ভেষজ ত্রিফলার জাদুকরী গুণে মিটবে রোগ-ব্যাধি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৪ মে ২০২৩, ১০:০৯ | প্রকাশিত : ০৪ মে ২০২৩, ১০:০৬

প্রাচীন যুগ থেকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাশাস্ত্রে প্রচুর ভেষজ ফল-ফুল, গাছগাছড়া ব্যবহার হয়ে আসছে ভেষজগুণ ও স্বাস্থ্যবর্ধক বৈশিষ্ট্যের জন্য। এখনো ভারতীয় উপমহাদেশ, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনেক মানুষ ভেষজ চিকিৎসায় আস্থা রাখেন। প্রায় পাঁচ হাজার বছর ধরে জনপ্রিয় এবং বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে সমাদৃত এই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের অন্যতম আবিষ্কার ত্রিফলা। ত্রিফলা আসলে একটি সংস্কৃত শব্দ। আমলকি, হরিতকি, বহেরা, এই তিনটি ফল বহু দিন ধরেই প্রচলিত ‘ত্রিফলা’ নামে। শারীরিক বহু সমস্যাতে ত্রিফলার ব্যবহার সুবিদিত। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে রোগ-ব্যাধিকে ঠেকিয়ে রাখতে ত্রিফলার জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু সত্যিই কি ত্রিফলা সুস্বাস্থ্যের দাওয়াই? কী বলছে হালের চিকিৎসাবিজ্ঞান?

প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস ত্রিফলার পানিতে জব্দ হবে ডায়াবেটিস! আর কী কী গুণ রয়েছে এই মিশ্রণের

আমলকি, হরিতকি এবং বহেরা— এই তিন ফল শুকিয়ে তাদের চূর্ণ একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরি হয় ত্রিফলার মিশ্রণ। এই মিশ্রণ আদতে সুস্বাস্থ্যের দাওয়াই। আগে জেনে নেওয়া ভাল এই তিন ফল পৃথকভাবে আমাদের শরীরের পক্ষে আদৌ কতটা উপকারী।

আমলকি

ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর এই ফল পেটের সমস্যা দূর করে। শরীরে জমে থাকা টক্সিন পদার্থ বার করে দিতেও আমলকি বেশ উপকারী। তা ছাড়া রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতেও আমলকির জবাব নেই।

হরিতকি

এতেও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে এর ব্যহবার করা যেতেই পারে।

বহেরা

এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি পেশির জোর বাড়তে আর হাড় মজবুত করতেও বহেরা বেশ উপকারী।

বিভিন্ন গবেষণায় ত্রিফলার একাধিক গুণাগুণ উঠে এসেছে। কী কী গুণ রয়েছে ত্রিফলার?

মেদ ঝরিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এই মিশ্রণ। বিপাক হার বাড়াতে এই মিশ্রণ দারুণ কাজ করে। বিভিন্ন ক্লিনিকাল গবেষণায় দেখা গেছে যে ত্রিফলা সেবন ওজন কমাতে সহায়তা করে। নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে যাদের ত্রিফলা দেওয়া হয়, দেখা যায় যে তাদের মধ্যে ওজন কমার পরিমাণ বেশি এবং তাদের কোমর এবং নিতম্বের পরিধিও হ্রাস পেয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।

যাঁদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তাঁরাও ত্রিফলা খেলে উপকার পেতে পারেন।

ত্বকের নানা সমস্যার দাওয়াই হতে পারে ত্রিফলা। নিয়মিত এই মিশ্রণটি খেলে ব্রণ, ফুসকুড়ির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পাশাপাশি ত্বকের জেল্লা ধরে রাখতেও সাহায্য করে এটি।

ত্রিফলা শরীরকে ডিটক্সিফাই করে। ত্রিফলার জল খেলে শরীরে এনার্জি বাড়ে।

চোখের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ত্রিফলা অত্যন্ত সাহায্য করে। চোখের ছানি ও গ্লকোমা নিয়ন্ত্রণে ত্রিফলা আয়ুর্বেদিক মিশ্রণ তৈরিতে কাজে লাগে। ক্লিনিকাল গবেষণা প্রমাণ করে ছানিবিরোধী ও দৃষ্টিশক্তির উন্নতিসাধনে এই ভেষজের উপকারিতা।

দাঁতের সু-স্বাস্থ্য বজায় থাকে ত্রিফলার প্রভাবে। দাঁতের হলদে ছোপ দূর করা থেকে, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করা, মুখের দুর্গন্ধ দূর করা, দাঁত এবং মাড়ী শক্ত করতে দারুণ ভাবে কাজ দেয় ত্রিফলা।

ত্রিফলা চুলের সুরক্ষাকারী গুণাবলীর জন্য পরিচিত ও সাধারণত অকালে চুল পাকা রোধ করতে সাহায্য করে। চুল পড়ার সমসস্যা কমায় এবং পরিমিত ব্যবহারে খুলিতে আকাঙ্ক্ষিত পুষ্টি প্রদান করে।

ত্রিফলা বিভিন্ন চিকিৎসায় সংক্রমণ আটকানোর প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং এই ব্যবহার গবেষণায় স্বীকৃত। শুধু তাই নয়, এসচেচিয়া কোলি, সালমেনেলা টাইফি, সুডোমোনাস এরেগিনোসা, স্টাফাইলোকোকাস অরেয়াস, ভিব্রিও কোলেরির বিরুদ্ধেও এর কার্যকারিতা প্রমাণিত।

ক্যানসারের মতো মারণরোগ ঠেকিয়ে রাখতেও সাহায্য করে ত্রিফলা। ভিটামিন-সি তে সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে ত্রিফলাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খাওয়ার হিসেবে নিশ্চিতভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই কারণে এটি আমাদের শরীরকে ফ্রি র‌্যাডিকালের প্রভাব থেকে রক্ষা করে। ত্রিফলার ক্যানসাররোধী কার্যকারিতার বিষয়ে জানতে অসংখ্য গবেষণা করা হয়েছে এবং এই সকল গবেষণাই দাবি করে যে ত্রিফলা সম্ভাবনাসূচক একটি ক্যানসার রোধী ওষুধ। ভারতে হওয়া একটি সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে আমরা জানতে পারি ত্রিফলার একটি অত্যন্ত শক্তিশালী বিস্তারবিরোধী (বেড়ে যাওয়া আটকায়) ও অ্যাপোপটোটিক (ক্যানসার কোষগুলিকে মেরে ফেলে) বিশেষত্ব রয়েছে।

ইনসুলিন হরমোনের ওপর ক্রিয়ার ফলে ত্রিফলা যে ডায়াবেটিসবিরোধী তা আজ প্রমাণিত সত্য। এটি রক্তস্রোতে গ্লুকোজ জমা হওয়া বা বিমুক্ত হওয়া নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ডায়াবেটিসের সমস্যায় যারা কষ্ট পাচ্ছেন তারাও নিয়মিত ত্রিফলা খেতে পারেন। ত্রিফলা অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়াতে সাহায্য করে।

ত্রিফলাতে আছে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী হাইপোগ্লাইসেমিক (শর্করাভাব কমায়) । গবেষণায় পাওয়া গেছে ত্রিফলা বাণিজ্যিকভাবে সহজলভ্য ডায়াবেটিসবিরোধী ওষুধগুলির মতই ইনসুলিন থেকে দুটি প্রধান এনজাইমের, যেমন আলফা-অ্যামিলেস এবং আলফা-গ্লুকোসিডেসের ক্ষরণ আটকায়।এই এনজাইমগুলি চিনি থেকে উৎপন্ন হওয়া বৃহত্তর যৌগগুলিকে ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত করে। এই এনজাইমগুলির ক্ষরণ থামলে গ্লুকোজ তৈরি হওয়া থামে, ফলত পরবর্তী ক্ষেত্রে তা রক্তে মেশা বন্ধ হয়। এইভাবে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

কিডনির স্বাভাবিক কাজকর্ম ঠিক রাখতে সাহায্য করে ত্রিফলা। এই ভেষজ কিডনির পাশাপাশি লিভারের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। শুধু তাই নয়, এই দুটি অঙ্গে জমে থাকা টক্সিন বা ক্ষতিকর পদার্থও সহজে দূর করে ত্রিফলা।

যেভাবে খাবেন ত্রিফলা

বেশ কিছু নামী সংস্থার ত্রিফলা বড়ি পাওয়া যায়। সেই ট্যাবলেট খেতে পারেন। এ ছাড়াও ত্রিফলা চূর্ণ পাওয়া যায়। এক চামচ ত্রিফলার গুঁড়া এক কাপ পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে খালি পেটে সেই পানি খেতে হবে। সঙ্গে ১ চামচ মধু মিশিয়েও খেতে পারেন।

(ঢাকাটাইমস/৪ মে/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :