বছরের পর বছর আর্সেনিক আক্রান্ত চুয়াডাঙ্গার মানুষ, নেই প্রতিকার

আহসান আলম, চুয়াডাঙ্গা
  প্রকাশিত : ২৭ মে ২০২২, ১৭:১৭
অ- অ+

চুয়াডাঙ্গার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে আর্সেনিকে ছেয়ে গেছে। পানিবাহিত এ রোগের ভয়াবহতা এতোই যে, আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে অনেকে হারিয়েছেন একটি প্রজন্ম, কেউবা আবার হারিয়েছেন আপনজনদের।

যুগের পর যুগ এর কোনো প্রতিকার না পেয়ে আর্সেনিকে আক্রান্ত ও মৃত্যু যেন হয়ে গেছে স্বাভাবিক বিষয়। এরপরও টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের। আর্সেনিকের কোনো তথ্যও জানা নেই জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের।

যদিও প্রশাসন বলছে, আর্সেনিকপ্রবণ এলাকায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিভাগ বলছে, জেলার ২৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে। ৮০ থেকে শতভাগ আর্সেনিক আক্রান্ত গ্রামের সংখ্যা ২৯টি। আর ৫০ শতাংশ আর্সেনিক আক্রান্ত গ্রামের সংখ্যা ১৭৫টি।

২০০৩ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর চুয়াডাঙ্গা জেলার আর্সেনিক পরিস্থিতির ওপর শেষ জরিপ চালায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, ১৫ বছর কোনো জরিপ না হওয়ায় ওষুধ ও নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আর্সেনিক আক্রান্তরা।

আর্সেনিক নামক নীরব ঘাতক কেড়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিহি কৃষ্ণপুর গ্রামের অর্ধশত মানুষের প্রাণ। নিকটজন হারিয়ে শোকে পাথর হয়েছে স্বজন, শুকিয়েছে তাদের চোখের পানি তবুও কমেনি মৃত্যুর হার। জেলার চার উপজেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের অভিশাপ এই পানিবাহিত রোগ আর্সেনিক। আর্সেনিকে আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষ। মৃত্যুও থেমে নেই। এ যেন যুগে যুগে টিকে থাকা মহামারী। যুগের পর যুগ আর্সেনিকের এমন প্রকোপে ঘুম ভাঙেনি কারও। চুয়াডাঙ্গার ৪ উপজেলার কোনো না কোনো গ্রামে আর্সেনিকের প্রকোপ আছেই। জেলাজুড়েই এ সমস্যা রয়েছে। তবুও নেই কোনো সমাধান। বারবার শুধু প্রতিশ্রুতিই পেয়েছে ভুক্তভোগীরা, পায়নি কোনো প্রতিকার। আর্সেনিকে ডুবে থাকা গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষরা বলছেন, এত বছর পর এ যুগে এসে আর্সেনিকের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। দেশের সব কিছুতে উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু আমাদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয় না। তাদের একটাই দাবি এলাকায় সুপেয় পানির সুব্যবস্থা করা।

ডিহি কৃষ্ণপুর গ্রামের সাঈদ হোসেন জানান, এলাকায় কোথায় আর্সেনিক মুক্ত স্থান নেই। যতই গভীর নলকূপ বসানো হোক না কেন সবখানেই আর্সেনিকের অস্তিত্ব রয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই পানির নামে বিষ খেতে হয়।

একই গ্রামের রবিউল আলম বলেন, আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে আমার বাবা-চাচাসহ পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আরেক চাচা বর্তমানে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর্সেনিক পুরো পরিবারকে শেষ করে দিল।

জীবননগরের মিনাজপুরের শেফালি বেগম বলেন, আর্সেনিকযুক্ত পানি ছাড়া কোথাও পানি পাওয়া যায় না। তাই এই পানি পান করতে হয়। এই পানি দিয়েই কাজ সারতে হয়।

আর্সেনিক নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা রিসোর নির্বাহী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, চুয়াডাঙ্গার ৮০ শতাংশ গ্রামেই আর্সেনিকের অস্তিত্ব রয়েছে। যার মধ্যে ৫০ শতাংশ এলাকায় মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে। নতুন তথ্য না থাকায় অনেককে শনাক্ত করা যায় না। তাই সমস্যাটি নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই।

আর্সেনিক নিয়ে যাদের কাজ করার কথা, তাদের কাছে নেই জেলার কোনো তথ্য-উপাত্ত। তবে আর্সেনিক নিরসনে চলমান আছে কয়েকটি প্রকল্প।

চুয়াডাঙ্গা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুল হাসান জানান, সর্বশেষ ২০০৩ সালে আর্সেনিকের জরিপ করা হয়েছিল। তারপর থেকে আর কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই। তবে, আর্সেনিক নিরসনে বেশ কিছু প্রকল্প শুরু হয়েছে। সেসব কাজ শেষ হলেই এ সংকট দূর হবে।

তবে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভূঁইয়ার আশ্বাস, ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই আর্সেনিকপ্রবণ এলাকায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হবে। আর্সেনিকে ক্ষতিগ্রস্তরা বারবার শুধু আশ্বাসে তুষ্ট হতে চান না। সংকট নিরসনে টেকসই ব্যবস্থার দাবি জানান তারা।

(ঢাকাটাইমস/২৭মে/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
টয়োটার ব্যবসা হারাচ্ছে নাভানা?
সারজিস বনাম নওশাদ: ভোটে কার পাল্লা ভারি?
মনোহরদীতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ছাত্রদল নেতা গণধোলাইয়ের শিকার
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদও জয় করব: নাহিদ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা