কুমিল্লা উত্তর আ.লীগ: ত্যাগী নেতাদের নেতৃত্বে চান নেতাকর্মীরা

কুমিল্লা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৬:০২ | প্রকাশিত : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৫:২৩
ছবিতে বা থেকে জাহাঙ্গীর আলম সরকার, ম. রুহুল আমিন, রোশন আলী মাস্টার ও এম হুমায়ুন মাহমুদ।

দুয়ারে কড়া নাড়ছে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। বাকি আছে চারদিন। সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার অন্ত নেই। অপেক্ষা নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীরা কাটাচ্ছেন ব্যস্ত সময়। পদ পেতে চলছে জোর চেষ্টা-তদবির। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন তারা। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি, ত্যাগী, পরীক্ষিত ও কর্মীবান্ধব নেতাদের শীর্ষ দুই পদে দেখতে চান তারা।

আগামী ৯ ডিসেম্বর জেলার চান্দিনা মহিলা কলেজ মাঠে কুমিল্লা উত্তর জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। এছাড়া দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমসহ কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

১৯৯২ সালে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলাকে সাংগঠনিকভাবে দুই ভাগে ভাগ করে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কুমিল্লা উত্তরের সাতটি উপজেলা ও পাঁচটি সংসদীয় আসন নিয়ে রাজনৈতিক উত্তর জেলা। আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। এটিকে সামনে রেখে সারা দেশের মতো কুমিল্লা উত্তর জেলা এবং সব উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির কাউন্সিল শেষ করতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো তৃণমূলের অনেক কমিটি গঠন বা অনুমোদন হয়নি।

ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদে কারা আসছেন, এ নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। পুরনোদের বৃত্তেই কি থাকবে কমিটি, নাকি নতুন মুখ আসবে-এনিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে আছে নানা গুঞ্জন। দলের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদপ্রত্যাশীরা এখন কেন্দ্রে বিভিন্ন নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। ব্যস্ত সময় পার করছেন চেষ্টা-তদবিরে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনার শীর্ষে আছেন চারজন। সভাপতি পদ পেতে চান দুজন। তারা হলেন, বর্তমান কমিটিসহ তিনবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক ম. রুহুল আমিন।

অপর দিকে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নেতা শিল্পপতি মো. রোশন আলী মাস্টার। তিনি কর্মী অন্তপ্রাণ ও সজ্জন। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও কর্মীবান্ধব মনোভাবের কারণে তিনি নেতাকর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতায় এগিয়ে আছেন। আসছে সম্মেলনে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করতে চায়। দলের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা হিসেবে রোশন আলী মাস্টার বিভিন্ন সময় নিজের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন। বিএনপি জামায়াত-জোট সরকার ক্ষমতায় থাকতে অসংখ্যবার তার ওপর হামলা হয়েছে। দুই ডজনের বেশি মামলায় আসামি করা হয়েছে তাকে। কারাগারে গিয়েছেন। এসবই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে।

এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে চান বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব অধ্যক্ষ এম হুমায়ুন মাহমুদ। তার অনুগামী ও অনুসারীরা আগামী সম্মেলনে তাকে এগিয়ে রাখছেন।

দলীয় নেতকর্মীরা জানান, সম্মেলনকে সফল করতে এরই মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তারা প্রত্যাশা করেন এবারের সম্মেলনে তৃণমূলের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে। আগামী তিন বছরের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে এবং তাদের নেতৃত্বে দল এগিয়ে যাবে।

জেলা আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘সম্মেলনকে সামনে রেখে অনেকেই পদ পেতে চেষ্টা তদবির করছেন। তা তারা করতে পারেন। কিন্তু নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই ত্যাগ ও পরীক্ষিত নেতাদের প্রাধান্য দিতে হবে। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে অনেকেই সুবিধাবাদীর মতো আচরণ করেছেন। দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেননি। গা বাঁচিয়ে চলেছেন। কিন্তু ব্যতিক্রমীদের মধ্যে রোশন আলী মাস্টার অন্যতম। ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে তাকে। কারাগারে গিয়েছেন। দলের দুঃসময়ে যিনি নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন, তাকে মূল্যায়ন করা হলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা খুশি হবে।’

দলীয় সূত্র জানায়, দলের তরুণ নেতাকর্মীদের মধ্যেও রোশন আলী মাস্টারের জনপ্রিয়তা বেশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তারা এ বিষয়ে সরব হয়েছে। তারা আশা করেন, ৯ ডিসেম্বরের সম্মেলনে তাদের প্রত্যাশার প্রাপ্তি হবে।

জানতে চাইলে রোশন আলী মাস্টার বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে অনেক নির্যাতন হয়েছে। ২০০৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিএনপি ক্যাডারদের সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি। বিএনপি আমলে অপারেশন ক্লিনহার্টের সময় তিনদিন এবং এক-এগারোর সময় ১৮ দিন আইন শৃৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর নির্যাতন সহ্য করেছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ এবং আওয়ামী লীগের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়নি। আসছে সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পেলে আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার আস্থা এবং বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে পারবো বলে মনে করি।

বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, ‘গত ২৭ বছর ধরে দলের জন্য কাজ করছি। কর্মীদের দুঃসময়ে পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আশা করি নেত্রী আমাকে হতাশ করবেন না।’

কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নজামুল হক বলেন, ‘বিগত সময়ে দলের জন্য যারা হয়রানি হয়েছে, মামলা হামলার শিকার হয়েছেন, তাদের তথ্য মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চয়ই জানেন। তিনি ত্যাগীদের মূল্যায়ন করবেন বলে আশা করি। পরীক্ষিত নেতারা দায়িত্ব পেলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ভালো থাকবে।’

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক মু. রুহুল আমিন বলেন, ‘একটি সফল ও স্বার্থক সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা প্রস্তুতি আছি। আসন্ন সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ যোগ্য নেতৃত্ব পাবে বলে আশা করি।’

ঢাকাটাইমস/৪ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/এইচএফ

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে: বিএনপির আরও ৫ নেতা বহিষ্কার

সরকারকে পরাজয় বরণ করতেই হবে: মির্জা ফখরুল

এমপি-মন্ত্রীর স্বজন কারা, সংজ্ঞা নিয়ে ধোঁয়াশায় আ.লীগ

মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে ব্যবস্থা: ওবায়দুল কাদের

স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির আরও এক নেতা বহিষ্কার 

দেশ গরমে পুড়ছে, সরকার মিথ্যা উন্নয়নের বাঁশি বাজাচ্ছে: এবি পার্টি

বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদ সালাম-মজনুর

নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে রিজভীর নেতৃত্বে মিছিল

মন্দিরে আগুন ও দুই শ্রমিক পিটিয়ে হত্যায় বিএনপির উদ্বেগ, তদন্ত কমিটি গঠন

প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় এদেশে আইনের প্রয়োগ হয়: রিজভী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :