চোখের নীরব ঘাতক গ্লুকোমা প্রতিরোধের উপায়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৩, ১২:২২ | প্রকাশিত : ২৩ জুলাই ২০২৩, ১০:৩৭

মানুষের চোখ হচ্ছে অমূল্য সম্পদ। যার চোখে দৃষ্টিশক্তি নেই তার মতো হতভাগ্য নেই। চোখ একটি স্পর্শকাতর সংবেদনশীল অঙ্গ, যার সাহায্যে আমরা এ সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখতে পাই, তার রূপ ও সৌন্দর্য উপভোগ করি। অন্ধত্ব মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ। গ্লুকোমাজনিত অন্ধত্বের কোনো প্রতিকার নেই; প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। সারা বিশ্বে প্রায় ৮০ মিলিয়ন লোক অন্ধ। গ্লুকোমাজনিত অন্ধ লোকের সংখ্যা প্রায় ৮ মিলিয়ন। এর এক বিরাট অংশ রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায়।

যে কোনো বয়সেই গ্লুকোমাজনিত রোগ হানা দিতে পারে চোখে। চিকিৎসকেরা এই রোগকে ‘সাইলেন্ট থিফ’-ও বলে থাকেন। চোখের মধ্যে যে অংশ দিয়ে তরল চলাচল করে, সেই রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে তা জমে চোখের উপর বাড়তি চাপ ফেলে। বিশেষ করে অপটিক স্নায়ুতে। সেই চাপ বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমতে শুরু করে। পরবর্তী কালে এই সমস্যা থেকেই বাড়ে অন্ধত্বের ঝুঁকি। প্রাথমিক ভাবে ক্ষতিটা শুরু হয় চোখের পরিধির চারপাশ থেকে, তাই গ্লকোমায় আক্রান্ত রোগীদের ‘সাইড ভিশন’ নষ্ট হতে থাকে। চোখের ভিতর জল তৈরি হতে থাকে, অথচ বেরোনোর জায়গা পায় না— এর ফলেই তা দুর্বল জায়গাগুলিতে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। আর সেই থেকে সমস্যা বাড়ে।

গ্লুকোমার মতো অসুখ সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়। এই সমস্যা ধরা পড়ার পরে চিকিৎসা শুরু হলেও ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কা থেকেই যায়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে এই রোগের সঙ্গে যুঝে ওঠা যায়।

গ্লুকোমার অন্যতম লক্ষণ

চোখ ব্যথা ও লাল হওয়া। চোখ আলোর প্রতি সংবেদনশীল হয়ে পড়া। উজ্জ্বল কিংবা একটু কম আলোয় দেখতে অসুবিধা হওয়া। আলোর চারপাশে বিভিন্ন বাড়তি রং দেখতে পাওয়া। চোখ, মাথা ও কপালব্যথা। চোখ ফোলা। বমি বমি ভাব। ঘন ঘন চশমার পাওয়ার বদল।

সব রোগীরই যে একই ধরনের লক্ষণ দেখা যাবে, তা কিন্তু নয়। আবার এসব লক্ষণ যে কেবল গ্লুকোমাতেই হয়, তা–ও নয়। তাই লক্ষণ দেখা দিলে আতঙ্কিত হবেন না। বরং দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। প্রাথমিক অবস্থায় গ্লুকোমার চিকিৎসা শুরু করলে অন্ধত্বের ঝুঁকি কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে কেবল ওষুধের মাধ্যমেই চিকিৎসা সম্ভব। তবে কারও কারও লেজারের মাধ্যমে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। জটিল ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।

গ্লুকোমার ঝুঁকি বেশি যাদের

যাদের ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের গ্লুকোমার সম্ভাবনা বাড়তে পারে।

যারা নিয়মিত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খান, তাঁদেরও গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

যারা ইনহেলার ব্যবহার করেন, তাদেরও ঝুঁকি থাকে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার।

চিকিৎসক এক বার পাওয়ার সেট করে দেওয়ার পরে সাধারণত আর এক-দেড় বছরের মধ্যে তা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে যদি মাস কয়েকের মধ্যে বার বার পাওয়ার বেড়ে যায়, তা কিন্তু গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ হতে পারে।

কোনও সময়ে চোখে গুরুতর চোট-আঘাত লাগলে, পরবর্তীকালে সেখান থেকেও গ্লুকোমা হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

গ্লুকোমা থেকে একেবারে নিস্তার পাওয়া সম্ভব নয়, তবে যাতে আরও ক্ষতি না হয়, সে ব্যবস্থা করা যায়। সঠিক সময়ে ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে অসুখের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তার জন্য চাই সতর্কতা। তাই সমস্যা থাকলে তো বটেই, না থাকলেও বছরে অন্তত এক বার চক্ষু পরীক্ষা করানো জরুরি।

চিকিৎসকের মতে, গ্লুকোমার দুটি বিস্তৃত প্রকার আছে। একটি হলো ওপেন-অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা, যার অগ্রগতি বেশ ধীর। অন্যটি হলো তীব্র অ্যাঙ্গেল-ক্লোজার গ্লুকোমা, যা দ্রুত অগ্রসর হয়। ভারতীয় ও দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে অ্যাঙ্গেল-ক্লোজার গ্লুকোমা হওয়ার ঝুঁকি বেশি, যা অন্ধত্বের কারণ।

তবে এর ভালো দিক হলো এ ধরনের গ্লুকোমার চিকিৎসা আছে। নিরাময়মূলক লেজার চিকিৎসা গ্লুকোমার অগ্রগতি প্রতিরোধ করতে পারে। অন্যদিকে ওপেন-অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমার রোগীদের আজীবন চিকিৎসায় থাকতে হয়।

গ্লুকোমা প্রতিরোধে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবে স্টেরয়েড আই ড্রপ ব্যবহারে সতর্ক থাকুন। কারণ এ ধরনের আই ড্রপ চোখের স্বাস্থ্যে নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলে।

নিয়মিত চোখ পরীক্ষার মাধ্যমে সহজেই শনাক্ত করা যায় গ্লুকোমা। তবে অনেকেই তা করেন না। বিশেষ করে ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য বছরে অন্তত একবার চোখ পরীক্ষা করানো জরুরি বলে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। পরিবারে গ্লুকোমার ইতিহাস থাকলে সেক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে। তবে কিছু খাবার চোখের গ্লুকোমা প্রতিরোধ করে। জেনে নিন যেসব খাবার গ্লুকোমা প্রতিরোধ করে-

গাজর

দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে। চোখের স্বাস্থ‌্য ভাল রাখতে যেসব খাবার খাওয়া জরুরী তার মধ‌্যে গাজর অন‌্যতম। সুস্বাস্থ্য ও দৃষ্টি শক্তি স্বাভাবিক রাখতে আবশ্যক উপাদান ভিটামিন এ। গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে যা দৃষ্টিশক্তির উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এছাড়াও, গাজরে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিনকে ম্যাকুলার অবক্ষয়, গ্লুকোমা এবং বয়স-সম্পর্কিত ছানি থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত গাজর খেলে অল্পদিনেই চোখের উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো লক্ষ্য করা যায়।

পেঁপে

ভিটামিন এ, সি এবং ই এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতির কারণে পেঁপে আপনার চোখের জন্য ভাল। এতে ক্যারোটিনয়েড, লুটেইন এবং জিক্সানথিন রয়েছে যা উচ্চ শক্তির নীল আলো থেকে সুরক্ষা দেয় যা আপনার চোখের রেটিনার ক্ষতি করতে পারে। তারা ছানি, গ্লুকোমা এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী চোখের রোগের বিরুদ্ধেও সুরক্ষা দেয়।

টাটকা সালমন, টুনা

মাংসল মাছ ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি ভাল উত্স, যা চোখের ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলোকে শক্তিশালী এবং স্বাস্থ্যকর করে তোলে। মাংসল মাছের প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড চোখের অভ্যন্তরীণ তরল সঠিক প্রবাহে সহায়তা করে এবং শুষ্ক চোখের সিনড্রোম এবং গ্লুকোমা প্রতিরোধ করে।

ঘি

ত্বকের শুষ্কতা দূর করে তা আর্দ্র রাখে। ভিটামিন এ থাকায় ঘি চোখের জন্য ভালো। গ্লুকোমা রোগীদের জন্য উপকারী। ঘি চোখের চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

শালগম

শালগম ভিটামিন এ এবং লুটেইন সমৃদ্ধ। যা চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। এটা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। ছানি, গ্লুকোমা, ম্যাকুলার অবক্ষয় ইত্যাদি থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে।

ঢেঁড়স

দৃষ্টি ভালো রাখে। ঢেঁড়সে আছে বেটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, লিউটিন যা চোখের গ্লুকোমা, চোখের ছানি প্রতিরোধে সাহায্য করে।

(ঢাকাটাইমস/২৩ জুলাই/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :