হাতের নাগালেই পেট্রল বোমা

হাসান মেহেদী, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ১৯:৪২ | প্রকাশিত : ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৮

বিএনপির অবরোধের মধ্য দিয়ে ফের রাজধানীতে ব্যবহৃত হচ্ছে পেট্রল বোমা। গত কয়েক দিনে বেশকিছু গণপরিবহনে পেট্রল বোমার মাধ্যমে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ফাঁকা জায়গাকে টার্গেট করে এসব বোমারুরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে। পাশাপাশি এসব অপরাধী খুব সহজেই প্রকাশ্যে পেট্রল বোমার সরঞ্জামাদি পাচ্ছে হাতের নাগালেই। ঢাকা টাইমসের অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

রবিরার দুপুরে কেরানীগঞ্জ থানার কোন্ডা ইউনিয়ন এলাকায় দেখা যায়, ভ্যানে করে একটি বোতলভর্তি পেট্রল নিয়ে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি। বোতলে করে কেন পেট্রল নিচ্ছেন জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি ঢাকা টাইমসকে জানান, তার এক বড় ভাই বোতলে করে পেট্রল নিতে বলেছেন। তাই তিনি দোকান থেকে পেট্রল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

পুরো কেরানীগঞ্জ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কদমতলি, জনি টাওয়ার, কোন্ডা ইউনিয়ন ও জিনজিরা এলাকায় প্রকাশ্যেই খাবার পানির খালি বোতলভর্তি পেট্রল ও অকটেন বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে। যেকোনো মানুষই সেখান থেকে পেট্রল অকটেন কিনতে পারছেন। দোকানগুলোতে ড্রাম ও বোতলভর্তি কয়েকশ লিটার পেট্রল ও অকটেন মজুদ রয়েছে।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহাবুদ্দিন কবির ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকায় বা পয়েন্টে খোলা বাজারে পেট্রল অকটেন বিক্রি হচ্ছে সত্যি। তবে এ বিষয়ে মোবাইল কোর্ট ব্যবস্থা নিতে পারবে। আমরা জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি, তারা যদি মনে করেন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন, তাহলে আমরা তাদের সহায়তা করব।’

শাহাবুদ্দিন কবির জানান, শনিবার রাতে পেট্রল বোমাসহ লিটন (৩০) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে তিনটি পেট্রল বোমা ও বোমা তৈরির জন্য মজুদ রাখা দুই লিটার পেট্রল উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার লিটন কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের কাউটাইল এলাকার চান মিয়ার ছেলে।

বিস্ফোরক দ্রব্য আইন-১৯০৮ অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া খোলাবাজারে গ্যাস, অকটেন ও তেল বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকলেও সরকারি এসব নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই রাজধানীতে প্রকাশেই বিক্রি হচ্ছে পেট্রল ও অকটেন জাতীয় দাহ্য পদার্থ। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বিস্ফোরক পরিদপ্তরের অনুমোদন ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র ছাড়াই খোলা বাজারে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাজারজাত হচ্ছে অকটেন ও পেট্রল। এতে করে খুব সহজেই যে কেউই খোলা বাজার থেকে পেট্রল ও অকটেন নিয়ে নাশকতার কাজে ব্যবহার বাড়ছে।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার ধোলাইপাড়ে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রকাশ্যে পেট্রল অকটেন বিক্রি হচ্ছে চোরাই মনিরের দোকান থেকে। সরেজমিনে সেখানে গিয়ে প্রমাণ পেয়েছে ঢাকা টাইমস। রবিবার দুপুর ২টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ড্রাম থেকে পেট্রল অকটেন খাবার পানির বোতলে ভর্তি করে বিক্রি করা হচ্ছে। সেখানে চাহিদা মতই প্রকাশ্যে সবার কাছেই বিক্রি হচ্ছে পেট্রল অকটেন। মনিরের পেট্রল অকটেনের দোকানের পেছনে একটি গোডাউনে প্রতিদিনই মজুদ থাকে কয়েকশ লিটার পেট্রল অকটেন। এছাড়াও রাজধানীর বনশ্রী, মেরাদীয়া এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় এমন খোলা বাজারে পেট্রল অকটেন বিক্রেতা রয়েছে শতাধিক।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) কে এন রায় নিয়তি ঢাকা টাইমসকে জানান, খোলা বাজারে পেট্রল অকটেন বিক্রেতাদের বিষয়ে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। যারা নাশকতার সঙ্গে জড়িত, তাদের সবাইকেই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, হাতের নাগালেই পেট্রল অকটেন বিক্রি করায় নাশকতাকারীরা অহরহ এই পেট্রল অকটেন পেয়ে থাকে এবং এতে খুব সহজেই অপরাধীরা নাশকতার কাজে সেগুলো ব্যবহার করতে পারে।

বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক সুলতানা ইয়াসমীন ঢাকা টাইমসকে জানান, খোলা বাজারে পেট্রল অকটেন বিক্রির কোনো নিয়ম নেই। যারা এই কাজ করছেন তারা অন্যায় করছেন। যারা খোলা বাজারের এসব ব্যবসায়ীর পেট্রল অকটেন সরবরাহ করে থাকেন তারাও অপরাধী।

নিয়ম অনুযায়ী অকটেন, পেট্রলের মতো দাহ্য পদার্থ শুধু বিক্রি বা মজুদ করতে পারবে অনুমোদনপ্রাপ্ত ডিলাররা এবং বৈধ পেট্রল পাম্পগুলো। সে ক্ষেত্রে শুধুর একটি সাধারণ ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই কোনো প্রকার বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই কেরাণীগঞ্জ ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠেছে পেট্রল অকটেনের অবৈধ ব্যবসা।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপা ও মেইন.) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে জানান, কেউ যদি দাহ্য পদার্থ মজুদ করেন তাহলে ফায়ার লাইসেন্স নিতে হবে এবং ফায়ার সার্ভিসের কিছু শর্ত মানতে হবে। যদি ফায়ার সার্ভিসের আইন না মেনে দাহ্য পদার্থ কেউ মজুদ করেন, তাহলে সেটি অবশ্যই অন্যায় হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন জিয়া রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের পুরো সমাজই অনিয়মে ভরা। যখনই কোনো ঘটনা ঘটে তখনই সেই ঘটনার সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে টনক নড়ে। তবে পরিশেষে ফলাফল শূন্য দেখা যায়।’

তিনি বলেন, ‘দেশের প্রতি সেক্টরেই হ য ব র ল। সবার মাঝে সমন্বয়হীনতা রয়েছে, পাশাপাশি তদারকির ঘটতি থাকায় অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। সমাজ ব্যবস্থাকে ঠিক করতে হলে সরকারসহ সমাজে বসবাসকারী সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ সমন্বিতভাবে এসব অপরাধ বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

(ঢাকাটাইমস/০৬নভেম্বর/এইচএম/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

কোরবানির ঈদ সামনে, মশলার বাজারে উত্তাপ

প্রতিমন্ত্রীর শ্যালকের অপহরণকাণ্ড: ১৬ দিনেও গ্রেপ্তার হননি আলোচিত লুৎফুল হাবীব

মে দিবস বোঝে না শ্রমিকরা, জানে ‘একদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হবে’

গামছা বিক্রেতা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, মনে আছে সেই গোল্ডেন মনিরকে?

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন: চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের

গাছ কাটার অপরাধে মামলা নেই 

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :