কবিতা

কবির গল্প

ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া
  প্রকাশিত : ১৪ এপ্রিল ২০২২, ১২:২৯
অ- অ+

মজলিশে তার আগমন না, এ যেন আবির্ভাব ঘটলো।

উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে কবি বললেন,

“আপনার শুভাগমনে আমরা আনন্দে এতোটাই উথলিত উদ্বেল,

যেন আনন্দরাই বাইরে আছে; নিরানন্দদের হয়ে গেছে ছ’মাসের জেল।”

তিনি তাচ্ছিল্যের ঢঙে ভারিক্কি চালে বললেন,

‘আমি ভাই কবিতা-টবিতা, নাটক-ফাটক ওসব বুঝিনা।

যাকগে, ভালো আছেন তো সবাই?’

কবি বললেন, ‘জ্বি, আমরা সবাই ভালো;

তো আপনি, আপনার আব্বা-টাব্বা, আম্মা-টাম্মা

সকলেই কুশল-টুশলে আছেন তো আশা করি!’

আর যায় কোথায়!

সর্বনাশা ডাইনিরও দু’চারখানা নখ ভাঙ্গা থাকতে পারে;

আজ সেই আশংকাও নেই।

পুরো কুড়ি নখরের বিষাক্ত আঘাতে ক্রোধের ডাইনি

নির্ঘাত ছিন্ন-ভিন্ন করে খাবে কবির নাজুক বদন।

আজই-যে ইস্রাফিলের শিঙায় ফুঁ দেবার দিন,

কেয়ামত এসে দাঁড়িয়েছে ঘরের চৌকাঠ অবধি--

তা মনা পাগলার মতো হাবারও আর বুঝতে বাকি থাকল না।

কবিদেরকে তাদের উপস্থিতে বলা হয়--

তারা হলেন একান্ত সহজ-সরল-সজ্জন নির্মোহ ব্যক্তি,

নিরহংকার, গোবেচারা, নিরেট ভদ্দরলোক, পরম সম্মানীয়,

পার্থিব লোভের লাভা তাদের কাছে ঘেঁষবার মতো দুঃসাহসও করে না।

আর অগোচরে বলে, ‘ভাতে মরা কবি;

আউলা ঝাউলা বাউলা লোক।’

সেই গোবেচারা কবির অবস্থা আজ ক্ষুধার্থ নেকড়ের সামনে

নিরূপায় শিকারের মতো।

এর নাজুক ঘাড় মটকে দেবার জন্য একটা সিকি নেতার

অঙ্গুলি হেলনই যথেষ্ট।

মোসাহেব গোছের একজন তেড়ে এসে বললেন,

‘এইডা তুই কী কইলি পুঙির পূত?’

কিন্তু কবিকে তুই-তোকারি করায় পরিবেশ খানিকটা বিগড়ে গেলো।

উপস্থিতে চাঞ্চল্য এলো, দর্শক শ্রোতারা তেতে উঠলো।

বড়ো ভাই চতুর বুদ্ধিমান; পরিস্থিতির গোঁ বুঝতে পারেন আগেভাগেই;

যেমন শকুন সুদূর থেকে মড়ার গন্ধ পায় তার তীক্ষ্ণ ঘ্রাণ ইন্দ্রিয়ের প্রাখুর্যে।

পণ্ডিত জেঠা সাহস করে বললেন, “এই কবিয়াল,

তুমি যে বড়ো মিয়ারে তার আব্বা-টাব্বা, আম্মা-টাম্মার কুশল জিগাইলা,

এইডা কি একটা ভদ্দ-সমাজের জবান অইলো?”

কবি বললেন, ‘ঠিকই বলছেন জেঠা; আমার ঐ বুলিটা

কবিতা-টবিতা আর নাটক-ফাটকের মতোই হলো।’

বড়ো ভাই মুখে একটা কৃত্রিম হাসির রেশ ধরে রেখে বললেন,

‘আরে বাদ দাও, “আমিও মজা করছি, হে-ও মজা করছে;

ভুলা যাও, চলো কাজের কোথায় আসি।”

দাঁত খিঁচিয়ে শুধু বিড়-বিড় করে বললো,

“ছোটলোকের বিষ দাঁতে, খান্দানির বিষ আঁতে।”

দিন যায়, হপ্তা যায়, মাস যায়

এই সামান্য ঘটনাটা বেমালুম সব্বাই ভুলে যায়।

তবে, মাস তিনেক বাদে সেই অভাগা কবির লাশ

কৈয়নি জলার কচুরিপানার ডোবায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।

হাহাকারে ভরা সেই হাওড়ের বেহাগ বাতাস

হু-হু করে বয়ে যেতে যেতে বলে,

" কবি উচ্চারণে সত্য, যে সত্য প্রকাশের শাবলে খোঁড়ে সে স্বখাত,

কবির মৃত্যুতে মরে না কবি, কবিতার আবেদনও হয় না নিপাত।"

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
‘ধামাকা শপিং’-এর চেয়ারম্যান এম আলীকে ধরে থানায় দিল জনতা
তারেক রহমানকে শরণখোলা বিএনপির নেতাদের চিঠি, কাউন্সিলে আঞ্জুমান আরার প্রার্থীতা বাতিলের দাবি
সনাতনী জনগণের মাঝে বিএনপির বার্তা পৌঁছে দিলেন কাজী আলাউদ্দিন
বিচার সংস্কার ও নতুন সংবিধানের মাধ্যমেই দেশ পুনর্গঠন করতে হবে: নাহিদ ইসলাম
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা