ডেঙ্গুর চার ধরন একসঙ্গে সক্রিয়
অক্টোবরের রেকর্ড ভাঙছে নভেম্বরে
চলতি মাসের শেষে কমবে ডেঙ্গুর সংক্রমণ—স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না থাকলেও ডেঙ্গু সংক্রমণ তুঙ্গে— বিশেষজ্ঞ মত
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে সারাদেশে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের এ পযস্ত ডেঙ্গুতে মোট ২২০ জন মারা গেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় গত অক্টোবরে। কিন্তু নভেম্বর মাসে সেই রেকর্ডও ভেঙেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআর বলছে, ডেঙ্গুর চারটি ধরন একসাথে সক্রিয় থাকায়, এবার এত মৃত্যু।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষন করে জানা গেছে, অক্টোবর মাসের ১৮ দিনে ডেঙ্গুতে মারা যায় ৪৪ জন। আর পুরো মাসে মৃত্যু হয় ৮৬ জনের। অক্টোবরে রেকর্ড হয় রোগী ভর্তিতেও। মাসটিতে ভর্তি হয় ২১ হাজার ৯৩২ জন। আর চলতি নভেম্বরের ১৮ দিনেই ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৭৯ জনের। আর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩ হাজার ৫৭৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআর বলছে, ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপ একসঙ্গে সক্রিয় থাকায়, সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। তাই জটিলতা এড়াতে জ্বর আসা মাত্রই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক বিবৃতির তথ্য অনুযায়ী, গত একদিনে আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২২০ জনের মৃত্যু হলো। নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৫০ জন। এদের মধ্যে ঢাকায় ১৭১ জন এবং ঢাকার বাইরে ৭৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।বর্তমানে সারা দেশে ২ হাজার ৭১২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ঢাকার ৫৩টি হাসপাতালে ১ হাজার ৫৩৮ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ১৭৪ জন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃষ্টি হলে বাড়ে ডেঙ্গুবাহী মশার পরিমাণ। এ কারণে শীতে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত কম থাকায় সংক্রমণ কমে। সেপ্টেম্বরে বৃষ্টিপাত এবং অক্টোবরে তাপমাত্রা কমা শুরু হলেই কমে যেত ডেঙ্গুর সংক্রমণ। রাজধানীতে দীর্ঘদিন ধরেই তেমন বৃষ্টি না থাকলেও তুঙ্গে রয়েছে ডেঙ্গু সংক্রমণ।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, এই মাসের শেষের দিকে কমে যাবে ডেঙ্গু সংক্রমণ। শীতের সময় বৃষ্টিপাত কম হবে, এতে ডেঙ্গু মশার জন্ম কমে যাবে।
ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, এবার ভেঙ্গুর ধরন বদলেছে। সাধারণত অক্টোবরের পর ভাইরাসটির প্রকোপ থাকে না। কিন্তু এবার অক্টোবরের পর নভেম্বরেও বেশি। মৃত্যু হচ্ছে। শীতে বৃষ্টিপাত কম হয়, বংশবিস্তার করতে পারে না এডিস মশা। সে ক্ষেত্রে শীতের তীব্রতা বাড়লে আশা করছি ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আসবে। এজন্য আগামী এক সপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, দেশে আসলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ স্থায়ী হতে শুরু করেছে। এজন্য সারা বছরই এডিস মশা নিধন ও মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংসে কর্মসূচি রাখতে হবে।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫১ হাজার ৬০২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। যার মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৩ হাজার ৪৩১ জন এবং ঢাকার বাইরে সারা দেশে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৮ হাজার ১৭১ জন।
একই সময়ে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৪৮ হাজার ৬৭০ জন। এদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে সুস্থ হয়েছেন ৩১ হাজার ৭৬২ জন এবং ঢাকার বাইরে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন ১৬ হাজার ৯০৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৯-এ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন এবং মৃত্যু হয় রেকর্ড ১৮৯ জনের। অর্থাৎ শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ছিল ০.১৮ শতাংশ। অর্থাৎ সে বছর প্রতি এক হাজার রোগীর মধ্যে ১ দশমিক ৮ জন মারা যায়। ডেঙ্গুতে এবার এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে।
এবার রোগী কম হলেও মৃত্যুতে রেকর্ডের শঙ্কা করা হচ্ছে এ কারণে যে, এবার শনাক্তের বিপরীতে মৃত্যুর হার তিন বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ। আর বছরের যে সময়টায় মৃত্যু অস্বাভাবিক, সেখানে প্রতিদিনই বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হচ্ছে।
(ঢাকা টাইমস/১৮নভেম্বর/আরকেএইচ/কেএম)