বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চান অভিনেত্রী অপি করিমও

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়- বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে দাঁড়ালেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপি করিমও। বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়ে এ বিষয়ে তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন অভিনেত্রী।

অপি করিম পোস্টে লিখেছেন, ‌‘বুয়েটের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং এলামনাই হিসেবে আমি বুয়েটে সকল প্রকার ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে। বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে আমি একাত্মতা ঘোষণা করছি এবং তাদের সফলতা কামনা করছি।’

ছাত্ররাজনীতি নিয়ে কয়েকদিন ধরেই উত্তাল বুয়েট। তারই মাঝে অভিনেত্রী অপি করিমের এই পোস্ট নেটিজেনদের মন জয় করেছে। সকলেই তার সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। একজন মন্তব্য করেছেন, ‘আমাদের শিল্পীদের মাঝে একজনকে পেলাম যিনি সত্যি বলতে দ্বিধা করেন না।’

২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপরই ছাত্রদের তীব্র আন্দোলন ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।

তবে ফের বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চালুর জন্য আন্দোলনে নেমেছে ছাত্রলীগ। অন্যদিকে, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে বুয়েটের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী। তারা ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলাচিঠি দিয়েছেন। যদিও হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চলতে বাধা নেই।

এদিকে, অপি করিমের আগে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে পোস্ট দেন সেখানকার সাবেক শিক্ষার্থী, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী গবেষক, লেখক, সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও শিক্ষক চমক হাসান।

গত বুধবার রাতে দেওয়া ওই পোস্টের শুরুতে চমক হাসান লেখেন, ‘আমি বুয়েটের অ্যালামনাইদের একজন হিসেবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে চাই। আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকা উচিত। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র শিবির- কিছুরই দরকার নাই।’

কারণও উল্লেখ করেন চমক। লেখেন, ‘দুই কলামের একটা সারণি বানানো হোক। বামপাশে থাকুক ছাত্ররাজনীতির উপস্থিতি বুয়েটে কী কী ইতিবাচক পরিবর্তন উপহার দিয়েছে তার একটা তালিকা, আর ডানপাশে থাকুক ছাত্ররাজনীতির উপস্থিতির কারণে কী কী যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে গেছে ছাত্র-শিক্ষক-প্রশাসন, তার একটা খতিয়ান। ডানপাশে আবরার, সনি এই নামগুলোর কোনো একটার যে ভার, সেটা বামপাশের সম্মিলিত ভারের চেয়েও বহুগুণে বেশি। এরপরেও ডানদিকের তালিকায় র‌্যাগিং, অত্যাচার, চাঁদাবাজি, ক্ষমতা প্রদর্শনী, অন্যায় সুবিধাভোগ– এসবের উপাখ্যান পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে যাওয়া যাবে। তাহলে ছাত্ররাজনীতি কেন চাইবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা?’

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডকে স্মরণ করে চমক লেখেন, ‘ডিপার্টমেন্টের প্রিয় জুনিয়র আবরারকে যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল, মন থেকে সেই ক্ষত এখনও মুছে যায়নি। চেনা জুনিয়রদের সাথে যত আলাপ হয়েছে সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আবরার-হত্যার ঘটনার পর যখন ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়, তারপর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেক শান্তিতে ছিল, আছে। কোনো যুক্তিতেই আবার ঐ নরক ফিরিয়ে আনার মানে হয় না।’

তিনি আরও লেখেন, ‘ছাত্রলীগ না থাকলে শিবির মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে- এটাও মেনে নেওয়ার মতো যুক্তি না। সহজ কথা- ছাত্ররাজনীতি নেই মানে কোনো সংগঠনেরই কার্যক্রম নেই। ছাত্রলীগও না, শিবিরও না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা সবাইকেই প্রতিহত করবে। গত কদিনে সবার সাহস আর ঐক্য দেখে তাদের প্রতি এই ভরসা আমার আছে।’

সবশেষ চমক লেখেন, ‘একসঙ্গে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়ে পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা যে ঐক্য দেখিয়েছে, সেটা অসাধারণ। মন থেকে ভালোবাসা আর টুপিখোলা সালাম! আমার পূর্ণ সমর্থন রইলো তোমাদের জন্য।’

(ঢাকাটাইমস/০৫এপ্রিল/এজে)