অতিরিক্ত গরমে শরীর সুস্থ রাখার উপায়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ৩১ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৩৪
অ- অ+

তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অস্বস্তি। ঘাম, গরম, রোদ্দুর আর শরীর জ্বালা-পোড়া এখন নিত্যসঙ্গী। সেই সঙ্গে রয়েছে ডিহাইড্রেশন, ক্লান্তি, মাথা ঘোরার মত সমস্যা। এছাড়াও যে কোনও রকম ত্বকের সমস্যা বাড়ে গরমে। ঘামাচি, অ্যালার্জি বা হঠাৎ করে কোথাও লাল হয়ে যওয়া এই সব সমস্যা তো থাকেই। সেই সঙ্গে এই সময় বিভিন্ন পোকা-মাকড়ের উপদ্রব হয়। আর সেখান থেকেও কিন্তু সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এছাড়াও গরমে যেমন হিট স্ট্রোকের সমস্যা বাড়ে তেমনই সর্দি-গর্মি, জ্বর, ফুড পয়জন, পেটের সমস্যা, ডায়ারিয়া এসবও কিন্তু অনেক বেশি হয়। অল্পেই শরীরে ক্লান্তি আসে। রোদের মধ্যে কিছুক্ষণ থাকলেই মাথা ব্যথার মত সমস্যাও কিন্তু পিছন ছাড়ে না। আর তাই গরমে সুস্থ থাকতে কিছু নিয়ম মেনে চলতেই হবে। এতে শারীরিক ঝক্কি অনেকটাই এড়িয়ে যেতে পারবেন।

গরমের সময় শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ঘাম হয়ে বের হয়। এতে শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে শরীরে অস্বস্তি, ক্লান্তির মত একাধিক উপসর্গ দেখা দেয়। তাই শরীর হাইড্রেটেড রাখতে আপনাকে খেতে হবে পানি ও পানিযুক্ত খাবার।

বেশি ঘাম হলে অনেকেই বেশি করে পানি পান করেন। কিন্তু শুধু পানি পান নয়, লবণ, চিনি ও পাতিলেবু মিশিয়ে শরবত করে পানি পান করুন। কারণ, ঘামের সঙ্গে কিছু দূষিত পদার্থ ও তার সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণে সোডিয়াম ও যৎসামান্য পটাশিয়াম ও বাইকার্বোনেট শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। সোডিয়াম বাইকার্বোনেট ইত্যাদির তারতম্যের জন্য শরীর অত্যন্ত দুর্বল ও অস্থির লাগে। এসব প্রতিরোধ করতে যথাযথ ডায়েটের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। ঘাম হলে পানির তেষ্টা পায়, তাই বেশির ভাগ মানুষই প্রচুর পরিমাণে পানি খান। কিন্তু চিকিৎসকরা বলেন বেশি করে শরবত খেতে।

গরমে দইয়ের ঘোল ও ডাবের পানি পান করতে পারেন। প্রথমত ঘোল ভালো লাগে, দ্বিতীয়ত দইয়ে থাকা র‌্যাকটিক এসিড চটজলদি হজম করাতে সাহায্য করে। ডাবে থাকা পটাশিয়ামও শরীর তরতাজা রাখতে পারে।

পূর্ণবয়স্ক একজন নারীর দিনে অন্তত ২.৫-৩ লিটার, পূর্ণবয়স্ক একজন পুরুষের ৩-৩.৫ লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। তবে কিডনি রোগীদের অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করেই পানির পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।

গরমে লেবু বা ফলের শরবত খাওয়া খুবই উপকারী। ডাবের পানিও খুব দারুণ কার্যকর। এসব পানীয় খুব সহজেই শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করবে। ডাবের পানি ও ফলের শরবত খেলে পানির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় খনিজ লবণের চাহিদাও পূরণ হবে।

কাঁচা পেঁপে, পটল, ধুন্দল, শসা, চিভিঙ্গা, গাজর, লাউ, পেঁপে, পালংশাক, টমেটো, শসায় পানির পরিমাণ বেশি থাকে। পানিশূন্যতা দূর করতে এই খাবারগুলো অবশ্যই খাবার তালিকায় রাখার চেষ্টা করুন।

আখের রস শরীরকে ঠান্ডা রাখতে খুবই কার্যকরী। আখের রসের সঙ্গে বিট লবণ, পুদিনাপাতা এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেলে এর স্বাদও বাড়ে, পুষ্টিগুণও বাড়ে।

বেলের শরবত পাকস্থলী ঠান্ডা রাখতে খুব কার্যকর। বেলে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন, প্রোটিন, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১ এবং বি২, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও ফাইবার।

ডাবের পানি খুবই উপকারী। এতে আছে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সালফার, ক্লোরিন ও ফসফরাস।

প্রচন্ড রোদে গরমে ঘুরে আসার পর অতিরিক্ত ফ্রিজের ঠান্ডা পানি অথবা খাবার খাওয়া উচিত নয়। এতে আরাম হলেও শরীরের তাপমাত্রা তারতম্যের জন্য ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে।

শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখতে এবং সতেজ অনুভূতির জন্য পুদিনার শরবত অতুলনীয়।

নোনতা স্বাদযুক্ত এই পানীয় হজমে সাহায্য করে।তবে ডায়াবেটিস রোগীরা শরবতে আলাদা করে চিনি বা মধু অ্যাড করবেন না।

অনেক কার্বনেটেড বেভারেজ আমরা গরমের সময় প্রচুর খেয়ে থাকি,যা ঠিক না। এই পানীয়গুলো শরীরকে সাময়িক চাঙা করলেও এর কোনো পুষ্টিগুণ নেই, বরং শরীরকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করে। ঝাল, বাইরের খোলা শরবত, বাইরের খাবার, ভাজাপোড়া এ সময় যতটা পারেন এড়িয়ে চলুন। পাতলা ঝোল ঝোল খাবার খাওয়া এ সময় সবচেয়ে ভালো।

গরমে ফল বেশি করে খেলে পানির তেষ্টা অনেকটাই কমে। তার সঙ্গে ফলে থাকা ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর তরতাজা রাখতে সাহায্য করে। জামরুল, তরমুজ, লিচু, শসা, পাকা পেঁপে, পাকা আম যথেষ্ট পরিমাণে খাবেন। পাকা আমের ভিটামিন ‘এ’ ভবিষ্যতের জন্য শরীরে স্টোর করা যায়।

গরমের সময়ে বেশি তেলমসলা দেয়া মাটন, চিকেন, মাছ না খেয়ে মুরগির স্টু, মাছের পাতলা ঝোল- এই ধরনের খাবার খেলে ভালো হয়। তবে প্রত্যেকের খাবারের রুচি ও সহ্য ক্ষমতা আলাদা আলাদা হওয়ায় গাইডলাইন অনুযায়ী শরীর বুঝে খাওয়াই বাঞ্ছনীয়।

গরমে চোখের নানা অ্যালার্জি হয়। আর তাই রোদে বেরোলে চোখে সানগ্লাস রাখুন। বাইরে থেকে ফিরে পরিষ্কার জলে চোখ ধুয়ে ফেলুন।

ফ্রেশ খাবার খান। বাড়ির বাইরে অন্য কোথাও না খাওয়াই ভাল। এতে হজমের সমস্যা হয়, পেটের নানা সমস্যা আসে। টমেটো, শসা, লাউ, উচ্ছে, ঢেঁড়শ, কুমড়ো, ঝিঙে এই সব সবজি বেশি করে খান। তরমুজ, সবেদা, লেবু এসব খেতেও ভুলবেন না যেন। সেই সঙ্গে টকদই, ডালের জল এসবও কিন্তু বেশি করে খেতে হবে।

গরমে বেশি করে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান। এই সময় অ্যানিমিয়ার সমস্যা বাড়তে থাকে। তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে ডায়েটে রাখুন। তাতেই শরীর থাকবে সুস্থ। তীব্র গরমেও থাকবেন চাঙ্গা, মেজাজ থাকবে ফুরফুরে।

জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার গরমে বেশি পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদরা। চকোলেট, মাংস, পালং শাক ও কুমড়ার বীজে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে। যা শরীর চাঙ্গা রাখে।

সুতির আরামদায়ক পোশাক পরুন। যাতে শরীরে ঘাম না বেশি বসতে পারে। সেই সঙ্গে ভারী, সিন্থেটিক কোনও কিছু এড়িয়ে চলুন।

প্রতিদিন সকালে হালকা ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম দেহ ও মনের উৎকর্ষতা সাধন করে। দেহ ও মনকে সতেজ রাখে, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে, হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

(ঢাকাটাইমস/৩১ আগস্ট/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ডেমরায় সাড়ে ৪৬ কেজি গাঁজা ও নগদ অর্থসহ নারী মাদক কারবারি গ্রেপ্তার
ভাটারা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো মেজর সাদিকুলের স্ত্রীকে, চাওয়া হবে রিমান্ড
নারায়ণগঞ্জে অসুস্থ লঞ্চ যাত্রীকে জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদান কোস্ট গার্ডের
আশুলিয়ায় ৬ লাশ পোড়ানোর ঘটনায় অভিযোগ গঠনের শুনানি আজ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা