জামিনের চেষ্টায় ফারমার্স ব্যাংক লুটেরা বাবা-ছেলে

প্রায় ১৮’শ কোটি টাকা লুটপাটের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড) অডিট ও ইসি কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী এবং তার ছেলে ব্যাংকের সাবেক শেয়ারহোল্ডার রাশেদুল হক চিশতী জামিন লাভের জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করে তারা জামিন লাভের তোড়জোড় চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বাবুল চিশতী, তার ছেলে রাশেদুল হক চিশতীসহ তাদের পরিবার ও স্বজনদের বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব মামলায় ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল থেকে বাবুল চিশতী ও রাশেদ চিশতী কারাগারে আটক আছেন।
অভিযোগ রয়েছে, বাবুল চিশতী ও রাশেদ চিশতী ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে কৌশলে প্রায় ১৮শ' কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব টাকায় কেনা স্থাবর সম্পদের বাজারমূল্য দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকারও বেশি। আদালতের নির্দেশে এসব সম্পত্তি ইতিমধ্যে জব্দ করা হয়েছে। আসামিরা জামিন পেলে জব্দ করা সম্পত্তি বেহাত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
দুর্নীতির এই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা করেছে দুদক। এগুলোর মধ্যে পাঁচটি দুর্নীতি মামলা রয়েছে রাশেদুল হকের বিরুদ্ধে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে চলমান অধস্তন ভার্চুয়াল আদালতে মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে সব মামলায়ই জামিন হয়েছে এই রাশেদুল হকের।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এ ধরনের রাষ্ট্রীয় আর্থিক ক্ষতির সঙ্গে যারা জড়িত, তারা সব সময়ই খুব শক্তিশালী হন। করোনা পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল আদালত চালু হওয়ার পরে তারা এর সুযোগ নিয়েছেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে।
মাহবুবে আলম বলেন, ‘ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারি সঙ্গে যারা জড়িতরা জামিনে বের হয়ে যেতে নানা রকম চেষ্টা করছে এজন্য রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে সবসময়ই হুঁশিয়ার থাকতে হচ্ছে।
ফারমার্স ব্যাংক ২০১২ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম শুরুর পরই অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। আস্থার সংকট তৈরি হলে আমানতকারীদের অর্থ তোলার চাপ বাড়ে। পরিস্থিতির অবনতি হলে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে বাধ্য হন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতি। পরিচালকের পদ থেকেও পদত্যাগ করেন তারা। পরে বাবুল চিশতি ও রাশেদ চিশতিসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যাংকারের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করে দুদক। অবশ্য কোনো মামলায় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে আসামি করা হয়নি।
রাশেদ চিশতীর বিরুদ্ধে ঢাকায় চারটি এবং টাঙ্গাইলে একটি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে গত ১৮ ও ১৯ মে ঢাকার চারটি মামলায় এবং ২৭ মে টাঙ্গাইলের মামলায় জামিন পান তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, টাঙ্গাইলের ভার্চুয়াল আদালত দুদকের বক্তব্য না শুনেই রাশেদ চিশতীর জামিন মঞ্জুর করেছে। এর বিরুদ্ধে দুদক হাইকোর্টে রিভিশনও দায়ের করে। গত ২ জুন ওই জামিন বাতিল করে ফের টাঙ্গাইল আদালতে পুনঃশুনানির নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এছাড়া ঢাকার তিনটি মামলায় হাইকোর্ট রাশেদুল হকের জামিন বহাল রাখলেও তার বিরুদ্ধে আপিল করেছে দুদক। আগামীকাল মঙ্গলবার আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল চেম্বার আদালতে এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আকবর আলী খান বলেন, টাঙ্গাইলে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রাশেদ চিশতীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ওই মামলায় গত ২৭ মে রাষ্ট্রপক্ষে আমি জামিনের বিরোধিতা করি। কিন্তু আদালত তাকে জামিন দিয়েছিলেন। অবশ্য হাইকোর্ট ওই জামিন বাতিল করে দুদকের উপস্থিতিতে ফের শুনানির জন্য টাঙ্গাইল আদালতকে নির্দেশ দিয়েছে।
দুদকের আইনজীবী মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান বলেন, দুদক থেকে প্রতিটি মামলায় হাইকোর্টে আপিল করা হয়েছে। যার মধ্যে টাঙ্গাইলে মামলায় তার জামিন স্থগিত করা হয়েছে। অপর একটি মামলায় আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু না হওয়া পর্যন্ত তার জামিন স্থগিত রয়েছে। অপর তিনটি মামলায় দুদক এরই মধ্যে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেছে।
জানা যায়, রাশেদ চিশতির মামলাটি উচ্চ আদালতে সিরাজুল হক এসোসিয়েটসের চেম্বার থেকে পরিচালনা করা হচ্ছে। মামলার ফাইলিং আইনজীবী শাহরিয়ার কবির বিপ্লব বলেন, 'রাশেদ চিশতি কোনো অপরাধ করেননি। তারপরেও তার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা হয়েছে। এ সব মামলায় যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ তার বিরুদ্ধে যেসব অর্থপাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে, তা ২০১৩ সাল থেকেই তার সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ রয়েছে।’
দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসামিরা বিত্তশালী। করোনা পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল আদালতের সীমাবদ্ধতাকে তারা কাজে লাগিয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে রাশেদুল হকের জামিন বাতিলে সবধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/০৮জুন/জেবি)

মন্তব্য করুন