অসীম সাহসিকতায় তারা লড়েছেন, এখন ভাসছেন প্রশংসায়
দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য, গুম-খুন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে অকুতোভয়ে লড়ে গেছেন এক ঝাঁক প্রবাসী সাংবাদিক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর এখন তারাই ভাসছেন সাধারণ মানুষের প্রশংসায়।
বিদেশে থেকেও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ভূমিকা রাখা এমন কয়েকজন সাংবাদিদের মধ্যে অন্যতম মুশফিকুল ফজল আনসারী। মেধাবী এ সাংবাদিক গত এক দশকের বেশি সময় ধরে দেশে-বিদেশে আলোচিত মুখ।
জাতিসংঘের সদর দপ্তর অথবা মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে মুশফিকুল ফজল আনসারী দিনের পর দিন বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরতেন। তার করা প্রশ্নের জবাবে জানা যেত বাংলাদেশ নিয়ে জাতিসংঘ বা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান।
মুশফিকুল ফজল আনসারী দৈনিক ইত্তেফাকের কূটনৈতিক প্রতিবেদক ছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেস সচিবের দায়িত্বও পালন করেছেন এ মেধাবী সাংবাদিক। সম্পাদক ছিলেন জাস্ট নিউজ নামে একটি পোর্টালের। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
দেশে থাকার সময় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের হয়ে কাজ করতেন সাংবাদিক তাসনীম খলিল। এছাড়াও তিনি সিএনএনের স্ট্রিংগার এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পরামর্শদাতা ছিলেন।
তাসনীম খলিল ২০০৬ সালে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হয়ে সুইডেনে আশ্রয় নেন। বর্তমানে তিনি সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক। গুম, খুন, ক্রসফায়ারসহ আওয়ামী লীগ সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা অপকর্ম তাসনীম খলিলের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে। বিশেষ করে কুখ্যাত আয়নাঘরের বিষয়টি তিনিই প্রথম সামনে নিয়ে আসেন। তাসনীম খলিলের অনুসন্ধানী রিপোর্ট তোলপাড় তৈরি করে।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান সামি ব্যাপকভাবে আলোচিত ছিলেন কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরার অনুসন্ধানি প্রতিবেদনের সূত্র হয়ে।
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং তার ভাইদের নিয়ে ‘ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক’ আল জাজিরার ওই প্রতিবেদন দেশে বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছিল।
দেশের বিভিন্ন আলোচিত ইস্যুতে সবসময় সরব থাকা জুলকারনাইন সায়ের খান সামি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় অনলাইনে এ আন্দোলনের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এছাড়াও তিনি বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে একাধিক গোপন তথ্য প্রকাশ করেন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য সামি ও তার তদন্ত টিম ২০২২ সালে ‘বেস্ট হিউম্যান রাইটস জার্নালিজম’ বিভাগে অ্যামনেস্টি মিডিয়া পুরস্কার অর্জন করে।
গত কয়েক বছরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত নাম পিনাকী ভট্টাচার্য। বর্তমানে ফ্রান্স নিবাসী পিনাকী একজন মানবাধিকারকর্মী। তীক্ষ্ণ ও ক্ষুরধার বক্তব্যের জন্য তার রয়েছে লাখো অনুরাগী। প্রবাসে থাকলেও দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে তিনি সবসময় সরব ছিলেন তিনি। তার ভিডিও বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সরকারের নানা অপকর্মের তীব্র সমালোচনা থাকত।
ড. কনক সারোয়ার ইউটিউবে টকশো করে সরকারের একের পর এক মুখোশ উন্মোচন করেছেন। আওয়ামী লীগের শাসনামলে তার পরিবারের ওপর অনেক নির্যাতন হয়েছে। এরপরও পিছু না হটা কনক সারোয়ার আওয়ামী সরকারের দুর্নীতি আর অনিয়মের অনেক ঘটনা সামনে নিয়ে আসেন।
একসময় দেশে টিভি সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন ইলিয়াস হোসেন। বর্তমানে প্রবাসী এ অনুসন্ধানী সাংবাদিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিপুল জনপ্রিয়। তিনি অসীম সাহসিকতায় সরকারের দুর্নীতি আর অনিয়মের তথ্য প্রকাশ করে গেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ আলম নানা বিশ্লেষণাত্মক ভিডিও প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনায় মুখর ছিলেন। একই রকম বিশ্লেষণাত্মক ভিডিও করতেন আরেক প্রবাসী সাংবাদিক মনির হায়দার। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এই দুই সাংবাদিকের অবদানও কম নয়।
ইউটিউব চ্যানেল নাগরিক টিভির নাজমুস সাকিব বরাবরই সরব ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে। তথ্যপ্রমাণসহ তার করা বিভিন্ন রিপোর্টে বিপাকে পড়ত দুর্নীতিবাজরা।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বরাবরই সরব ছিলেন। বিশেষ করে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষের একাধিক দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ করে তিনি তোলপাড় তৈরি করেন।
এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বিজ্ঞানী ফাহাম আব্দুস সালামের বিশ্লেষনাত্মক নানা ভিডিও বেশ সাড়া ফেলে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে তার বক্তব্য বিপুল আবেদন তৈরি করে।
প্রবাসী আরেক সাংবাদিক আব্দুর রব ভুট্টো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের অপকর্ম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন। সরকারের রোষানলে পড়ে তার পরিবারকেও হয়রানির মুখে পড়তে হয়।
অনলাইন অ্যক্টিভিস্টদের মধ্যে সাইফুর সাগর ও ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবসহ এমন আরো অনেক ব্যক্তি রয়েছেন, যারা দেশের মানুষের জন্য, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য অকুতোভয়ে লড়ে গেছেন।
(ঢাকাটাইমস/০৯সেপ্টেম্বর)