সহিংসতা ও কারফিউয়ের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম নিয়ে বিপাকে কৃষকরা

জহুরুল ইসলাম জহির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
  প্রকাশিত : ২৫ জুলাই ২০২৪, ১৬:১৩
অ- অ+

সহিংসতা ও কারফিউয়ের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম নিয়ে বিপাকে আমচাষি, বাগান মালিক ও আম ব্যবসায়ীয়রা। গেল কয়েকদিন ধরে চলা অবস্থায় বাগান থেকে আম পাড়তে পারছে না কোন কৃষক। এতে গাছেই পেকে পচে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার আম। ক্ষতি শঙ্কায় মাথা হাত তাদের।

আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগানগুলোতে বাহারি জাতের আম থোকাই থোকাই ঝুলছে। এসময় আম বাগানগুলোতে আম পাড়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন আমচাষি, বাগান মালিক ও আম ব্যবসায়ীয়রা। তবে সহিংসতা ও কারফিউয়ের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জুড়ে আম নিয়ে বিপাকে দিন পারছেন তারা। রাস্তায় যানবহন না চলা ও বাজারগুলো ভোক্তা না আসায় আম পারতে পারছেন কৃষকরা। এর কারণে গাছে আম পেকে পচে নষ্ট হচ্ছে। কিছু পাকা আম গাছ থেকে পেড়ে বাজার নিয়ে গেলোও ক্রেতা না থাকায় সেগুলো নিয়ে বিপাকে। এতে ক্ষতি হচ্ছে বলছেন কৃষকরা।

আমচাষি মনজের আলম মানিক জানান, জেলায় এবার আম কম আসলেও দামটা বেশ ভাল পাচ্ছিলাম। কিন্তু সহিংসতা ও কারফিউয়ের কারণে বাগানের আমগুলো পাড়া যাচ্ছে না। গাছেই আম পেকে নষ্ট হচ্ছে। তাই এবার আমচাষিরা ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আম পাড়তে না পারলে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হবে।

আমচাষি বিপ্লব জানান, নাবি জাতের আমগুলো গত এক মাস ধরে পাকা শুরু করেছে। এখন এ আমগুলো ভরপুর পেকে গেছে গাছে। গাছে আম থাকা আকাশের বৃষ্টিতে আমগুলো পচে নষ্ট হচ্ছে। সহিংসতার সময় ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা আম পাঠালেও রাস্তা থেকে ফেরত পাঠানো হয় আমাদের কাছে। সেই আমগুলোতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখনো গাছে আম রয়েছে ভয়ে পাড়তে পারছি না। সব জায়গায় দ্রুত কারফিউ উঠিয়ে নেয়া প্রয়োজন।

আমচাষি কামরুল হাসান জানান, গেল ৮ থেকে ১০ দিন কারফিউয়ের মধ্যে সারা দেশ। এর প্রভাব আমের রাজধানীতে পড়েছে। আম পাড়তে না পারাই পরিপক্ক আমগুলো গাছেই পেকে পড়ে যাচ্ছে। আর এ আমগুলো বাজারজাত করতে পারছেনা চাষিরা। এ কারণে চাষিদের এখন আম নিয়ে মাথায় হাত। আবার বৃষ্টি হচ্ছে।

আম বাগান মালিক গোলাম মোস্তফা জানান, গাছ থেকে আম পাড়তে না পারাই অর্ধেকের বেশি আম পেকে পড়ে গেছে। পাকা আমগুলো বাইরে কোথাও দিতে পারছেনা। জেলার মানুষও কম খাচ্ছেন। এতে আমচাষি, বাগান মালিক ও আম ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির মধ্যে দিন পার করছেন। দ্রুত সমাধান করবেন সরকার।

এদিকে শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম জানান, কারফিউয়ের মধ্যে যারা আমচাষ করি তারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। ফজলি, বারি-৪ ও আম্রপালি আমগুলো এখন ওভার ম্যাচুয়েড হয়ে গেছে। কারফিউয়ের কারণে বরিশাল, খুলনা, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়নগঞ্জের বাজারগুলো বন্ধ থাকাই আমগুলো পাঠাতে পারেনা আমচাষিরা। অনলাইনে যারা আমের ব্যবসায় করতো সেসব ব্যবসায়ী বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা আম পাঠাতে পারেনি ব্যবসায়ীরা।

কানসাট আম আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু জানান, জেলার বড় আম বাজার কানসাট আম বাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ২শ ট্রাক আম দেশের বিভিন্ন জায়গায় গেলেও সহিংসতা ও কারফিউয়ের কারণে এখন প্রতিদিন ৪০-৫০ ট্রাক আম যাচ্ছে। এতে আমচাষি, আম আড়ৎদারদের লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকার কারফিউ তুলে না নিলে আমে ব্যাপক ধস নামবে।

আর জেলায় সহিংসতা ও কারফিউয়ের কারণে আমের কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকারের জানা না থাকলেও সীমিত পরিসরে আম বেচাকেনা হচ্ছে। তবে মণ প্রতি ৩শ থেকে ৪শ টাকা কম দরে আম বিক্রি হচ্ছে বিষয়টি জানান তিনি।

এ বছর জেলার ৫টি উপজেলায় প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। চলতি মৌসুমে সাড়ে ৪ লাখ মেট্টি টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে।

(ঢাকা টাইমস/২৫জুলাই/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
টয়োটার ব্যবসা হারাচ্ছে নাভানা?
সারজিস বনাম নওশাদ: ভোটে কার পাল্লা ভারি?
মনোহরদীতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ছাত্রদল নেতা গণধোলাইয়ের শিকার
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদও জয় করব: নাহিদ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা