ইলিশ মিলছে না নোয়াখালীর হাতিয়ার জেলেদের জালে

নোয়াখালী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫:৫৭

চলতি মৌসুমে দেশের বিভিন্ন ঘাটে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালি ইলিশ আসলেও নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার মেঘনায় কাঙ্খিত ইলিশ না মেলায় অনেকটা ফাঁকা দ্বীপের প্রধান ইলিশের বাজার চেয়ারম্যানঘাট।

চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর থেকে কয়েকটি ট্রলারে ইলিশে আসায় এ ঘাটের আড়তের কিছু গদিতে বিক্রি হচ্ছে, তবে বেশির ভাগ গদিই ফাঁকা পড়ে থাকে সবসময়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেঘনার হাতিয়া অংশে নদী ন্যাবতা-গভীরতা কমে যাওয়ায় এ অংশে ইলিশের আকাল দেখা দিয়েছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা নির্দিষ্ট সময়ের আগে দেওয়া হয় এমনও দাবি করছেন জেলেরা। তবে বৃষ্টি হলে পূর্ণিমার জোতে ভালো ইলিশ পাওয়ার আশা জেলেদের।

জানা গেছে, দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ছোট-বড় ৪১টি ঘাট থেকে মাছ শিকারে যায় প্রায় লক্ষাধিক জেলে। এ দ্বীপের মানুষের প্রধান পেশা মাছ শিকার। গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ শিকারে যায় জেলেরা। এরই মধ্যে আগামী অক্টোবর মাসে ইলিশের প্রজনন সময়ের আসছে আরও ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। বর্তমানে ইলিশের ভরা মৌসুম চললেও জালে কাঙ্খিত ইলিশ ধরা না পড়ায় লোকসানে রয়েছেন জেলেরা। ভরা মৌসুমে এসে যা মাছ পাচ্ছে তার মধ্যে ঝাটকার সংখ্যা বেশি। ইলিশ মাছ কম থাকলেও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর পরিমাণ পোয়া মাছ। তবে তাতে মিটবে না ইলিশের ক্ষতি। বেশি দামে হাতিয়ার ঘাট থেকে ইলিশ ক্রয় করে ঢাকা নিয়ে কম দামে বিক্রি হওয়ায় ক্ষতিতে পাইকাররা। মৌসুমের শুরু থেকে থাকা ইলিশের খরা কাটিয়ে শেষের দিকে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে জেলেদের মানবেতর জীবনের অবসান হবে এমনটাই আশা করছেন মৎস্য সংশ্লিষ্টরা।

গভীর সমুদ্র থেকে ৭দিন ফর ট্রলার নিয়ে ফেরা মমিনুল ইসলাম নামের এক জেলে বলেন, গত তিন ধাপে আমাদের কোম্পানির প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ চালানে ইলিশ-পোয়া সহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় ২০মণ মাছ পাওয়া গেছে। তবে ইলিশের পরিমান যা আছে সেখানে ছোট ইলিশের সংখ্যা বেশি।

হাফিজ মাঝি নামের একজন বলেন, দেড় কেজির কিছু ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, ঝাটকার পরিমাণ বেশি। হাতিয়ার সীমানায় তেমন একটা মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। মেঘনায় মাছ নেই বললে চলে। এরই মধ্যে কয়েকদিন পর-পর আবহাওয়া খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

মাছ ধরার ট্রলার এফবি নিশানের মালিক লুৎ ফুল্লাহিল মজিদ নিসান বলেন, বরফ, ডিজেল, ট্রলারের খাদ্য সামগ্রী সহ অনান্য জিনিসের খরচের তুলনায় প্রতি চালানে সে পরিমান মাছ পাওয়া যায় না। প্রতি পিস বরফ আকার ভেদে আমাদের ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে ক্রয় করতে হয়। প্রতি ২০০ লিটার ডিজেলের দাম পড়ে ২২ হাজার টাকা। ৭দিনের জন্য ট্রলারে ২০০ পিস বরফ, ১৬০০ থেকে ২০০০ লিটার তেল ও ২০জন জেলের খাদ্য সামগ্রী বাবত ৫০ হাজার টাকা মালামাল নিয়ে দিতে হয়। সে হিসেবে প্রতিবার ট্রলার প্রতি আমাদের খরচ হয় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। কিন্তু সেই হিসেবে ওই পরিমান মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। গত নিষেধাজ্ঞার পর ৩ চালানে সব মিলে প্রায় ৪ লাখ টাকার মাছ পাওয়া গেছে। সবশেষ চট্টগ্রাম থেকে ট্রলার ফিরে আসার পর ৪ লাখ টাকার মাছ পাওয়া গেছে। সব মিলে আমাদের লোকসান হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ইলিশের জীবন চক্রের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিপাত দেরিতে শুরু হওয়ায় ইলিশ মাছের প্রজনন ও মাইগ্রেশন পিছিয়ে যাচ্ছে। ইলিশ গভীর পানির মাছ তাই মেঘনায় নাব্যতা সংকটের কারনেও এ অঞ্চলে কমে যাচ্ছে। প্রতি বছর সরকার থেকে ২/৩ বার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। আমরাও নিষেধাজ্ঞা মেনে চলি। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা সঠিক সময় হয়না, যখন নদীতে মাছ থাকে, মাছের ডিম ছাড়ার সময় হয় তার আগে অভিযান শেষ হয়ে যায়। অভিযান দেওয়ার আগে সরজমিনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে যদি অভিযানটা দেন তাহলে মাছের প্রজনন ঠিক থাকবে এবং জেলেদের জালেও প্রচুর মাছ ধরা পড়বে। অভিযানের সময় সঠিক না হওয়া জেলেদের জালে ঝাটকা ধরা পড়ছে। অভিযানটা আগে আগে হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা শেষে ডিম ওয়ালা প্রচুর মাছ ধরা পড়ে, এতে করে ইলিশের প্রজনন ধ্বংস হচ্ছে। ফলে কমে যাচ্ছে ইলিশ।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন জানান, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জাতীয় কমিটি থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি আমরাও শুনেছি, তাই নোয়াখালী থেকে আগামী ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা ৭ অক্টোবরের পরবর্তী ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত দেওয়ার জন্য আমরা জাতীয় কমিটিতে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। দেশের ২০টি জেলা থেকে প্রস্তাবনা এসেছে, জাতীয় কমিটি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

(ঢাকাটাইমস/০১সেপ্টেম্বর/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :