সরকারি প্রণোদনার আওতায় আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী রাঙাপাতি

সুজন সেন, শেরপুর
| আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৩, ১৩:৪২ | প্রকাশিত : ১৩ জুলাই ২০২৩, ১৩:৩৬
নিজ হাতে রাঙাপাতি তৈরি করছেন শেরপুরের নালিতাবাড়ীর খলচান্দা গ্রামের আদিবাসী নারী সীতা রানী কোচনী। ছবি: ঢাকা টাইমস

আদিকাল থেকে কোচ আদিবাসী নারীরা নিজেদের উদ্যোগে কাঁঠ ও বাঁশের যন্ত্রাংশ দিয়ে তাঁতযন্ত্র বানিয়ে তাতে রঙ্গিন সুতা দিয়ে বাড়ির আঙিনায় বসে নিজ হাতে বুনন করতেন তাদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক রাঙাপাতি বা রাঙা লেফেন। যা পরে বছরজুড়ে তাদের পারিবারিক বস্ত্রের চাহিদা মিটতো। কালক্রমে নানা প্রতিকূলতায় ও আর্থিক দৈন্যতায় হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল কোচদের এই তাঁত শিল্প।

বিষয়টি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রশাসনের নজরে এলে রাঙাপাতি বিলুপ্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। বর্তমানে সরকারি প্রণোদনা পাচ্ছেন খলচান্দা গ্রামের কোচ আদিবাসীরা।

স্থানীয় হিরণ কোচ ঢাকা টাইমসকে বলেন, কোচ আদিবাসীদের নিজেদের ঐতিহ্যের প্রকাশ ঘটতো এই রাঙাপাতি পরিধানের মাধ্যমে। এক সময় এই কোচপল্লীর প্রতিটি ঘরেই ছিল নিজস্ব তাঁতযন্ত্র। এই যন্ত্র দিয়ে কোচ নারীরা নিজেদের পরিধানের জন্য নিজ হাতে তৈরি করতেন রাঙাপাতি। খলচান্দা গ্রামের দুই একটি বাড়িতে এই যন্ত্র থাকলেও সুতা সংকটের কারণে কেউ আর লেফেন বুনন করতো না।

স্থানীয় হরিপদ কোচ ঢাকা টাইমসকে বলেন, কালক্রমে নানা প্রতিকূলতায় ও আর্থিক দৈন্যতায় হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছিল এই তাঁত শিল্প। সম্প্রতি সীতা রানী নামের এক কোচ নারী নিজ হাতে রাঙাপাতি বুননের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। খবরে তাদের তাঁত শিল্পের নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়।

পরে ওই গ্রামে যান নালিতাবাড়ীর ইউএনও খৃষ্টফার হিমেল রিছিল। তিনি কোচ নারীদের সমস্যার কথা শুনে তাদের তাঁত শিল্প ও ঐতিহ্যাহী পোষাক রাঙাপাতি টিকিয়ে রাখতে উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

সীতা রানী কোচনী ঢাকা টাইমসকে বলেন, নানা সংকটের কারণে আমরা তাঁতের মাধ্যমে রাঙাপাতি বুনন করতে পারছিলাম না। একদিন আমার পরিবারের সদস্যদের জন্য নিজ যন্ত্রে একটি লেফেন তৈরি করছিলাম। এ নিয়ে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশ হয়। পরে সরকারিভাবে এডিপির অর্থায়নে তাঁতশিল্প ঘর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমার এখানে এক সঙ্গে ১০-১২ জন কোচ নারী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ঐতিহ্যবাহী পোষাক রাঙাপাতি তৈরি করতে পারবেন।

সীতা রানী কোচনী জানান, কোচদের রাঙাপাতি সাধারণত ৬ হাত লম্বা হয়। এর বর্তমান বাজার দর ৬০০-৮০০ টাকা।

নালিতাবাড়ীর ইউএনও খৃষ্টফার হিমেল রিছিল ঢাকা টাইমসকে বলেন, সরকারি প্রণোদনার আওতায় খলচান্দা গ্রামের কোচ আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক রাঙাপাতি টিকিয়ে রাখতে এডিপির প্রকল্পের আওতায় ওই গ্রামে একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে তাঁতযন্ত্র বিতরণ করা হবে। এছাড়া ওই গ্রামে কোচদের তাঁতশিল্প টিকিয়ে রাখতে কোচ নারীদের নিয়ে একটি সমিতিও গঠন করা হবে।

আরও পড়ুন: লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপরে, নদীপাড়ে বন্যার আশঙ্কা

সুতা সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, সহজে সুতা প্রাপ্তির বিষয়ে কোচ তাঁতীদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৩জুলাই/এসএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :