ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিলে বিশ্ব আরও ঝুঁকির মুখে পড়বে, কীসের ইঙ্গিত দিলেন পুতিন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৩, ১৫:৫৬ | প্রকাশিত : ১৪ জুলাই ২০২৩, ১৫:০৯

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার বলেছেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া হলে তা বিশ্বকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে এবং রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য তা হুমকি হয়ে উঠবে। এ সপ্তাহে ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে এ জোট কিয়েভের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর পুতিন এমন মন্তব্য করলেন। খবর এএফপি’র।

পুতিনের বরাত দিয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসের খবরে বলা হয়, ‘ন্যাটোতে ইউক্রেনের সদস্যপদ নিয়ে আমরা বারবার বলেছি যে এটি রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। প্রকৃতপক্ষে বিশেষ সামরিক অভিযানের একটি মূল কারণ ছিল ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের হুমকি।’

এ ব্যাপারে পুতিন বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে এটি ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাড়াবে না এবং সাধারণভাবে বিশ্বকে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অতিরিক্ত উত্তেজনা সৃষ্টি করবে।’

লিথুয়ানিয়ায় ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেনের একদিন পর পুতিন সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। ওই সম্মেলনে ন্যাটো কিয়েভকে তাদের সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিলেও সদস্যপদের জন্য একটি সময়সীমা প্রস্তাব করতে ব্যর্থ হয়।

অপরদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও চলমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যুক্ত করার বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে ইউক্রেনকে ন্যাটো সামরিক জোটের সদস্য পদ দিলে তা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করতে পারে। আমেরিকা থেকে যখন ইউক্রেন মাত্রই ক্লাস্টার বোমা হাতে পেয়েছে তখন বাইডেন একথা বললেন।

বৃহস্পতিবার ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট সাওলি নিনিস্তোর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন আরও বলেন, ‘যুদ্ধ চলার মধ্যে কোনো দেশ ন্যাটো জোটে যোগ দিতে পারে না, কারণ এমনটি হলে নিশ্চিত হবে যে, আমরা যুদ্ধের মধ্যে আছি, তখন আমরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে পড়ে যাব।’

রুশ প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, ন্যাটো সদস্যপদ ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাড়াবে না, বরং এটি বিশ্বকে আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অতিরিক্ত উত্তেজনা সৃষ্টি করবে।

ভিলনিয়াসে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনার পরে পুতিনের বিবৃতি আসে এবং কিয়েভকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে রাশিয়ার আক্রমণের মাধ্যমে শুরু হওয়া যুদ্ধ শেষ হলে এর সদস্যপদ আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হবে। পূর্ব ইউরোপের অনেক ন্যাটো সদস্য ইউক্রেনের অবস্থানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন প্রকাশ করেছে, জোর দিয়ে বলেছে যে জোটের যৌথ নিরাপত্তা কাঠামোতে কিয়েভকে অন্তর্ভুক্ত করা রাশিয়াকে আরেকটি যুদ্ধ শুরু করা থেকে বিরত রাখার সবচেয়ে কার্যকর কৌশল।

ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বুধবার জোর দিয়েছিলেন যে ইউক্রেন অবশেষে ন্যাটো সদস্য হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা একমত হয়েছি যে ন্যাটোতে ইউক্রেনের ভবিষ্যত রয়েছে। আমরা আবার নিশ্চিত করছি, ইউক্রেন সদস্য হবে। আমরা আসলে ইউক্রেনকে সদস্যপদের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করার জন্য কংক্রিট সরঞ্জাম, রাজনৈতিক সরঞ্জাম, ব্যবহারিক সরঞ্জামগুলিতে একমত হয়েছি।’

রাশিয়ার জন্য ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের সম্ভাবনা তার জাতীয় নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক প্রভাবের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য হুমকি। এই দৃষ্টিভঙ্গির পিছনে অন্তর্নিহিত উদ্বেগ এবং কারণগুলি ঐতিহাসিক, ভূ-রাজনৈতিক এবং কৌশলগত। প্রথমত, ইউক্রেন রাশিয়ার পশ্চিম সীমান্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূ-কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে যা রাশিয়া এবং ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে একটি বাফার জোন তৈরি করে। ন্যাটোতে ইউক্রেনের সম্ভাব্য একীকরণ কার্যকরভাবে জোটের সামরিক অবকাঠামোকে রাশিয়ার কাছাকাছি নিয়ে আসবে, যার ফলে এটির প্রতিরক্ষামূলক গভীরতা হ্রাস পাবে এবং ঘেরাও বৃদ্ধি পাবে।

উপরন্তু, ন্যাটোর সঙ্গে ইউক্রেনের সারিবদ্ধতা আঞ্চলিক আধিপত্যের জন্য রাশিয়ার আকাঙ্ক্ষাকে চ্যালেঞ্জ করবে এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলির ওপর প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতাকে সীমিত করবে। মস্কো আশঙ্কা করছে যে ইউক্রেনে ন্যাটোর উপস্থিতি রাশিয়ার কৌশলগত স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করবে, তার প্রভাবের ক্ষেত্র হ্রাস করবে এবং সম্ভাব্যভাবে রুশ সীমানার কাছে শত্রু সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করা হবে।

২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়াকে সংযুক্ত করে যার লক্ষ্য ছিল সেভাস্তোপলে তার কৌশলগত নৌ ঘাঁটির ক্ষতি রোধ করা এবং প্রধানত রাশিয়াপন্থী অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা। সামগ্রিকভাবে, ইউক্রেনে ন্যাটোর সম্প্রসারণের বিষয়ে রাশিয়ার উপলব্ধি ভূ-রাজনৈতিক, কৌশলগত এবং ঐতিহাসিক কারণগুলোর জটিল সমীকরণ সৃষ্টি করে যা দেশটির উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দেয় এবং সরাসরি হুমকি হিসেবে এই ধরনের পদক্ষেপে অবদান রাখে।

এদিকে কিয়েভ রাশিয়ার বাহিনীকে পরাস্ত করতে ক্ষেপণাস্ত্রসহ আরও অত্যাধুনিক ও দূরপাল্লার বিভিন্ন অস্ত্র দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। পুতিন সাংবাদিকদের বলেন, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষতির কারণ হলেও যুদ্ধক্ষেত্রে তা ব্যবহার করা হচ্ছে কিন্তু গুরুতর কিছুই ঘটছে না।

তিনি বলেন, ‘নতুন করে অস্ত্র সরবরাহ পরিস্থিতির কেবলমাত্র অবনতি ঘটাবে। এটি ইউক্রেনের জন্য হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়াবে এবং সেখানে সংঘাতের ইন্ধন জোগাবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/এসএটি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :