চীন-ভারত উত্তেজনায় নতুন মাত্রা

সৈয়দ রশিদ আলম
 | প্রকাশিত : ২৪ জুলাই ২০১৭, ১৩:০১

জহরলাল নেহেরু যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন, তখন অতি গোপনে তিনি ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের দিকে মনোযোগ দেন। এরপর ভারত যখন পাকিস্তানের সঙ্গে কাশ্মীর নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ল তখন চীন পাকিস্তানের পাশে ছিল।

ভারতের পরমাণু কর্মসূচিকে প্রতিরোধ করার জন্য চীন পাকিস্তানকে প্রযুক্তিগত সহায়তা যখন শুরু করল তখন থেকে ভারতের সঙ্গে চীনের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরপর তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দালাইলামা অরুণাচল প্রদেশের তাওয়ান থেকে যখন ভারতে প্রবেশ করলেন তখন ভারত সরকার দালাইলামাকে আশ্রয় দিয়ে চীনকে উত্তেজিত করে তুলেছিল। এছাড়া ভারত অতি গোপনে তাইওয়ানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক করার ফলে চীন-ভারতের দ্বন্দ্বটা অনেকটা বেড়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামা শপথ গ্রহণ করার পর থেকেই ভারতকে সামরিক প্রযুক্তি ও সমরাস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেন। মূল লক্ষ্য ছিল চীনকে দমন করা। যার ফলে চীনের উপর চাপ অনেকটাই বেড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে চীন কাশ্মীরের কারাকোরামে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। এই পথ দিয়ে পাকিস্তানে চীন সামরিক সরঞ্জাম অব্যাহতভাবে প্রেরণ করছে।

সম্প্রতি ভুটানের দোকলাম মালভূমিতে চীন যখন সড়কপথ তৈরি করার জন্য প্রস্তুতি শুরু করল তখন ভারত তার সেনাবাহিনী সেখানে প্রেরণ করে চীনকে বাধাগ্রস্ত করে। চীন যদি দোকলামে সড়কপথ তৈরি করতে পারে তাহলে অতি সহজে ভারতের সামরিক বাহিনীর কার্যক্রম নজরদারি করতে পারবে। যে কারণে ভারত কোনোভাবেই দোকলামে চীনকে সড়কপথ করতে দিবে না।

দোকলাম হচ্ছে ভুটানের একটি বিচ্ছিন্ন জনপদ। যেখানে ভুটানের প্রতিবাদ করার কথা সেখানে প্রতিবাদ করছে ভারত। তার কারণ ভুটান কোনো দেশের সঙ্গে কখনই দ্বন্দ্বে জড়াতে আগ্রহী নয়। আর ভারত চায় না ভুটান চীনের সঙ্গে কোনো ধরনের সুসম্পর্ক স্থাপন করুক। দোকলাম মালভূমি নিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় পত্রিকায় ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করা হয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় পত্রিকায় সাধারণত কোনো দেশের বিরুদ্ধে মন্তব্য করা হয় না। কিন্তু পরিস্থিতি এতই জটিল হয়ে গেছে যে, চীন বাধ্য হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করছে।

যদি দেশ দুটি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান না করতে পারে তাহলে দুটি দেশের মধ্যে সীমিত পর্যায়ে যুদ্ধ শুরু হতে পারে। এই যুদ্ধে পাকিস্তানও জড়িয়ে পড়তে পারে। কারণ কাশ্মীর সীমান্ত থেকে চীন ভারতে সেনাবাহিনী পাঠানোর হুমকি দিয়ে রেখেছে।

যদি কোনোক্রমে চীন ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে দুটি দেশ কিভাবে প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করবে তা জানার আগে আসুন আমরা দেশ দুটির সামরিক শক্তির একটি চিত্র জেনে নেই। চীনের সেনা সদস্য ২৩ লাখ ৩৫ হাজার। ভারতের সেনা সদস্য ১৩ লাখ ২৫ হাজার। চীনের রিজার্ভ ফোর্সের সংখ্যা ২৩ লাখ, ভারতের রিজার্ভ ফোর্সের সংখ্যা ২১ লাখ ২৩ হাজার।

চীনের ট্যাংকের সংখ্যা ৬ হাজার ৪৫৭টি, ভারতের ট্যাংকের সংখ্যা ৪ হাজার ৪২৬টি। চীনের সাঁজোয়া যানের সংখ্যা ৪৭৮৮টি, ভারতের সাঁজোয়া যানের সংখ্যা ৪৭০৪টি। চীনের রয়েছে সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি ৬২৪৬টি, ভারতের রয়েছে ৭৪১৪টি। চীনের মাল্টিপল রকেট রয়েছে ১৭৭০টি, ভারতের মাল্টিপল রকেট রয়েছে ২৯২টি। চীনের কাছে রয়েছে অত্যাধুনিক ১২৭১টি জঙ্গি বিমান, ভারতের কাছে রয়েছে ৬৭৬টি জঙ্গি বিমান।

চীনের অক্রমণকারী বিমানের সংখ্যা হচ্ছে ১৩৮৫টি, ভারতের ৮০৯টি। চীনের পরিবহন বিমান রয়েছে ৭৮২টি, ভারতের ৮৫৭টি। চীনের প্রশিক্ষণ বিমানের সংখ্যা ৩৫২টি, ভারতের ৩২৩টি। চীনের কাছে রয়েছে জঙ্গি হেলিকাপ্টার ২০৬টি, ভারতের কাছে রয়েছে ৫৯টি। চীনের কাছে রয়েছে ২টি বিমানবাহী রণতরী, একাধিক পারমাণবিক অস্ত্র সজ্জিত সাবমেরিন, পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন।

এছাড়া চীনের কাছে রয়েছে ১৫০টি অত্যাধুনিক যুদ্ধ জাহাজ। ভারতের কাছে রয়েছে একটি বিমানবাহী রণতরী, একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ, ৭৫টি নতুন পুরনো যুদ্ধজাহাজ। চীনের রয়েছে একটি শক্তিশালী পারমাণবিক বাহিনী। এই বাহিনীতে ১১ হাজার কিলোমিটার পাল্লার মিসাইল রয়েছে। প্রতিটি মিসাইল ৪টি করে পরমাণু বোমা বহন করতে সক্ষম।

অপরদিকে ভারতের হাতে রয়েছে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার পাল্লার মিসাইল। এই মিসাইল একটি পরমাণু বোমা বহন করতে সক্ষম। সম্প্রতি চীন একটি সর্বাধুনিক ডেস্ট্রয়ার তৈরি করেছে। সশস্ত্র অবস্থায় এর ওজন ১২ হাজার টন।

বিশাল এই যুদ্ধ জাহাজ ৫০টি ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য মিসাইল, জাহাজবিধ্বংসী মিসাইল ও বিমানবিধ্বংসী মিসাইল বহন করবে। এই যুদ্ধজাহাজকে পেন্টাগন দানব যুদ্ধজাহাজের স্বীকৃতি দিয়েছে। এই যুদ্ধজাহাজকে পাহারা দেওয়ার জন্য একাধিক যুদ্ধজাহাজের প্রয়োজন হবে। যদি কোনোক্রমে ভারত ও চীন সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে তাহলে বিশ্বশান্তি বিঘিœত হবে।

সৈয়দ রশিদ আলম: নিরাপত্তা বিশ্লেষক

ঢাকাটাইমস/২৪জুলাই/এসআরএ/টিএমএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :