টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ে চলত ‘ছালেহ বাহিনী’র কর্মকাণ্ড, অভিযানের সময় গা ঢাকা দিত মিয়ানমারে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০৬ মে ২০২৩, ১৬:৪৬

কক্সবাজারের টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ে অবস্থান করে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে রোহিঙ্গা হাফিজুর রহমান ওরফে ছালেহ। নিজের নামে ‘ছালেহ বাহিনী’ তৈরি করে দুর্গম পাহাড়ে বসে এসব অপহরণের নেতৃত্ব দিতেন সালেহ। প্রশাসনের তৎপরতা শুরু হলে তারা নিজেদের বাঁচাতে গা ঢাকা দিতে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে চলে যেতো। এসব তথ্য জানিয়েছে র‍্যাব।

শুক্রবার রাতে টেকনাফের বাহারছড়া পাহাড় থেকে হাফিজুর রহমান ওরফে সালেহ উদ্দিন ও তার অন্যতম সহযোগী সোহেল ডাকাতসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

আটক ব্যক্তিরা হলো- ছালেহ বাহিনীর প্রধান হাফিজুর রহমান ওরফে ছালেহ ডাকাত ওরফে ছলে, নুরুল আলম নূরু, আক্তার কামাল সোহেল, নুরুল আলম লালু, হারুনুর রশিদ, এরিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি।

এসময় একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচটি গুলি, দেশীয় তৈরি তিনটি একনলা বড় বন্দুক, দুইটি একনলা মাঝারি বন্দুক, ছয়টি একনলা ছোট বন্দুকসহ মোট ১১টি দেশীয় তৈরি বন্দুক, ১৭টি তাজা কার্তুজ, চারটি খালি কার্তুজ, দুইটি ছুরি ও ছয়টি দেশীয় তৈরি দা উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ে অবস্থান করে হাফিজুর রহমান ওরফে ছালেহ ডাকাতের সরাসরি নেতৃত্বে এই চক্রটি অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, মাদক ব্যবসাসহ অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তার এই সন্ত্রাসী দলে সদস্য সংখ্যা রয়েছে ১২/১৫ জন।

ছালেহের নেতৃত্বে এই সন্ত্রাসী দলটি টেকনাফের শালবাগান পাহাড়, জুম্মা পাড়া ও নেচারি পার্ক এলাকা, বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালী পাড়া পাহাড়, বড় ডেইল পাহাড়, কচ্ছপিয়া পাহাড় জাহাজপুরা পাহাড়, হলবনিয়া পাহাড়, শিলখালী, হ্নীলার জাদিমোরা, মোচনী পাহাড় এলাকায় অবস্থান করে অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করত। তারা কখনও অটোরিক্সার চালক এবং কখনও সিএনজি চালক হিসেবে ছদ্মবেশ ধারণ করে বিভিন্ন কৌশলে কক্সবাজারের হ্নীলা, হোয়াইক্যং, উনচিপ্রাং, শামলাপুর, জাদিমোড়া ও টেকনাফের বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের টার্গেট করে অপহরণপূর্বক মুক্তিপণ আদায় ও ডাকাতি করত।

এ পর্যন্ত তারা চালকের ছদ্মবেশে অর্ধশতাধিক লোকজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে। প্রশাসনের তৎপরতা ও অভিযান পরিচালনা করলে তারা নিজেদের বাঁচাতে গা ঢাকা দিতে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে চলে যেতো।

মঈন বলেন, সম্প্রতি সময়ে টেকনাফ অপহরণের প্রবণতা বেড়েছে। এটি গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পারলে আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করি। আমাদের কাছে খবর আসে ছালেহ বাহিনী অপহরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা গৃহহীন পাহাড়ে অভিযান পরিচলনা করি। এসময় ছালেহ বাহিনীর প্রধানসহ ৬ জনকে আটক করতে সক্ষম হই। আটককৃতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

অর্ধশাতিক অপহরণে ছালেহ:

র‍্যাব জানায়, কক্সবাজারের প্রায় অর্ধশতাধিক অপহরণের সঙ্গে জড়িত এই ছালেহ বাহিনী। বিভিন্ন অপকর্মের পর তারা আত্মগোপনে চলে যেত।

গত ১৮ ডিসেম্বর টেকনাফের বাহারছড়া এলাকার ১০ জন কৃষক, ২ জানুয়ারি রোহিঙ্গা শরনার্থী রেজুয়ানা, ২৬ মার্চ ন্যাচারাল পার্কের দর্শনার্থী হ্নীলার দদমিয়ার বাসিন্দা কবির আহাম্মদের ছেলে রিদুয়ান সবুজ ও একই এলাকার বাসিন্দা মাওলানা আবুল কালামের ছেলে নুরুল মোস্তফা, ১৫ এপ্রিল ফুলের ডেইল এলাকা থেকে বাবুল মেম্বারের ছেলে ফয়সাল, ৩০ এপ্রিল রোহিঙ্গা হামিদুল্লাহ এবং ৩ মে রোহিঙ্গা আবুল কালামসহ অনেক ব্যক্তিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ে জড়িত বলে স্বীকার করেছে। এর বাইরেও অর্ধ-শতাধিক অপহরণে এ গ্রুপ জড়িত।

ছালেহ যেভাবে বাংলাদেশে আসে:

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ছালেহ ২০১২ সালে অবৈধ পথে বাংলাদেশে আসেন। ২০১৩ সালে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যান এবং তখন থেকেই তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে আবারও অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে উখিয়া ও কক্সবাজারে অবস্থান করে। ছালেহ উদ্দিনের অন্যতম সহযোগী আক্তার কামাল সোহেল। তিনি অপহরণের পরিকল্পনা এবং অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ছালেহের নির্দেশনায় বিভিন্ন কার্যক্রমের সমন্বয় করতেন বলে জানান আল মঈন।

অপহরণ, ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে তার বিরুদ্ধে উখিয়াসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় দশটির বেশি মামলা রয়েছে। নুরুল আলম নুরুর বিরুদ্ধে উখিয়াসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন থানায় খুন, অস্ত্র, মাদকসহ ছয়টির বেশি মামলা রয়েছে। অন্যদের বিরুদ্ধেও এমন সংখ্যায় মামলা রয়েছে বলে জানায় র‍্যাব।

(ঢাকাটাইমস/০৬মে/এসএস/এমআই/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

কোরবানির ঈদ সামনে, মশলার বাজারে উত্তাপ

প্রতিমন্ত্রীর শ্যালকের অপহরণকাণ্ড: ১৬ দিনেও গ্রেপ্তার হননি আলোচিত লুৎফুল হাবীব

মে দিবস বোঝে না শ্রমিকরা, জানে ‘একদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হবে’

গামছা বিক্রেতা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, মনে আছে সেই গোল্ডেন মনিরকে?

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন: চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের

গাছ কাটার অপরাধে মামলা নেই 

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :