নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সড়কের দুপাশ দখলের উৎসব! রোগী-পথচারীদের দুর্ভোগ

মো. মিজানুর রহমান রিয়াদ, নোয়াখালী
 | প্রকাশিত : ০৯ মার্চ ২০২৩, ১২:০৮

দেখে কখনও মনে হবে সিএনজি স্ট্যান্ড বা মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের নিরাপদ স্থান অথবা ব্যক্তিগত কোনো জায়গা। কাঁচা বাজার ভাবলেও ভুল হবে না কারোই। এমনই অবস্থা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক কিলোমটার সড়কের। প্রধান সড়কের সুধারাম মডেল থানার সম্মুখে দিয়ে যাওয়া সড়কটির দুই পাশে চলছে দখলের মহা-উৎসব। ফুটপাত ব্যবহার করে গড়ে উঠেছে মোটরগ্যারেজ, মুদি-মনোহরি দোকানি আর ভ্রাম্যমাণ হকাররা তো আছেই। সড়কের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে থাকে যানজট। ফলে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের প্রতিনিয়তই বিপাকে পড়তে হচ্ছে, ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ওই সড়কে থাকা বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে সেবা প্রত্যাশী ও পৌরবাসী। প্রশাসন বলছে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে চালানো হবে উচ্ছেদ অভিযান।

হাসপাতাল সড়কটি ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কের কোল ঘেষেই শুরু হয় হাসপাতাল সড়কটির দুই পাশে দখল উৎসব। কোথাও সড়কেই বসেছে সিএনজি স্ট্যান্ড, ফল, সবজির দোকান। সড়কে ব্যক্তিগত জায়গা মনে করে কোথাও চলছে ট্রাক-লরি থেকে মালমাল উঠানো-নামানোর কাজ। আবার ওই মালামাল রাখা হচ্ছে সড়ক দখল করেই। আবার সড়কেই পার্কিং করা হয়েছে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় গাড়ি, রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। ফলে এ সড়কে প্রতিনিয়ত তীব্র যানজট লেগে থাকে। হকারদের ভ্যানগাড়ি ও খুপড়ি দোকানে ভরে গেছে ফুটপাত। ড্রেনের উপর মানুষের চলাচলের জন্য দেয়া স্লোভগুলো দোকানিদের দখলে, দখলদাররা বলছে প্রশাসন তাদের সরিয়ে দেওয়ার পর তার আবার পুনরায় এসে বসে যায়। দ্রুত উচ্ছেদ অভিযানে মিলতে পারে জনসাধারনের ভোগান্তি। এতে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাসপাতালে আসা রোগি, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, পৌর নাগরিক ও কর্মব্যস্ত মানুষগুলোকে। ঘটছে ছোটখাট দুর্ঘটনাও।

শুধু হাসপাতাল সড়কটি দখলে তা নয়। হাসপাতালের সীমানা দেয়াল ঘেষেই চলছে দখল। হাসপাতালের প্রধান গেইটের দুই পাশের দেয়ালে রয়েছে অর্ধশতাধিক দোকান। প্রধান গেইটে দেওয়া হয়েছে একটি মাংসের দোকান, যার রক্ত ও মাংসের গন্ধে সারাক্ষণ জমে থাকে মাছি। এতে দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। হাসপাতালের ভেতরে জায়গা দখল করে করা হয়েছে মোটরসাইকেল গ্যারেজ ও একটি টং দোকান।

লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থেকে অসুস্থ্য মাকে চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে আনা ওমর ফারুক বলেন, গত শনিবার তার বৃদ্ধ মা হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে চন্দ্রগঞ্জ থেকে সিএনজি যোগে উনাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। কিন্তু মাইজদী প্রধান সড়ক দিয়ে প্রবেশের পর পড়েন জ্যামে। ওই জ্যাম থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত আসতে প্রায় আধা ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায়। এতে তার অসুস্থ মা অনেক কষ্ট পেয়েছেন। রাস্তার দু’পাশ দখলের কারণে গাড়ি চলাচলের জন্য জায়গা কমে গেছে, যার ফলে এ জ্যামের সৃষ্টি হয়।

মনির হোসেন নামের একজন পথচারি বলেন, হাসপাতাল সড়কটি যেন দখলদারদের সম্পত্তি। যে যার মতো করে সড়কের দুইপাশে দোকান নিয়ে বসে আছে, যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারন মানুষ ও পথচারিদের। অথচ এ পথ দিয়ে প্রতিদিন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান ও প্রশাসনের লোকজন যাতায়ত করেন। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে সরকারি জায়গা ও ফুতপাত এভাবে দখল করে এটা সাধারন মানুষের প্রশ্ন থেকে যায়।

স্থানীয়রা বলছেন, বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালালেও তা স্থানীয় হয়না ৫-১০দিনের বেশি। এরপর পুনঃরায় একই চিত্র চলে দখলের মহা উৎসব। লোক দেখানো অভিযান না চালিয়ে স্থায়ীভাবে এসব অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সড়কটি দখলমুক্ত করার দাবী সবার।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন হাসপাতালের দেয়াল ঘেসে গড়ে উঠা অবৈধ দোকানের কথা স্বীকার করে বলেন, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। হাসপাতালে সেবা প্রত্যাশিদের কথা মাথায় রেখে এ বিষয়ে পৌরসভার মেয়র ও জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিনি জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। এসব দখলদারদের কারনে ওই সড়কে চলাচল করা মানুষজনকে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হয়। দখলদারদের তাদের স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিতে মাইকিং করে নোটিশ করা হবে। নির্দিষ্ট সময় পর ওইসব স্থাপনার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।

(ঢাকাটাইমস/৯মার্চ/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :