ঢাকার নায়ক ‘পোস্টার চাচা’ (ভিডিওসহ)

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ
| আপডেট : ২২ মার্চ ২০১৭, ১৬:০৮ | প্রকাশিত : ২২ মার্চ ২০১৭, ১৫:২৮

হেংলা গায়ের গড়ন। দাড়ি পেকে সাদা হয়েছে। চুল পাকেনি সব। আধ পুরোনো এক কোরতায় ঢেকে আছে সারা শরীর। কাঁধে লুঙ্গি। মাথায় টুপি। মানুষটির হাঁটাচলায় বেশ গতি। কোথাও দুদণ্ড- দাঁড়াচ্ছেন না। কাজ সেরে ফের ছুটছেন আরেক দেয়ালে। দেয়াল থেকে দেয়ালেই তার কাজ। কাজের ধরনটাও একটু আলাদা। তিনি পোস্টার ছিঁড়ে বেড়ান। নগরীর মানুষের কাছে তিনি ‘পোস্টার চাচা’ হিসেবেই পরিচিত।

মগবাজার উড়ালসেতুর নিচে দেখা পেলাম তার। একটির পর একটি স্তম্ভের দিকে যাচ্ছেন। নখের সঙ্গে লাগানো একটি ছোট ছুরি দিয়ে গুতিয়ে দেয়াল থেকে পোস্টার তুলে ছিঁড়ে ফেলছেন। খুব বেশি সময় নিচ্ছেন না। কয়েক মুহূর্তে পোস্টারের আড়াল থেকে বের করে আনছেন স্তম্ভের পাথর রূপ।

কদিন আগে লিখেছিলাম ‘ফাটা পোস্টার ঢাকার নায়ক’। পোস্টারে ঢেকে দেওয়া উড়ালসেতুর স্তম্ভগুলো নিয়ে। নগরীর শ্রী ফেরাতে এগুলো ঠেকানোর আবেদন ছিল সেখানে। দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেরেশন মেয়রদ্বয়কে। বলিউডের মুভি ‘ফাটা পোস্টার নিকলা হিরো’র মতো পোস্টারের আড়াল থেকে নগরীর শোভা বের করে আনার আকুতি ছিল। বলেছিলাম, নায়ক শহীদ কাপুর যেভাবে পোস্টার ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন তেমনি করে ঢাকার নগরপিতাদ্বয় কি পোস্টার হটিয়ে আড়াল থেকে তিলোত্তমার রূপ বের করে আনবেন? সেই নায়ক কি মেয়রদ্বয় হবেন? জানি না, তারা শুনতে পেয়েছেন কি না। তবে পোস্টার চাচার (নাম প্রকাশ্যে তার অনিচ্ছা) সঙ্গে দেখা হওয়ার পর মনে হয়েছে, ‘ঢাকার নায়ক’ পেয়ে গেছি।

প্রৌঢ় এই মানুষটিকে শহরের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দেখছেন। তিনি কারো সঙ্গে কথা বলেন না। পোস্টার চোখে পড়লেই আপন মনে তা ছিঁড়ে ফেলেন। কে কী বলল তার থোরাই কেয়ার করেন তিনি। মগবাজার স্তম্ভের গা থেকে সিনেমাসহ নানা ধরনের পোস্টার ছেঁড়ার সময় কথা হয় তার সঙ্গে। বললেন, পোস্টার দেখলে তার গা জ্বালা করে। মন চায় সব ছিঁড়ে ফেলতে। কারণ কী? বললেন সে কথাও। মাঝেমধ্যে পোস্টারগুলোর ছবি খুব নোংরা হয়। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এসব দেখে কী শিখবে? বিশ্রী লাগে। তাই তুলে ফেলি।

পোস্টার চাচা এ কাজে বেশ আনন্দ পান। তার চেয়ে বেশি আনন্দ পায় তার পেছন পেছন ঘুরে বেড়ানো কিশোরের দল। মহাখালী, মগবাজার, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বাংলামোটর, শাহবাগের মানুষ তাকে খুব ভালো করেই চেনে। কেউ তাকে দেখলেই বলে, ওই যে পোস্টারের জম আসছে। এখন সব দেয়াল খালি করে ফেলবে। আবার অনেকে ডেকে ডেকে পোস্টার দেখিয়ে দেন তাকে। বলেন, চাচা এদিকে অনেক পোস্টার আছে। তুলে ফেলেন। তিনিও হাসিমুখে দৌড়ে যান সেদিকে। আঙুলের সঙ্গে লাগানো ধারালো ছুরিটা দিয়ে পোস্টারের কোণা খুঁজে বের করেন। লম্বাটানে তুলে ফেলেন নগরীর শ্রী নষ্টের জন্য দায়ী আবর্জনাগুলো।

পোস্টার চাচার একার পক্ষে সম্ভব নয় সারা ঢাকাকে পোস্টারের হাত থেকে বাঁচানো। তবে তিনি নিজের চেষ্টায় যা করছেন তা দৃষ্টান্ত বটে। যত্রতত্র পোস্টার লাগানো ঠিক কাজ নয়। অন্তত এই প্রচার তো আমরা করতে পারি। নগর কর্তৃপক্ষ পারে আইন প্রয়োগ করতে। নগরীর শোভা নষ্টের জন্য আর্থিক দ- দিতে। বলছি না পোস্টার লাগানো বন্ধ করে ফেলতে হবে। বন্ধ করে দিতে হবে প্রচার। তবে তা নির্ধারিত জায়গার বাইরে নয়। কোথায় পোস্টার লাগনো যাবে তা ঠিক করে দেবে নগর কর্তৃপক্ষ।

যেখানে-সেখানে পোস্টার লাগিয়ে নগরীর সৌন্দর্য নষ্ট করার প্রতিযোগিতা ঠেকানো খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। এই শহরটি তো আমাদের। এর সৌন্দর্য রক্ষার দায়িত্বও আমাদেরই। একসময় বিল্ডবোর্ডের আড়ালে ঢাকা পড়া ঢাকাকে যখন মুক্তি দেওয়া গেছে, তখন পোস্টার এমনকি আর। আসুন না চেষ্টা করে দেখি। গত লেখার মতো এবারও শেষটা রবীন্দ্রনাথে হোক-

অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে-

নির্মল করো, উজ্জ্বল করো, সুন্দর করো হে।।

জাগ্রত করো, উদ্যত করো, নির্ভয় করো হে।

মঙ্গল করো, নিরলস নিঃসংশয় করো হে।।

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :