ডাকাতি করতে গিয়ে স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ-হত্যা: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ১০ বছর পর গ্রেপ্তার

লক্ষ্মীপুরে স্কুলছাত্রী স্মৃতি রানী সীমাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাদ্দাম হোসেন রহিমকে রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে পলাতক ছিলেন সাদ্দাম।
রবিবার দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিতে ব্রিফিংয়ে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, দীর্ঘ ১০ বছর পলাতক থাকা সাদ্দাম হোসেন রহিম আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার রাতে র্যাব-৩ রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। সাদ্দাম স্কুলছাত্রী স্মৃতি রানী সীমাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।”
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, সে ডাকাত দলের একজন সক্রিয় সদস্য। নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লাসহ আন্তঃজেলা ডাকাতি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করত সে। তারা আগে থেকে পরিকল্পনা করে ডাকাতির স্থান নির্ধারণ করে সবাই এক জায়গায় মিলিত হয়ে সুযোগ বুঝে ডাকাতি করত। ডাকাতিকালে তারা হত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের নৃশংস কর্মকাণ্ড করত। এই ডাকাত দলটি বিভিন্ন সময়ে ডজনখানেক বাড়িতে ডাকাতি করেছে।”
ঘটনার বিবরণ দিয়ে আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, “লক্ষীপুর সদর থানা এলাকায় জনৈক কৃষ্ণলাল দেবনাথ তার স্ত্রী, পুত্রবধূ এবং ৩ নাতনি নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই কৃষ্ণলালের বাড়িতে মুখোশ পরে ১৪ থেকে ১৫ জন ডাকাত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে। তারা কৃষ্ণলালের পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বেঁধে ফেলে। এ সময় ডাকাতরা কৃষ্ণলাল দেবনাথ, তার স্ত্রী গীতা রানী ও পরিবারের সদস্যদের দেশীয় অস্ত্র দ্বারা বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে একটি রুমে আটকে রাখে। পরে তারা কৃষ্ণলালের নাতনী সীমাকে একটি কক্ষে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। শেষে ডাকাত দলটি স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ৮০ হাজার টাকা মূল্যের মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়।”
র্যাব-৩ এর এই কর্মকর্তা বলেন, “ডাকাতরা চলে যাওয়ার পর ভিকটিমের পরিবারের চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন সীমা ও আহতদের স্থানীয় চন্দ্রগঞ্জ ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভুক্তভোগী স্মৃতি রানী সীমা মারা যায়। এ ঘটনায় কৃষ্ণলাল দেবনাথ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১৪-১৫ জনকে আসামি করে ডাকাতি, ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে থানায় মামলা করেন। তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনার তদন্ত শেষে ২৫ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেন। মামলার ২০ জন আসামি বিভিন্ন সময়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। মামলার দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৪ সালে আদালত ১৫ জনকে খালাস এবং ১০ জন আসামির মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে হাইকোর্টে আপিল করা হলে ২ জন আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন এবং বাকি ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আদালত।”
আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, “মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ৪ জন এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ১ জন পলাতক রয়েছেন। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে র্যাব গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা সাদ্দামকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই।”
(ঢাকাটাইমস/২৫ফেব্রুয়ারি/এসএস/এফএ)

মন্তব্য করুন