অবরোধের প্রভাব: বিপর্যস্ত পর্যটন শিল্প

ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার
 | প্রকাশিত : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ২৩:৫৯

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিএনপি-জামায়াতের টানা অবরোধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প। এতে করে ফের লোকসানের শঙ্কায় পর্যটন ব্যবসায়ীরা। স্থবির হয়ে পড়েছে এখানকার পর্যটন ব্যবসা।

দেশে চলমান আন্দোলন সংগ্রামের ফলে কার্যত অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়েছে। এতে করে অজানা শঙ্কায় রয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। পর্যটন মৌসুমে পর্যটকশূন্য পরিস্থিতিতে হতাশ হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে কক্সবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পাশাপাশি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার শ্রমিকের বেকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গত অক্টোবরে কক্সবাজার সৈকত, সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া, সাফারী পার্ক ও হোটেল-মোটেল জোন ছিল লাখো পর্যটকের পদচারণায় মূখর। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের পর থেকে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে অবরোধ, হরতালে এ পর্যন্ত কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলো অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

তবে সপ্তাহের মঙ্গলবার, শুক্রবার ও শনিবার অবরোধ না থাকায় অল্প কিছু পর্যটকের দেখা মিলে। কক্সবাজার যেহেতু পর্যটক নির্ভর সেহেতু অনেক হোটেল-রেস্তোরা মানুষের আনাগোনা লক্ষ করা যায়। কিন্তু এখন কোন পর্যটক নেই। সৈকতে এখন সুনসান নীরবতা। যেগুলো খোলা আছে সেখানে অনেক কর্মচারীদেরকে ছুটি দেয়া হয়েছে। অধিকাংশ হোটেলে বাতি পর্যন্ত জ্বলেনা। নেই কোন বুকিং। সড়কও অন্ধকার।

হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন- দেশে চলমান অবরোধে সবচাইতে ক্ষতি হচ্ছে কক্সবাজারে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি কখন ঠিক হবে কেউ জানে না। এভাবে হানাহানি হলে এবছর কোন ব্যবসা হবে না। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে দ্বাদশ নির্বাচনের উত্তাপ থাকবে সারাদেশে। এরপর মার্চের একদম শুরুতে রমজান তাই পর্যটন ব্যবসার আর কোন সুযোগ নেই।

এদিকে যাত্রী ও পর্যটক সংকটের কারণে টেকনাফের দমদমিয়া-সেন্টমার্টিন নৌরুটে চলাচলকারী প্রমোটতরী জাহাজ কেয়ারী ক্রুজ এন্ড ডাইন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কেয়ারী ট্যুরস এন্ড লিমিটেডের কক্সবাজারের সিনিয়র অফিসার ও ইনচার্জ নুর মোহাম্মদ ছিদ্দিকী বলেন, প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ জন যাত্রী নিয়ে শুধু কেয়ারী সিন্দাবাদ সেন্টমার্টিন যাচ্ছে। একটা জাহাজ ছাড়তে অনেক টাকা প্রয়োজন হয় এখন খরচের টাকাও উঠছে না। তাই কেয়ারী ক্রুজ এন্ড ডাইন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কলাতলির হোটেল বে-ম্যারিনার ম্যানেজার রফিক উল্লাহ জানান, হোটেল মালিক ও কর্মচারীরা বর্তমানে চরম মানবেতন জীবনযাপন করছে। পর্যটন নির্ভর ব্যবসা হওয়ায় হোটেলগুলো এখন খা-খা করছে। এভাবে তো চলতে পারে না।

রবি এক্সপ্রেস হুন্দাইয়ের কক্সবাজারস্থ ইনচার্জ মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, হরতাল অবরোধে আসলে একটা ভয় কাজ করে। কোথাও গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোটি কোটি টাকা মালিকের যায়। তাই অবরোধে কোন গাড়ি ছেড়ে যায় না।

হোটেল-মোটেল অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ কলিম জানান, পর্যটন স্পট এখন অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে। অবরোধের কারণে একদিকে হোটেল রেস্তোরাঁয় ব্যবসা নাই। অপরদিকে শ্রমিক-কর্মচারী ছাটাই চলছে। বলতে গেলে সবাই এখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পর্যটক না আসায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার শ্রমিক কর্মচারী খুবই কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তবুও আমরা প্রতিবাদ করে যাচ্ছি কোন কর্মচারীকে যাতে বাধ্যতামূলক ছুটি বা ছাটাই না করা হয়।

তারকা মানের হোটেল কক্স-টুডের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার আবু তালেব বলেন, পর্যটন মৌসুমের এখন সবচাইতে উত্তম সময়। এই সময় ১০ থেকে ১২টি রুম ছাড়া কোন বুকিং নেই। আগে এই মৌসুমে ফোনের পর ফোন থাকতো কিন্তু এখন বুকিংয়ের একটা কলও আসে না। আসলে হরতাল অবরোধের প্রভাব ভয় কাজ করছে মানুষের তাই কক্সবাজার আসছে না পর্যটকরা। তবে কক্স-টুডের কর্মকর্তা কর্মচারীরা স্বপদে সবাই বহাল আছে।

হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, করোনার পর এখন আবার অবরোধে আটকে যাচ্ছি আমরা। এই সময়ে প্রচুর পর্যটক আসতো কক্সবাজারে সেখানে এখন মানুষ না থাকায় খরচের টাকাও উঠছে না। এভাবে হলে পর্যটন শিল্পের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা শঙ্কায় রয়েছেন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, অবরোধের কারণে এই পর্যটন মৌসুমে আশানুরূপ পর্যটক আসতেছে না। হোটেল মালিক ও ব্যবসায়ীদের কষ্টও হচ্ছে। তবে শ্রমিক ছাটাই ও ছুটির বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৪ নভেম্বর/ইএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সারাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :