ভোর হতেই ঢল নামে শেরপুরের হাজীর বাজারে

শেরপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ জুলাই ২০২৩, ০৯:৩৭

তরতাজা সবজি-মাছ-মাংসে শেরপুরের ক্রেতাদের আস্থা কুড়িয়েছে হাজীর বাজার। বাজারটি জেলা শহর থেকে সামান্য দূরে ঢাকা-শেরপুর মহাসড়কের নবীনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায়।

ক্রেতারা বলছেন, কৃষকের সদ্য তোলা টাটকা শাক-সবজি পাওয়া যায় ওই বাজারে।

অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, বাজারের প্রতিটি পণ্যের মান ভালো হওয়ায় গেল ৩০ বছরে তিলে তিলে সুনাম অর্জন করেছে এই বাজার। এদিকে বাজারটিকে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে উন্নয়নমূলক কাজ চলমান আছে বলে জানিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

ভীমগঞ্জ এলাকার কৃষক সোলায়মান মিয়া, কাজল শেখ ও রতন মিয়া বলেন, ডিসি, এসপি, মেয়র, চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের ঘরে প্রতিদিন এই বাজার থেকে নানা ধরণের সবজি ও মাছ-মাংস-ডিম-দুধ যায়। পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারী ছাড়াও নানা শ্রেণি পেশার মানুষের আস্থারস্থল এই বাজার।

তারা আরও বলেন, জেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শে কৃষকরা জমিতে জৈব সার ব্যবহার করেন। সবজির মান ভালো হওয়ায় চাহিদাও ব্যাপক।

কৃষক সাব্বির হোসেন বলেন, সদর উপজেলার দশানী, ভীমগঞ্জ, কনাসাখলা, কুসুমহাটিসহ ১০-১২টি গ্রাম থেকে আসা কৃষকরা বেগুন, আলু, পটল, ঝিঙ্গা, শশা, ঢেঁড়সসহ ১৭-১৮ প্রকারের সজবির পসরা নিয়ে বসেন।

গাজীরখামারের পাইকার আকবর আলী বলেন, সবজির ভান্ডার শেরপুরে সিজনাল সব ধরণের সবজি পাওয়া যায়। এই বাজার থেকে প্রতিদিন অন্তত ২০মণ সবজি জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ছাড়াও ময়মনসিংহের ফুলপুর ও হালুয়াঘাটে পাঠান।

সবজির খুচরা বিক্রেতা কুসুমহাটির হাবেদ আলী বলেন, প্রতিদিন ভোর হতেই ক্রেতাদের ঢল নামে এই বাজারে। এই বাজারের সাথে নানাভাবে যুক্ত প্রান্তিক কৃষক, পাইকার ও দিনমজুরসহ হাজারো মানুষ আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

নবীনগর এলাকার বলা মিয়া বলেন, ভোর ছয়টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এই বাজারে সবজির ব্যবসা করি। এরপর রড, সিমেন্টের দোকানে ভ্যান গাড়ি চালাই।

বাজারের শুটকি বিক্রতা মজনু, ওমর ফারুক ও শামীম মিয়া বলেন, চেপা, নুনা ইলিশ, ফেপি, চেলাসহ ১৫-২০ প্রকারের শুটকি মাছ নিজেরাই বাড়িতে প্রসেস করে বিক্রি করি। দীর্ঘ দিন সংরক্ষণ করার জন্য এতে কোন ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয়না।

মের্সাস দুদু মিয়া মৎস আড়তের মালিক রিপন মিয়া বলেন, যশোর, খুলনা, রাজশাহীসহ অন্তত ছয়টি জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন আইটেমের মাছ আমদানি করেন। এই বাজারে বেশী বিক্রি হয় রুই, মৃগেল, কারফু, কাতলসহ দেশি প্রজাতির মাছ। জেলার মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় মাছের বাজার বলে তিনি জানান।

ক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, খুব সকালে হাঁটতে বের হই। ফেরার সময় এখান থেকে বাজার করে বাড়ি ফিরি। এরপর রান্না শেষে খাবার খেয়ে অফিসে যাই।

তিনি আরো বলেন, আবার অনেকের স্ত্রী হাঁটতে বের হয়ে এখান থেকে জিনিস কিনে স্বামীকে খাইয়ে অফিসে পাঠান। এই বাজারে সবজির সাথে টাটকা গরু, খাসি, মুরগির মাংস এবং দেশি নানা জাতের মাছও পাওয়া যায়।

ঝিনাইগাতী থেকে আসা আবুল কালাম বলেন, ছোট বোনের বিয়ে প্রায় ২৫০-৩০০ লোকের আয়োজন করতে হবে। মাছ ও মাংসের জন্য অর্ডার দিয়ে গেলাম। কারো বাড়িতে বড় অনুষ্ঠান থাকলে জেলার পাঁচ উপজেলার ক্রেতাদের একবার হলেও এই বাজারে ঢুঁ মারতে হয় বলে তিনি জানান।

শেরপুর পৌরসভা কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৯৩ সালে নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৪২ শতাংশ জমি কিনে এই বাজার চালু করা হয়।

কর আদায়কারি হামিদ মিয়া বলেন, জেলা শহরের নৌহাটা, অষ্টমীতলা, তেরা বাজার, হাটখালি বাজারসহ মোট ১২টি বাজার রয়েছে। এর মধ্যে খুচরা বিক্রিতে নবীনগরের হাজীর বাজার এক নম্বরে আছে।

পৌরসভার সহকারি প্রকৌশলী (সিভিল) খুরশেদ আলম জানান, বাজারটিতে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে উন্নয়নমূলক কাজ চলমান আছে। সরকারের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী প্রকল্পের আওতায় এক কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাজার পাকাকরণ করা হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২৪জুলাই/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :