ব‌রিশা‌লে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে দুজনকে কু‌পি‌য়ে হত্যা, নিখোঁজ ১

বরিশাল ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২৩, ১৬:৫১ | প্রকাশিত : ১১ এপ্রিল ২০২৩, ০০:৪৬

বরিশালের মুলাদী উপজেলার প্রত্যন্ত একটি বাজারে দুজন‌কে কু‌পি‌য়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা। এছাড়া আরও একজন নিখোঁজ রয়েছেন।

সোমবার সন্ধ্যার পর উপজেলার বাটামারা ইউপির চাকলা বাজারে এই ঘটনা ঘটে বলে ওসি তুষার কান্তি মন্ডল জানিয়েছেন।

নিহত হেলাল বেপারী (৪০) উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড পূর্ব তয়কা গ্রামের বাসিন্দা সেলিম বেপারী ছেলে ও আলমগীর কবিরাজ (৫০) মুলাদীর সফিপুর ইউনিয়নের বালিয়াতলী এলাকার জলিল কবিরাজের ছেলে। এ ঘটনয় নিখোঁজ রয়েছেন হেলালের ভাই কামাল বেপারী।

মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন টামারা ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন অশ্রু।

তিনি বলেন, প্রায় শত বছর থেকে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ওই এলাকার হাজী ও আকন গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। হাজী গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আসতে পারেনি। সোমবার সন্ধ্যায় হাজী গ্রুপ এলাকায় আসে। এরপর দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে হেলাল ও আলমগীর নিহত হয়েছে ও কামাল নিখোঁজ রয়েছে।

উভয়কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে জানিয়ে স্থানীয় গ্রাম পুলিশের মহল্লাদার আবু বক্কর খান জানান, নিজ বাড়ির পেছনের একটি বিল থেকে আলমগীর কবিরাজের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত আলমগীর কবিরাজ সফিপুরের কবিরাজ গ্রুপের লোক। আর নিহত হেলাল বেপারী বাটামারার আকন গ্রুপের লোক। সফিপুরের কবিরাজ গ্রুপের সাথে আকন গ্রুপের সখ্য রয়েছে, এরা দুইগ্রুপ মিলে একটি পক্ষ বলা যায়।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মজিবুর রহমান সরদার জানান, আধিপত্য নিয়ে স্থানীয় বাটামারা ও সফিপুরের কবিরাজ, আকন, হাওলাদার ও হাজী গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। তবে এ চারটি গ্রুপ আবার দুটি গ্রুপে বিভক্ত। যার মধ্যে কবিরাজ ও আকন গ্রুপ মিলে একটি পক্ষ আর হাওলাদার ও হাজী গ্রুপ মিলে অপর একটি পক্ষ।

তিনি জানান, দাদন হাওলাদারের ভাই আনিস হাওলাদার কয়েক বছর আগে খুন হন। যে ঘটনায় মামলা দায়েরের পর দীর্ঘ বছর এলাকা ছাড়া ছিলো হেলাল বেপারী ও কামাল বেপারী। ১০-১৫ দিন আগে তারা নিজ এলাকায় আসে। আর সোমবার সকালে দাদন হাওলাদারের পক্ষে কিছু লোক হেলমেট পড়ে ঢাকা থেকে লঞ্চ যোগে গৌরনদীর টরকি হয়ে এলাকায় আসে। শুনেছি এলাকায় আসার আগে পুলিশের সহায়তাও চেয়েছিলো তারা। আর এলাকায় আসার পরেই উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।

তিনি বলেন, ঘটনার সময় বোমা ফাটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। পরে হেলাল বেপারী ও আলমগীর কবিরাজের মরদেহ উদ্ধার করে। আর হেলাল বেপারীর ভাই কামাল বেপারী নিখোঁজ থাকে।

প্রত্যক্ষদর্শী সংরক্ষিত ইউপি সদস্য মাহিমা বেগমের স্বামী আলী হোসেন জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ৭/৮ বছর পূর্বে হাজী গ্রুপ ও আকন গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে হাজী গ্রুপের আনিস নামে একজন নিহত হয়। এরপর থেকে এলাকায় আসতে পারেনি হাজী গ্রুপের ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য আলম বেপারীসহ লোকজন।

আলীর অভিযোগ, আলম বেপারী এলাকায় আসার জন্য প্রশাসনের সাথে গুছ করে। সন্ধ্যায় মুলাদী থানার ওসি তুষার কান্তি মন্ডলসহ পুলিশ বাজারে আসে। এসময় দুইটি ট্রলারে ৩০/৩৫ জন বোমা, টেটা, রামদা, বগি দাসহ ধারালো অস্ত্র নিয়ে বাজারে উঠে আল‌মের নেতৃ‌ত্বে। তারা এসে পুলিশের সামনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো শুরু করে। এসময় আকন গ্রুপের সদস্য হেলালকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। কামাল নিখোঁজ রয়েছে।

আলী আরো অভিযোগ করেন, তার বাড়ির সামনেও ১০/১৫টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এসময় তার স্ত্রী সংরক্ষিত ইউপি সদস্য মাহিমা বেগম প্রতিবাদ করলে তাকেও মারধর করা হয়।

মুলাদী থানার ওসি তুষার কান্তি মন্ডল বলেন, মাদারীপুরের কালকিনি সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেপ্তারী পরোয়ানার এক আসামি গ্রেপ্তার করতে যান। এ সময় এক গ্রুপ এসে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। নিহত‌দের মৃত‌দেহ ময়নাতদ‌ন্তের জন্য ব‌রিশা‌লে আনা হ‌বে। বরিশালের পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, মুলাদী উপজেলার বাটামারা ও সফিপুর ইউনিয়নে দুটি গ্রুপের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ধারাবাহিকতায় একটি গ্রুপ বাহিরে থাকলেও রোজায় এলাকায় অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে রাতের বেলা হেলাল নামে একজনের এবং ভোররাতে আরও একজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। এ দুইজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি কয়েকজন আহতও হয়েছে।

পুলিশকে পরিস্থিতি শান্ত করতে ফাঁকাগুলি ছুড়তে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য রয়েছে, আর এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হবে।

সার্বিক দিক বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ওই এলাকায় আমাদের পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে, আর ঘটনা শোনার পর ওসি নিজেও সেখানে যায়। তবে পুলিশের কারও পক্ষ হয়ে কাজ করার সুযোগ নেই। তবে বাস্তবতা কি সেটি খতিয়ে দেখা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১১এপ্রিল/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :