যুদ্ধের মধ্যেও গোপন ব্যবস্থায় সরকারি কর্মচারীদের বেতন দিচ্ছে হামাস

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ, চরম খাদ্য সংকট এবং আর্থিক অস্থিরতার মধ্যেও গোপন ব্যবস্থায় সরকারি কর্মচারীদের নগদ বেতন দিচ্ছে হামাস। গোপন ‘চা খাওয়ার আমন্ত্রণ’ বার্তা পাঠিয়ে কর্মীদের নির্দিষ্ট সময় ও স্থানে ডেকে এনে হাতে হাতে বেতন প্রদান করছে গোষ্ঠীটি।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গাজায় বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার সরকারি কর্মচারী রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে জানিয়েছেন, প্রতি ১০ সপ্তাহ অন্তর মাত্র ২০ শতাংশেরও কম বেতন পাচ্ছেন। সম্প্রতি তিনজন কর্মচারী জানান, তারা মাত্র ৩০০ ডলার করে পেয়েছেন, যার বেশিরভাগই পুরনো ও ছেঁড়া নোট।
একজন স্কুলশিক্ষক বলেন, “শুধু ২০০ শেকেল ব্যবহারযোগ্য ছিল। বাকিটা নিয়ে কী করব, বুঝতে পারছি না।” ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিবার বেতন তুলতে যাওয়ার সময় পরিবারের সদস্যদের বিদায় জানিয়ে যান, কারণ জানেন না আদৌ জীবিত ফিরতে পারবেন কি না।
গাজায় কার্যকর কোনো ব্যাংকিং ব্যবস্থা না থাকায় নগদ অর্থের মাধ্যমে এ পদ্ধতি চালু করেছে হামাস। বিবিসির বরাতে জানা যায়, ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে হামাসের অর্থবিভাগের প্রধান ইসমাইল বারহুমকে হত্যা করা হয়। তা সত্ত্বেও কীভাবে এখনো হামাস বেতন দিতে পারছে, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।
তবে এক হামাস কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের আগেই তারা ৭০০ মিলিয়ন ডলার এবং বিপুল পরিমাণ শেকেল টানেলের মাধ্যমে মজুত করে রেখেছিল। এই অর্থের দেখভাল করতেন হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও তার ভাই মোহাম্মদ, যাদের পরবর্তীতে ইসরায়েল হত্যা করে।
যুদ্ধের মধ্যেও ব্যবসায়ীদের ওপর কর আরোপ এবং সিগারেট শতগুণ দামে বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করছে হামাস। শুধু তাই নয়, স্থানীয় জরুরি কমিটির মাধ্যমে খাদ্য বিতরণেও রয়েছে বৈষম্য। অভিযোগ উঠেছে, শুধুমাত্র হামাস সমর্থকদের মধ্যেই ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে তারা।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে গাজার এক নারী নিসরিন খালেদ বলেন, “আমার সন্তানরা শুধু ক্ষুধার জন্য নয়, পাশের হামাস সমর্থকদের খাবার পেয়ে কান্না করত। আমাদের দুর্ভোগের জন্য তারাই কি দায়ী নয়?”
অন্যদিকে ইসরায়েলের অভিযোগ, যুদ্ধবিরতির সময় আন্তর্জাতিক সহায়তার বড় একটি অংশ হামাস চুরি করেছে। যদিও হামাস তা অস্বীকার করলেও গাজা থেকে বিবিসির সূত্র জানিয়েছে, তখনও তারা উল্লেখযোগ্য সহায়তা দখল করেছে।
দীর্ঘদিনের অবরোধ, যুদ্ধ ও আর্থিক সংকটে জর্জরিত গাজায় হামাসের এই বেতন বিতরণ ব্যবস্থা যেমন তাদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার ইঙ্গিত দেয়, তেমনি জনসাধারণের মধ্যে বাড়তি ক্ষোভও তৈরি করছে।
(ঢাকাটাইমস/৭ আগস্ট/আরজেড)

মন্তব্য করুন