হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বসে পরিকল্পনা, ঢাকায় এসে চালককে হত্যার পর সিএনজি ছিনতাই, অবশেষে গ্রেপ্তার ৫

রাজধানীর পল্লবীতে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে চালককে হত্যা করে সিএনজি ছিনতাইয়ের চাঞ্চল্যকর ঘটনার সঙ্গে জড়িত চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪। এছাড়া লুষ্ঠিত সিএনজি উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত হলেন— মো. সৌরভ সরকার(২০), মো. ইয়াছিন মিয়া (২০), মো. মুসা (২৫), মো. দুলাল মিয়া (৩২) ও মো. শাহজালাল (২৬)।
র্যাব জানায়, চক্রটি আগে বিভিন্ন রেলস্টেশন কেন্দ্রীক ছিনতাই ও চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল। কিন্তু বেশি টাকা আয়ের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বসে সিএনজি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। পরে ঢাকায় এসে পল্লবী এলাকায় চালককে হত্যা করে সিএনজিটি নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়ে মাত্র ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর মিরপুর-১ এর র্যাব-৪ এর সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ব্যাটেলিয়নটির অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুব।
তিনি জানান, গত ১৬ মে মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় একটি অজ্ঞাত লাশ পাওয়া যায়। এই তথ্য র্যাব-৪ এর আভিযানিক দল জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিকভাবে জানতে পারি যে অজ্ঞাত লাশটি আব্দুল অজিদ বাচ্চু নামে এক সিএনজি চালকের।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন এবং অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব-৪। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং কুমিল্লায় আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করি। পরবর্তীতে র্যাব-৪, র্যাব-৯ এবং র্যাব সদর দপ্তরের ইন্ট উইং এর যৌথ আভিযানিক দল বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন এলাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে ওই হত্যাকাণ্ড ও সিএনজি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারসহ লুষ্ঠিত সিএনজি উদ্ধার করা হয়।
তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে আসামিরা জানায়, এই ঘটনার সাথে ৬-৭ জন জড়িত ছিল। ঘটনার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে ছিনতাই পর্যন্ত এই ৬-৭ জনকে শনাক্ত করতে পেরেছি। এই ঘটনা মূলত পরিকল্পনা করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। মুসা, সৌরভ এবং ইয়াছিন পরস্পর বন্ধু এবং তারা ছোট খাটো চুরি ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত ছিল। সেখানে তারা পরিকল্পনা করে একটি সিএনজি ছিনতাইয়ের, যা করতে পারলে তাদের ভাল টাকা পয়সা আসবে। এ ধরনের ছিনতাই ঢাকায় করা সহজ বলে তারা ঢাকায় একটি সিএনজি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পানা মোতাবেক গত ১৫ মে সন্ধ্যায় সৌরভ এবং ইয়াছিন আগারগাঁওয়ে মিলিত হয়। তারা মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে একটি উপযুক্ত টার্গেট খোঁজার চেষ্টা করে। আনুমানিক রাত ৩টার দিকে সৌরভ শ্যামলী ইবনে সিনা হাসপাতালের সামনে থেকে আব্দুল অজিদহে বাচ্চুর সিএনজিটি ভাড়া করে। সিএনজিটি নিয়ে ৬০ ফিট পানির ট্যাংকির সামনে পূর্ব থেকে অপেক্ষমান ইয়াছিনকে নিতে আসে। পরিকল্পনা মোতাবেক তারা সিএনজি চালককে সিএনজিটি ঘুরাতে বলে। সিএনজি চালক সিএনজি থেকে নেমে সিএনজি ঘুরাতে গেলে তারা অকস্মাৎ মাথার পেছন থেকে আঘাত করে এবং মুসার পরামর্শে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
তারা বেশ কয়েকটি জায়গায় লাশ ফেলানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর পল্লবী থানাধীন মিরপুর ডিওএইচএস এর ৪ নম্বর অবকাশ ক্যান্টিনের দক্ষিণপার্শ্বে সিরামিক প্রাচীরের পাশে ফেলে সাভারে পালিয়ে যায়।
সেখানে তারা সিএনজিটি পরিষ্কার করে সন্ধ্যার দিকে তিনজনে মিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পূর্বাচল পার হওয়ার পরে চোরাই সিএনজি বেচাকেনা চক্রের দলনেতা আল আমিনের সহযোগী শাহজালাল ও দুলাল এসে সিএনজিটিতে উঠে এবং সবাই মিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলে যায়। পরদিন আল আমিন এসে শাহজালাল ও দুলালের সহায়তায় পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকায় সিএনজিটি ক্রয় করে কুমিল্লার দেবিদ্বারে নিয়ে যায়। সেখানে সে গাড়িটির রং ও কভার পরিবর্তন করার জন্য একটি ওয়ার্কশপে দেয়। সেখান থেকে গতকাল বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর, ইন্ট উইং এবং র্যাব-৪ এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল উক্ত সিএনজিটি উদ্ধার করে এবং ঘটনার সাথে জড়িত চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত সবাই মাদকাসক্ত। মূলত মাদক ও জুয়ার টাকা জোগাতে তারা এই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায়। তবে তাদের পরিকল্পনা ছিল সিএনজি ছিনতাই, হত্যাকাণ্ডের টার্গেট ছিল না। কিন্তু ছিনতাইয়ের সময় প্রথম আঘাত বেশি আক্রান্ত করে ভিকটিমকে। যার কারণে ভুক্তভোগী মারা যায়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামির বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীনসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক।
(ঢাকাটাইমস/২৩মে/এলএম/এসএ)

মন্তব্য করুন