বঙ্গবন্ধুর শুরু করা ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই আসে স্বাধীনতা: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬:১৩ | প্রকাশিত : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:১২

একাত্তরে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে অর্জিত স্বাধীনতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শুরু করা ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের মাতৃভাষা দিবস। শুধু আমাদের নয় এটা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আর এই মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক’ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মূলত আমাদের ভাষার জন্য আন্দোলন শুরু হয় ১৯৪৮ সাল থেকে। এই আন্দোলনের পথ দিয়েই আমাদের স্বাধীনতা অর্জন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলনের জন্য বারবার কারাবরণ করলেও তার অবদান ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর যে অবদান, সেই অবদানটুকু কিন্তু মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। অনেক বিজ্ঞজন, আমি কারো নাম বলতে চাই না, চিনি তো সবাইকে। অনেকে বলেছেন, ওনার আবার কী অবদান ছিল? উনি তো জেলেই ছিলেন।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জেলে ছিলেন বলে উনার কোনো অবদান নেই? তাহলে উনি জেলে ছিলেন কেন? এই ভাষা আন্দোলন করতে গিয়েই তো তিনি বারবার কারাগারে গিয়েছেন। সেই গুরুত্ব কিন্তু কেউ দিতে চায়নি।’

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টির প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তান নামে একটি দেশ সৃষ্টি হয়েছিল। কালচার সংস্কৃতিতে সব কিছুতেই সম্পূর্ণ ভিন্ন। আর সেই পাকিস্তানি পাঞ্জাবিরাই সবার আগে আমাদের ওপর আঘাত আনতে শুরু করলো। বাংলা বাদ দিয়ে উর্দু ভাষা চাপানোর চেষ্টা করা হলো। ’৪৭ সালে করাচিতে একটা শিক্ষা সম্মেলন হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় বাংলা ভাষা আমাদের বলাই যাবে না। বাংলা বাদ দিয়ে উর্দু ভাষা আমাদের চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়।

তিনি বলেন, আমরা যে বাঙালি আমাদের যে ঐতিহ্য, ভাষা, সংস্কৃতি, একে একে সব ধ্বংস করে দেয়াই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। পাকিস্তানি কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কিন্তু আমাদের আন্দোলন শুরু। সব সময় একটা বৈষম্য আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হতো। সংখ্যায় আমরাই বাঙালিরা বেশি ছিলাম। কিন্তু তারপরও তাদের নির্যাতন-নিপীড়ন আমাদের এই অঞ্চলের মানুষকে বারবার অনেক কষ্ট দিয়েছে।

‘৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র। তিনি গড়ে তুলেছিলেন একটা শক্ত সংগঠন ছাত্রলীগ। এই ছাত্রলীগকে সঙ্গে নিয়েই আরও কয়েকটি সংগঠন, যারা শুরু থেকেই এই বাংলা ভাষার জন্য বিবৃতি দিয়েছেন, বক্তব্য দিয়েছেন এবং দাবি আদায়ের জন্য সকলেই এক হন। ৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে একটি সভা হয়, সেই সভায় সোচ্চার হয় যে রাষ্ট্রভাষা বাংলা পরিষদ গঠন করা হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার জন্য একটি আন্দোলন শুরু হয় সেই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিভিন্ন জেলায় গিয়ে সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করতে শুরু করেন। যতবার যেখানে তিনি জান বারবার তিনি গ্রেপ্তার হন। এরপর ’৪৯ সালে যখন তাকে গ্রেপ্তার করা হয় তখন আর তাকে মুক্তি দেওয়া হয় না। তিনি মুক্তি পান অনেক পরে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পরে ২৭ শে ফেব্রুয়ারি তিনি মুক্তি পান। কিন্তু কারো কাছ থেকেও তিনি যে আন্দোলনের নির্দেশ দিতেন এবং চিকিৎসার জন্য যখন ঢাকা মেডিকেলে আসতেন তখন তার সাথে ছাত্রনেতারা দেখা করতেন।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বায়ান্ন সালে মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার পর ’৫৩ সালে যখন তিনি সর্বপ্রথম একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করেন, সেখানেই দাবি তোলেন একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা করতে হবে এবং শহীদদের প্রতি সম্মান দিতে হবে। এরপর ’৫৪ সালে নির্বাচন, সে নির্বাচনটা বেশিদিন টেকেনি। এরপর ’৫৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র যখন রচনা হয় তখনই উর্দুর সাথে বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শহীদ মিনার তৈরি করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ঘোষণা দিয়ে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। সেখানে ছুটি দেওয়া হয়।

বক্তব্যে বাঙালি জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমাদের জন্য সব থেকে কলঙ্কময় অধ্যায়। সেটাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। একই সাথে আমি হারিয়েছি আমার মা, আমার ছোট ভাইসহ আত্মীয় পরিবার-পরিজনকে। খুনিরা এখানেই ঠিক থেমে থাকেনি। ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারের জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সুন্দরভাবে বিকশিত করার চেষ্টা চালায় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাঙালি, বাঙালি হিসেবেই মাথা উঁচু করে এগিয়ে চলবো। আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি কাজেই এই বাংলাদেশকে আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যাব উন্নয়নের পথে। ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিন বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় ছিলেন। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে একটি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলে জাতিসংঘ থেকে স্বীকৃতি এনে দিয়েছিলেন। ১২৩টি দেশের স্বীকৃতি প্রত্যেকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ বাংলাদেশকে একটা উচ্চ মর্যাদায় নিয়ে গিয়েছিল। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট আমাদের সেই মর্যাদাটা ভূলুণ্ঠিত হয়ে যায়। যার ২১ বছর পর আমরা সরকারে আসি। প্রথম পাঁচ বছর যতোটুকু পেরেছি করেছি এবং দ্বিতীয়বার থেকে শুরু করে পরপর তিনবার সরকারে আসার ফলে আজকের বাংলাদেশ আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এখন আর আমাদের কেউ পেছনে টানতে পারে না। সাত মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে। আর একুশে ফেব্রুয়ারি তো এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

তিনি একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি অর্জনে কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশি সালাম ও রফিক এবং ‘ভালবাসি মাতৃভাষা’ নামক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উল্লেখ করেন। তাঁদের এবং আওয়ামী লীগ সরকারের জোর প্রচেষ্টাতেই ইউনেস্কো অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘শহীদের রক্ত কখনো বৃথা যায় না, বৃথা যায়নি। যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের সেই অবদান আমরা সবসময় স্মরণ করি।’

একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণিজনদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন অনেক গুণিজন রয়েছেন যাদের অনেকে নামটি পর্যন্ত জানে না এই পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে তাদের অবদানকেই সকলের সামনে নিয়ে আসায় তাঁর সরকারের প্রচেষ্টা। এজন্য সম্মাননা প্রাপ্তদের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, আমি আশা করি আমাদের নতুন প্রজন্মও এভাবে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। কারণ, গুণিজনদের পদাংক অনুসরণ করেই আমাদের দেশকে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা আমাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেব কিন্তু আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব এবং আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ আমরা গড়ে তুলব।

(ঢাকাটাইমস/২০ফেব্রুয়ারি/কেআর/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :