এমপিওভুক্তির আট দিন পর স্কুলঘর নির্মাণের প্রস্তুতি!

ফরহাদ খান, নড়াইল
 | প্রকাশিত : ০৩ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:৪৬
স্কুলের জরাজীর্ণ পুরোনো ঘর এবং পাশে নতুন ভবন তৈরির প্রস্তুতি

এমপিওভুক্তির আট দিন পর ঝোঁপজঙ্গল পরিষ্কার করে ঘর নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে নড়াইলের নড়াগাতি থানার চান্দেরচর এলাকার পঞ্চগ্রাম নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়েছে এই কার্যক্রম।

সরেজমিনে দেখা যায়, চাষকৃত নেপিয়ার ঘাস, কলাগাছসহ ঝোঁপজঙ্গল কেটে পরিষ্কার করা হচ্ছে বিদ্যালয়ের ঘর নির্মাণের জন্য। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি চান্দেরচর গ্রামের আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থলে হাজির হন। তিনি জানান, দুই একদিনের মধ্যে ঘর নির্মাণ হয়ে যাবে। বিদ্যালয়ের জন্য ৭৫ শতক জমি অনেক আগেই কেনা হয়েছে। এটি ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। শিক্ষকের সংখ্যা সাত। এখানে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির কার্যক্রম চালু রয়েছে।

এতদিনেও বিদ্যালয়ের অবকাঠামো বা ঘর নির্মাণ করা হয়নি কেন? আর ঘর না থাকলে শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলে কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যালয় সভাপতি আসাদুজ্জামান কিছুটা বিব্রত। তিনি দাবি করেন, পাশের একটা টিনের ঘরে এতদিন ক্লাস হয়েছে। ঘর নির্মাণের পর এখানে ক্লাস হবে।

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২০০৫ সালে পঞ্চগ্রাম নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর মাউলী ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনের (সাবেক) পাশে টিনের খুড়পিঘর রয়েছে। ভেতরে তিনটি কক্ষের মধ্যে দুই-তিনটি করে বেঞ্চ রয়েছে। খুড়পি ঘরের পেছনে ঘন বনজঙ্গল থাকায় ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ঘরটিতে তেমন জানালা ও দরজা নেই। স্যাঁতস্যাঁতে ও নোংরা পরিবেশ। এখানে শিক্ষার্থীরাও ঠিকমত উপস্থিত হয় না। শিক্ষকদের বসার চেয়ার-টেবিলও নেই। প্রধান শিক্ষকের জন্য একটি টেবিল থাকলেও তা পায়া ভাঙা অবস্থায় আছে।

খাতা-কলমে সাতজন শিক্ষকের নাম উল্লেখ থাকলেও বিদ্যালয়ে তাদের দেখা মেলে না। অনেকে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি করেন। তবে এমপিওভুক্তর খবরে অনেকে বিদ্যালয়ে আসতে শুরু করেছেন। তবুও বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষকসহ অনেক শিক্ষককে বিদ্যালয়ে দেখা যায়নি। এক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের সভাপতি জানান, অফিসের কাজে প্রধান শিক্ষক কালিয়া উপজেলায় গেছেন।

এ ব্যাপারে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকেরা জানান, এমপিওভুক্তর জন্য যে চারটি শর্ত দেয়া হয়েছিল; এর মধ্যে প্রতিষ্ঠান ‘স্বীকৃতি’ থাকা অন্যতম। স্বীকৃতির নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমিতে উপযুক্ত ভৌত অবকাঠামো নিশ্চিতকরণ, প্রতিষ্ঠানের নামজারি, জমিসংক্রান্ত সব তথ্যের মূল কপি যাচাই-বাছাই কমিটিকে প্রদর্শন, ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা অনুযায়ী ক্লাসরুমের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, শিক্ষক, ফলাফল, বিশুদ্ধ খাবারপানি, শৌচাগার, জনসংখ্যা, নিকটবর্তী প্রতিষ্ঠানের ভৌগলিক দূরত্ব অন্যতম। অথচ নড়াইলের এই বিদ্যালয়ের নিজস্ব জমিতে উপযুক্ত ভৌত অবকাঠামো, ক্লাসরুম, শিক্ষকসহ অনেক কিছু অপূর্ণ রয়েছে। তবুও গত ২৩ অক্টোবর ঘোষিত এমপিওভুক্তির তালিকায় আছে এই বিদ্যালয়টি।

অথচ কালিয়া উপজেলাধীন নড়াগাতি ও কালিয়া থানা এলাকায় অনেক যোগ্য স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা থাকা সত্ত্বেও এমপিওভুক্ত করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, পরিচালনা পর্ষদ ও এলাকাবাসী। স্থানীয়রা জানান, কালিয়া উপজেলায় এমপিওভুক্ত হওয়ার মতো যোগ্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেগুলো না করে অবকাঠামোসহ অনেক ক্ষেত্রে অপূর্ণ; পঞ্চগ্রাম নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। যে প্রতিষ্ঠানে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা আগে কিছু কার্যক্রম চোখে পড়েছে। এমন দুর্বল প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ায় এলাকাবাসী বিস্ময় প্রকাশ করেন।

এদিকে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থিত নড়াগাতি থানার মাউলী পঞ্চপল্লী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১৮৫ জন এবং নবম ও দশম শ্রেণিতে ৯৩ ছাত্রছাত্রী রয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, শিক্ষকদের নিয়মিত পাঠাদান, জেএসসিতে ভালো ফলাফল, সহশিক্ষা কার্যক্রমসহ এমপিওভুক্তর সব শর্ত ঠিক থাকলেও বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হুদার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, এমপিওভুক্তির বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এখানে আমাদের করার কিছু থাকে না।

(ঢাকাটাইমস/০৩নভেম্বর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :