে অভিনেতার অভিনয়ের টাকাতেই তার সংসার চলছিল।
প্রায় ৫০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মঞ্চ, বেতার, টিভি, সিনেমা- সর্বত্র দাপুটে বিচরণ ছিল সাদেক বাচ্চুর। নব্বই দশকে এহতেশামের ‘চাঁদনী’ ছবিতে অভিনয়ের পর জনপ্রিয়তা পান খলনায়ক হিসেবে। এরপর থেকে কয়েক’শ ছবিতে খল চরিত্রে প্রতাপের সঙ্গে কাজ করেছেন। ২০১৮ সালে ‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
(ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/এএইচ)

মন্তব্য করুন