আসন ছাড়ের ক্ষেত্রে জাপার জনসম্পৃক্ত এমপিদের প্রাধান্য দেবে আ.লীগ

জাহিদ বিপ্লব, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৭

আসন সমঝোতা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টি একাধিক বৈঠক করলেও এখনো কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি। বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করছে দল দুটি।

জাতীয় পার্টি এরআগে তিনটি জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমাঝোতা করে নির্বাচন করলেও এবার নির্বাচনকে অর্থবহ করতে জাতীয় পার্টির কর্মীবান্ধব নেতাদের প্রাধান্য দিতে চান ক্ষমতাসীনরা। বিশেষ করে জাতীয় পার্টির যেসকল এমপি এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেছেন, সংগঠন করেছেন এবং নিজস্ব জনবল দিয়ে কেন্দ্র কমিটি করার সক্ষমতা রয়েছে তাদেরকে আবারও সংসদে আনার বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এদিকে, দুটি দলের বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে কোনো কিছুই পরিষ্কার করছে না উভয়পক্ষ। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় পার্টির বৈঠক নিয়ে অফিসিয়ালি দুই পক্ষ অস্বীকার করলেও দল দুটির একাধিক শীর্ষনেতা বৈঠকের বিষয় নিশ্চিত করেছেন। বুধবার গুলশানে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার বাসায় আবারও বৈঠকে মিলিত হয় দল দুটির শীর্ষ নেতারা। যদিও আসন সমঝোতার কথা উভয় পক্ষই গণমাধ্যমে অস্বীকার করে আসছেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাসিম ঢাকা টাইমসকে বলেন, জাতীয় পার্টির নির্বাচনকে অর্থবহ গ্রহণযোগ্য করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সামনে আরও হবে। তারা নিজেরাও ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়। জনগণ নির্ধারণ করবে কে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে।

জাপার গ্রহণযোগ্য নেতাদের প্রাধান্য দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি জাতীয় পার্টির বিষয়ে বলতে পারবো না, তবে ১৪ দলের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় গ্রহণযোগ্য নেতাদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ জাপা সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় সরকার। সেক্ষেত্রে নিজ এলাকায় ভালো অবস্থা সম্পন্ন নেতাদের প্রার্থী করার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এমন পরিস্থিতিতে এবার মনোনয়ন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন জাপার অধিকাংশ এমপি।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ঢাকা টাইমসকে বলেন, সরকার ও আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কিছু বলার সুযোগ নেই। তারা আর আমরা আলাদা। যে যার মতো করে নির্বাচন করবে। জাতীয় পার্টি যাদের মনোনয়ন দিয়েছে তাদের মধ্যে একশ প্রার্থী ভালো করবে। বাকিগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এমপিদের এলাকামুখী না হওয়া প্রসঙ্গে জাপা মহাসচিব বলেন, যারা এমপি হয়েও নিয়মিত এলাকায় যাননি, সংগঠন করেননি, এবার তারা নির্বাচনি মাঠে গেলে বুঝতে পারবে। জন সম্পৃক্ততা না থাকলে এর খেসারত তো দিতেই হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাপার ২২ জন এমপির মধ্যে ৯জন নিয়মিত এলাকায় সময় দিয়েছেন। গড়ে তুলেছেন নিজস্ব কর্মীবাহিনী। সংগঠনকে নিজ এলাকায় করেছেন শক্তিশালী।

এরমধ্যে ঢাকা- আসনের সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা তার নিজ নির্বাচনি এলাকায় তৈরি করেছেন শক্ত ভিত। ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছেন কেন্দ্র কমিটিই। নারায়ণগঞ্জ- আসনে লিয়াকত হোসেন খোকা এলাকায় ব্যাপক কাজ করেছেন। ১৭৬ জন ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছে জাতীয় পার্টি থেকে। প্রায় দেড় ওয়ার্ডে করেছেন দলীয় কার্যালয়। বরিশাল- আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু গত নির্বাচনেও নৌকাকে হারিয়ে জয়লাভ করেছিলেন। তৃণমূল পর্যায়ে করেছেন সংগঠন। রংপুর- আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য শাদ এরশাদ নিয়মিত এলাকামুখী না হলেও আসনে জাপার আছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের প্রত্যক্ষভাবে আসনকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রেখেছেন।

তাছাড়া রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা রংপুর সদরের এই আসনটিকে নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখতে সবসময়ই মাঠে ছিলেন। গাইবান্ধা- আসনের শামীম হায়দার পাটোয়ারী সুবক্তা হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি নিয়মিত এলাকামুখী ছিলেন তিনি। ঢাকা- আসনে নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম। তার প্রয়াত স্বামী যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল নিজ অর্থায়নে এলাকায় ব্যাপক কাজ করেছেন। সেখানে নৌকা প্রত্যাহার না হলেও তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন। কুড়িগ্রাম- আসনের পনির হোসেনও এমপি হবার পর থেকে নিয়মিত যাতায়াত করেন নিজ এলাকায়। পার্টির তরুণ এমপি সুনামগঞ্জ- আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মেজবাহও নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন নিজ এলাকার সঙ্গে। পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও বরাবরই নিজ এলাকায় জনপ্রিয়। একক নির্বাচনের তিনি পরাজিত হলেও নির্বাচিত প্রার্থীর চেয়ে স্বল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান তিনি। জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারও নিয়মিত এলাকামুখী। বিগত সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী- আসন থেকে প্রার্থী হতে না পারলেও এলাকায় রয়েছে তার বিশাল কর্মীবাহিনী। এছাড়া সাবেক মহাসচিব হিসেবে সারা দেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে তার একটি গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। তার সহধর্মিণী রত্না আমিন হাওলাদার বরিশাল- আসনের সংসদ সদস্য। তিনিও নিয়মিত এলাকায় যান বলে জানান বাকেরগঞ্জ উপজেলার জাপা নেতারা।

জাপা নেতারা জানান, বাকি ১৩ জন দলীয় এমপি এলাকায় সংগঠন করেননি। এমনকি নিজ দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও কোনো ধরনের সমন্বয় করেনি। কেউ কেউ মাসেও একবার নিজ এলাকায় যাননি বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

জাতীয় পার্টির এক কো-চেয়ারম্যান জানান, সরকার যেহেতু নির্বাচনকে অর্থবহ করতে চায়, তাই যাদের এলাকায় শক্ত ভিত রয়েছে তাদেরকে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী করতে সরকার থেকে জাতীয় পার্টিকে অনুরোধ করেছে। সেক্ষেত্রে এলাকা বিমুখ নেতাদের পুনরায় এমপি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা ক্ষীণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

(ঢাকাটাইমস/১০ডিসেম্বর/জেবি/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

বঞ্চিত মেহনতি-শ্রমিক জনতাই এই ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটাবে: এবি পার্টি

দলের নির্দেশনা উপেক্ষা: আরও ৬৬ জনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বিএনপির

নির্যাতিত-নিপীড়িতরাই বিজয়ী হ‌বে: রিজভী

হাসপাতালে পৌঁছেছেন বেগম খালেদা জিয়া

বিএনপি ধ্বংসের জন্য বাইরের শত্রুর দরকার নেই: কাদের

সারাদেশের মানুষ ন্যূনতম অধিকার থেকেও বঞ্চিত: মির্জা ফখরুল

গুটিকয়েক দুর্বৃত্তের হাতে জিম্মি রাষ্ট্র, বিপ্লব ছাড়া পরিবর্তন হবে না: নুর

ভারতের নির্বাচন দেখতে আওয়ামী লীগকে বিজেপির আমন্ত্রণ

আওয়ামী লীগ শাসনামলে বেশি শ্রমিক হত্যা হয়েছে: রাশেদ প্রধান

তাপপ্রবাহের জন্য আ.লীগ সরকারকে দায়ী করলেন জয়নুল আবেদিন ফারুক

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :