নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে ফাটা ডিমও যেন সোনার হরিণ

আসিম সাঈদ, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা)
| আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:৫২ | প্রকাশিত : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:৫০

নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে মাংস হিসেবে পরিচিত মুরগির ডিমও যেন বর্তমানে সোনার হরিণ। পাইকারি বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম প্রতি হালি ৫০ টাকা। আর খুচরা দোকান থেকে একহালি ডিম কিনতে গুনতে হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। ডিমের দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় কম দামে 'ফাটা ডিম' কিনতে শুরু করেছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। কিন্তু সেই ফাটা ডিমও এখন গলার কাঁটা। ৪০ টাকার নিচে বাজারে একহালি ফাটা ডিম পাওয়া যাচ্ছে না।

চুয়াডঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা রেলবাজারে পাইকারি ডিমের দোকানগুলোতে ফার্ম থেকে ডিম সরবরাহের সময় প্রতিদিনই কিছু ডিম ফেটে যায়। হালকা ফেটে যাওয়া এই ডিমগুলো পাইকাররা কম দামে বিক্রি করে থাকেন। এ এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষেরা এই ফাটা ডিমগুলো কিনে দেহে আমিষের চাহিদা পূরণ করেন।

রেলবাজারে বেশ কয়েকটি পাইকার ডিমের দোকান রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম বড় ডিমের আড়ৎ কালাম ডিম হাউজ। গড়ে প্রতিদিন পাঁচ হাজার করে ডিম এখানে আসে। এর মধ্যে পরিবহনের সময় প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ ডিম ফেটে যায়। মূলত নিম্ন আয়ের মানুষ, ছোট বেকারি ও ছোট ফার্স্টফুড রেস্টুরেন্ট দোকানিরাই এই ফাটা ডিমগুলো কেনেন।

ডিম বিক্রেতা মোহাম্মদ কালাম বলেন, আমি দিনে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার ডিম বিক্রি করি। এর মধ্যে অন্তত ২০০ ফাটা ডিম বিক্রি হয়। নিম্ন আয়ের মানুষ ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার পর দাম শুনে ফাটা ডিমই কেনে। যখন ডিমের দাম কম ছিলো তখন ফাটা ডিম ৫-৬ টাকা পিস বিক্রি করতাম কিন্তু বর্তমানে ডিমের দাম বৃদ্ধি পরিবহন খরচ বেশি ও লোকসান কমাতে প্রতিপিস ১০টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

দোকানে ফাটা ডিম কিনতে আসা জামসেদ আলী বলেন, মাছ-মাংসের দাম অনেক। সেগুলো আমাদের সাধ্যের বাইরে। আমরা নিয়মিত ডিম খেতাম। কিন্তু ডিমের যে দাম তাতে ভালো ডিম কেনা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আগে একটা ডিম কেটে ২ ভাগ করে রান্না করে খেতাম। ১২-১৩ টাকা করে ডিম কেনার অবস্থা আমাদের নেই, তাই ফাটা ডিম কিনতে হচ্ছে। কিন্তু তার দামও পড়ছে প্রতিপিস ১০ টাকা। এখন আমরা কি খাবো?

নাসিমা খাতুন নামের আরেক নারী জানান, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্যতা নেই। ভালো ডিম এখন সোনার হরিণ। এখন ফাটা ডিমের ডজনই ১২০ টাকা। বাঁচতে হলে খেতে হবে, তাই অস্বাভাবিক দামের কারণে ফাটা ডিমই কিনতে হচ্ছে।

ফুটপাতে ভাজাভুজি বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, বাজারে ২০০ টাকার নিচে মাছ পাওয়া যায় না। আর আমাদের মতো মানুষের মাংস কেনার সামর্থ নেই। সপ্তাহের বেশিরভাগ দিন ডিম খায়। কিন্তু ডিমের দাম বেশি হওয়ায় এখন ফাটা ডিম কিনতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, আমার পাঁচ জনের পরিবার। চাকরির সুবাদে এখানে ভাড়া নিয়ে থাকি। ৩ সন্তানের মধ্যে দুজন স্কুলে যায়। ডিম সুষম খাবার হওয়ার কারণে সকালে দুই বাচ্চা ডিম দিয়ে নাস্তা করতে পছন্দ করে। কিন্তু, ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার পর ফাটা ডিম কিনে বাচ্চাদের খাওয়াতে হচ্ছে।

একটি ফার্স্টফুড রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার তানজিমুর রহমান বলেন, একটা ফার্স্টফুড রেস্টুরেন্টে ডিমের ব্যবহার বেশি হয়। আগে আমরা ফ্রেশ ডিম কিনতাম। ডিমের দাম বেশি হওয়ায় আগের তুলনায় এখন উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। উৎপাদন খরচ ঠিক রাখতে বর্তমানে ফাটা ডিম কিনতে বাধ্য হচ্ছি।

(ঢাকা টাইমস/২৮অক্টোবর/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :