হিলারিকে নিয়ে স্বপ্নে ভাসছে বিএনপি

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০১৬, ০৯:০৬ | প্রকাশিত : ০৮ নভেম্বর ২০১৬, ০৮:১৯

নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রে। ফলাফলের দিকে দারুণভাবে আগ্রহী বাংলাদেশে বিএনপির সমর্থকরা। ভিনদেশী প্রেসিডেন্টকে ঘিরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বাংলাদেশি রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থকদের আগ্রহের কারণ হিলারির এগিয়ে থাকা।

বিএনপি সমর্থকদের ধারণা হিলারির সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনূসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে আখেরে বিএনপির লাভ হতে পারে।

কেউ কেউ তো ইতিমধ্যে হিলারিকে নতুন প্রেসিডেন্ট ধরে নিয়ে আগামী বছর বাংলাদেশের নেতৃত্বেও দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া আসছেন এমনটা প্রচার করছেন। হিলারি প্রেসিডেন্ট হলে বিএনপির জন্য যেসব কারণে সুখবর বয়ে আনবে তাও প্রচার করছেন।

তবে বিএনপির কর্মী সমর্থকদের মতো এতোটা উচ্ছ্বাস নেই বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সবার মধ্যে। তারা বলছেন, হিলারি বিজয়ী হলে বিএনপির জন্য ভালো হবে এমনটা মনে করার কারণ নেই। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের মতো কোনো দেশের সরকারে কে থাকলো- না থাকলো তাতে তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে খুব বেশি পরিবর্তন আসে না।

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মর্শিয়া ব্লুক বার্নিকাট এরই মধ্যে বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেছেন, তার দেশে ক্ষমতায় যেই আসুক না কেন-বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না।

দেশের বাইরে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির এই উচ্ছ্বাস আর আগ্রহ নতুন খবর নয়। ২০১৪ সালে ভারতের ১৫তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পরও এমন তৎপরতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল বিএনপি শিবিরে। মোদির দল বিজেপি ওই নির্বাচনে জেতার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিষ্টি বিতরণও হয়েছিল। বিএনপি নেতা-কর্মীদের ধারণা ছিল, আগের কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ থাকলেও মোদি সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক অতটা ভালো হবে না। আর মোদি সরকার সমর্থন না দিলে আওয়ামী লীগের পক্ষে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে না।

২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরে আসেন মোদি। ওইবছরের ৭ জুলাই তার সঙ্গে সাক্ষাত হয় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার।সাক্ষাত শেষে খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘খুব সুন্দর আলোচনা হয়েছে ।’ ওই সাক্ষাতে তাদের দুজনের একান্তে বৈঠকও হয়েছিল। যা নিয়ে বিএনপিতে উচ্ছ্বাস ছিল বেশি। কিন্তু মোদি বাংলাদেশ সফর করে গেলেও এ বিষয়ে তেমন কোনো বক্তব্যই আসেনি।

এবার আবার যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে বিএনপিতে নতুন উচ্ছ্বাস। তবে সব চিন্তা যেন হিলারিকে ঘিরে। এরই ধারাবাহিকতায় কিছুদিন আগে হিলারির জন্মদিনে বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

তবে সবচেয়ে জোরালো আলোচনায় যে বিষয়টি তা হলো, হিলারির পক্ষে প্রচারণায় ওবামার স্ত্রীর প্রকাশ করা নির্বাচনী ভিডিও চিত্রে খালেদা জিয়াকে দেখা যাওয়া। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। অনেককে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সেই ভিডিও প্রচার করতে দেখা গেছে।

ভিডিওটি পোস্ট করে বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি বুঝলাম না,হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচারনার ভিডিওতে কেন শুধু বেগম খালেদা জিয়ার ছবি? শেখ হাসিনা ও তার ... এরশাদের ছবি কেন নয়? নিশ্চয়ই এখানেও বিএনপি জামাতের গভীর ষড়যন্ত্র আছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাচনে হিলারি ইস্যু বিএনপির কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, ড.ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের মতপার্থক্য।

সবশেষ বিখ্যাত ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘ভোগ’ প্রকাশিত নির্বাচনী প্রতিবেদনে হিলারি ও বেগম খালেদা জিয়ার ছবি ছেপেছে। ‘ভোগ’ সাধারণত গ্লামার অ্যান্ড পাওয়ার নিয়েই কাজ করে। ম্যাগাজিনটিতে ২৪টি ছবি স্থান পেয়েছে। তার মধ্যে ১৬ নম্বর ছবিটি খালেদা জিয়ার সঙ্গে ২০০২ সালে হিলারির আনুষ্ঠানিক বৈঠকের ছবিটি দেয়া হয়েছে। মার্কিন সিনেটর হিসেবে হিলারি তখনকার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে নিউইয়র্কে দেখা করেছিলেন।

নির্বাচিত ওই ছবির ক্যাপশনে ‘ভোগ’ লিখেছে:“Did Clinton plan to coordinate outfits with then–Prime Minister Begum Khaleda Zia of Bangladesh? Whether it was planned or accidental, her tangerine suit was a step in a bolder direction.”

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল একাধিক নিউজপোর্টালে ‘ভোগ’ এর ছবি সম্বলিত নিউজ একাধিকবার ফেসবুকে পোস্ট করতে দেখা গেছে।

এদিকে রবিবার রাতে বিএনপির বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন তার ফেইসবুকে বেগম খালেদা জিয়া ও হিলারি ক্লিনটনের করমর্দন করা একটি ছবি পোস্ট করেছেন। তিনি ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘ইনশাল্লাহ ২০১৭ সালে জাতি বেগম খালেদা জিয়া ও হিলারি ক্লিনটনের একই ঐতিহাসিক ছবি দেখবেন। শুরু হবে নতুন যুগের।’

অন্যদিকে বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ হিলারিকে নিয়ে এমন উচ্ছ্বাস মানতে নারাজ। তারা মনে করেন, বিদেশনির্ভর রাজনীতিতে ক্ষমতার পটপরিবর্তন হবে -এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র বা ভারতে কে ক্ষমতায় এলো বা এলো না তাতে ওইসব দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো পরিবর্তন হয় না এটা বুঝতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনা প্রধান মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার দেশ বাংলাদেশ। ১৬কোটি মানুষ আমার জনগণ। সুতরাং অন্য দেশে কী হবে সেটা নিয়ে চিন্তা করে খুব বেশি লাভ নেই। ক্লিনটন ও হিলারি দুজনই বাংলাদেশে এসেছেন। এ দেশের সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্ক আছে ঠিক। কিন্তু হিলারি জয়ী হলে কোনো দলের কিছু হবে এর মোটেও কারণ নেই। তবে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে।’

(ঢাকাটাইমস/৭নভেম্বর/বিইউ/ডব্লিউবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণঅধিকার পরিষদ একটি বিকল্প শক্তি: নুর

দলের নির্দেশনা অমান্য করলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা: মুন্না

নির্বাচিত সরকার ছাড়া জনগণকে আর কেউ ব্যবহার করতে পারবে না: মির্জা ফখরুল 

৮ বছর পর দেশে ফিরে এলাকায় গিয়ে কাঁদলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুক

আমরা কোনো প্রতিহিংসার রাজনীতি করব না: যুবদলের সাধারণ সম্পাদক

আগামী জুনের মধ্যে নির্বাচন দাবি বাংলাদেশ এলডিপির

আমরা জামায়াতের সঙ্গে মহাঐক্য চাই: জাতীয় দলের চেয়ারম্যান

টেকসই সংস্কার ও নির্বাচন কার্যক্রম দৃশ্যমান করা দরকার: খেলাফত মজলিস

৭ নভেম্বর ছুটি পুনর্বহালের দাবি বিএনপির

বিএনপির ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করলেন মির্জা ফখরুল

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :