আসছে বাজেট ২০২৩-২৪

সরকারকে ঋণ নিতে হবে আড়াই লাখ কোটি টাকা

রুদ্র রাসেল, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩০ মে ২০২৩, ১১:১৫ | প্রকাশিত : ৩০ মে ২০২৩, ০৮:১৯

আগামী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ভোটের বছরের এ বাজেট চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৮৩ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বেশি। ইতোমধ্যেই বাজেটের সারসংক্ষেপ অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রস্তাবিত বাজেটের স্বপক্ষে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান আকার এবং বর্তমান চাহিদা বিবেচনায় কম আয়ে বেশি ব্যয়ের এই বাজেট বাস্তবায়ন করে সব লক্ষ্যই অর্জন করা সম্ভব।’

তবে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সহজ হবে না। কারণ, নির্বাচনী বছরে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে।’

বাজেটের সারসংক্ষেপের তথ্য বলছে, সম্ভাব্য প্রস্তাবিত এই বাজেটে সরকারি আয়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এ লক্ষ্যমাত্রা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১০ শতাংশের সমান এবং চলতি অর্থবছরের মূল্য লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে বাজেটের সারসংক্ষেপে মোট ঘাটতি নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ৩৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশের সমান। ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রী অর্থ সংগ্রহের দুটি উৎস খাত চিহ্নিত করেছেন। একই সঙ্গে কোন উৎস থেকে কত টাকা তিনি ঋণ করবেন, তাও ঠিক করা হয়েছে।

বাজেটের সারসংক্ষেপ থেকে জানা গেছে, ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থমন্ত্রী মোট ১ লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছেন। এটা মোট ঘাটতি অর্থায়নের ৫৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এ পরিমাণ অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে তিনি ঋণ নিতে চান ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি, আর সঞ্চয়পত্র থেকে নেবেন ২৩ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১ লাখ ১০ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা নেবেন বিদেশি ঋণ।

এদিকে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি খাতে সরকার ব্যয় করবে মোট ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এই ভর্তুকির বড় অংশ ব্যয় করা হবে বিদ্যুতে, যার পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া কৃষিতে যাবে ১৭ হাজার কোটি, রপ্তানি ভর্তুকিতে যাবে ৭ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা এবং প্রণোদনায় ব্যয় হবে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য খাতের ভর্তুকিতে ব্যয় হবে আরও ২৫ হাজার কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয়ের বড় অংশ যাবে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির খাতগুলোতে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। এটা মোট বাজেট ব্যয়ের ১৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। একইভাবে জিডিপির ২ দশমিক ৫২ শতাংশের সমান। চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা।

এদিকে খরচের দুটি খাতের একটি হলো সরকারের আবর্তক ব্যয় বা পরিচালন ব্যয়। এর আকার ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮৪ হাজার ২০৩ কোটি টাকা, যা মোট সরকারি ব্যয়ের ৬৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং জিডিপির ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অন্যটি উন্নয়ন ব্যয়। যার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় মোট ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে উন্নয়ন ব্যয়ের মোট আকারকে দুইভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। বাকি ব্যয়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ এডিপির জন্য।

আরও পড়ুন>>লাগামহীন খেলাপি ঋণ​

আরও পড়ুন>>কয়লার অভাবে বন্ধ হচ্ছে পায়রার বিদ্যুৎ উৎপাদন, লোডশেডিং আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা

আরও পড়ুন>>রাজধানীতে দ্রুত পৌঁছাতে পারবেন ৩০ জেলার মানুষ

অন্যদিকে বাজেটের সারসংক্ষেপে পরিচালন ব্যয়ের যে আকার নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখান থেকে বিভিন্ন সরকারের সময় নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধ খাতে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৯৪ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। যা বাজেটের ১২ দশমিক ৩৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা।

সুদ পরিশোধ খাতগুলোর মধ্যে সরকারের যে অভ্যন্তরীণ ঋণ রয়েছে, তার সুদ পরিশোধে ব্যয় করা হবে ৮২ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১২ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা ব্যয় করবেন বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধের খাতগুলোর মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাতে ব্যয় হবে ৪২ হাজার কোটি টাকা। সরকারের বিভিন্ন মেয়াদি বিল-বন্ডের সুদে যাবে ৩২ হাজার কোটি টাকা এবং সরকারি চাকরিজীবীদের জিপিএফ খাতের সুদ পরিশোধে ব্যয় করা হবে ৮ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করা হচ্ছে ৮০ হাজার কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরে এ খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা।

এদিকে মোট আয়ের লক্ষ্য যে ৫ লাখ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে- তা সংগ্রহে অর্থমন্ত্রী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দায়িত্ব দিয়েছেন ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৬ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। বাকি আয় নন-এনবিআর কর খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং করবহির্ভূত খাত (এনটিআর) থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব রয়েছে সারসংক্ষেপে।

এ বিষয়ে আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সরকার বাজেটের যে আকার নির্ধারণ করেছে বা করতে যাচ্ছে, বাজেটের আকার যেটাই নির্ধারণ করুক না কেন, সরকারের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হবে। একইভাবে ঘাটতি অর্থায়নের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে, তার বড় অংশ নেবে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে। সেটি করতে গেলে বাজারে ফের মুদ্রাস্ফীতি তৈরি হবে এবং মূল্যস্ফীতি আরও উসকে যাবে। এছাড়া বেশিরভাগ ব্যাংকই তো তারল্য সংকটে রয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/৩০মে/ আরআর/আরকেএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম বাড়ায় লাভের মুখ দেখা নিয়ে শঙ্কায় মৃৎশিল্পীরা

আরও এক মিয়ার কাহিনী

‘বাবা তো ম‌রে গে‌ছে, ক‌বে আস‌বে?’

ডিসি নিয়োগ বিতর্কে জনপ্রশাসনের দুই যুগ্ম সচিবকে নিয়ে সিদ্ধান্ত কী? বঞ্চিতদের নিয়ে বসছেন সিনিয়র সচিব

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আলী আযম যেসব কারণে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে

অসীম সাহসিকতায় তারা লড়েছেন, এখন ভাসছেন প্রশংসায়

সেবাপ্রার্থী প্রবাসীদের পদে পদে হয়রানি, ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাসে বেপরোয়া ‘মৌসুমি সিন্ডিকেট’

ঢামেকে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি: জরুরি বিভাগে চিকিৎসাহীন বসে আছেন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী

বাংলাদেশে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্থান অবশ্যম্ভাবী: মুজিবুর রহমান মঞ্জু

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের যে কাণ্ড এখনো আলোচনায়

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :