কঙ্কালের সূত্র ধরে বেরিয়ে এলো পরকীয়া প্রেমের গল্প, ধরা পড়লো খুনি

হাসান মেহেদী, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০৪
অ- অ+
মানুষের কঙ্কালের একটি ছবি

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ বাস্তা ইউনিয়নের বাঘাশুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা মৃতপ্রায় সিংহ নদীটির প্রান ফিরিয়ে দিতে মাটি কাটার ভেকু দিয়ে খনন কাজ চলছিল ২১ মে রবিবার সকাল ৯টা থেকে। নদীখনন দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন এলাকার অনেকেই। নদীতে জমে থাকা কচুরিপানা ও ময়লার স্তূপ সরানোর একপর্যায়ে দেখা যায় একটি মাথাবিহীন গলিত পঁচা মরদেহ- কঙ্কাল। মুহূর্তে খবর ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে জড়ো হন শতশত মানুষ।

উৎসুক জনতার ভিড়ে লাশ দেখতে হাজির হয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল শিকদার। প্রায় তিন মাস ধরে নিখোঁজ তার ভাতিজা রোমান সিকদার (৩৮)। কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তিনি দাবি করেন, এটি তার ভাতিজা রোমানের মরদেহ। পরে ডিএনএ পরীক্ষায়ও প্রমাণ হয় এটি চায়ের দোকানদার নিখোঁজ রোমানের লাশ। তবে হত্যার কারণ ও খুনি শনাক্ত হচ্ছিল না। একপর্যায়ে মামলার তদন্তভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

একপর্যায়ে ঘটনার ৬ মাস পর ধরা পড়েছে দুই খুনি। পরকীয়ার জের ধরেই খুন করা হয় রোমানকে। পিবিআই সদর দপ্তরের একটি সূত্রে এ তথ্য জানতে পেরেছে ঢাকা টাইমস।

তবে পিবিআই ঢাকা জেলার কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কিছু জানাতে রাজি হননি।

এদিকে সেসময় লাশ উদ্ধারের পর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। তবে প্রথমে উদ্ধারকৃত লাশের পরিচয় শনাক্ত ও হত্যা রহস্য উদঘাটন করতে ব্যর্থ হন তারা।

মৃতদেহটি দেখতে পাওয়া প্রত্যক্ষদর্শীরা ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন, লাশটির মাথা ছিল না, হয়তো তার গলা কেটে হত্যা করে এ খালে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। লাশটি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। দেখে বোঝার উপায় ছিল না- কার লাশ।

ক্লুলেস এই হত্যার রহস্য উদঘাটনের শুরুতেই পুলিশ লাশের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করে। তদন্তে গুরুত্ব দেওয়া হয় লাশ উদ্ধারের কয়েক মাস আগে ওই এলাকার চায়ের দোকানদার রোমান নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি। উদ্ধারের সময় মরদেহের পরনে যে শার্টের কিছু ছেড়া অংশ ছিল, সেটা রোমানের শার্ট দাবি করেন রোমানের স্বজনরা।

একপর্যায়ে পরীক্ষা মরদেহের সঙ্গে নিখোঁজ রোমানের সন্তানদের ডিএনএ মিলে যায়। এরপর মরদেহটি রোমানের বলে পুলিশ নিশ্চিত হয় এবং স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

তবে বেশকিছুদিন তদন্ত করেও হত্যা রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্ত শুরু করে পিবিআই।

ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ড তদন্তে নেমে অবশেষে এই হত্যা রহস্য উদঘাটন করে পিবিআই।

ঢাকা টাইমস জানতে পেরেছে, পিবিআই কয়েকটি ধাপে তদন্তে নামে কেরানীগঞ্জ এলাকায়। খোঁজ নেওয়া শুরু করেন রোমান সম্পর্কে। প্রথমেই তারা জানতে পারেন- রোমান স্থানীয় চা দোকানদার ছিলেন। তার সঙ্গে ছলনা (ছদ্মনাম) নামে এক নারীর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক।

এই প্রেমের সূত্র ধরে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ওই নারীর কাছে পৌঁছায় তদন্তকারী অফিসাররা। এছাড়াও এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রোমানের প্রেমিকা ছলনা জড়িত সন্দেহে তাকে নজরদারিতে রাখা হয়।

পিবিআই সূত্রে ঢাকা টাইমস আরও জানতে পেরেছে, পরকীয়ায় জড়িত ছলনা বেশ কিছুদিন ধরে রোমানকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। এরমধ্যে ছলনার সঙ্গে রোমানের একান্ত সময়ে হাতেনাতে ধরে ফেলেন স্থানীয়রা এবং ওই নারীর স্বামী। এসময় স্থানীয়রা ছলনাকে বিয়ের কথা বললে রোমান বিয়ে করতে রাজি হন না এবং তাদের প্রেমের সম্পর্ক অস্বীকার করেন। সেখান থেকেই রোমানের ওপর ক্ষিপ্ত হন ছলনা। এরপর রোমানকে হত্যার পরিকল্পনা সাজান তিনি।

সুত্র বলছে, রোমানের সঙ্গে ছলনা মাঝে মধ্যেই সময় কাটাত। ছলনা বুঝতে পেরেছিল রোমান তাকে বিয়ে করবে না। আর ছলনার স্বামীও তাদের সম্পর্কের কথা জেনে গেছে। সেক্ষেত্রে রোমান বেঁচে থাকলে ছলনা সংসার করতে পারবেন না- এমন ভাবনা থেকেই রোমানকে হত্যার ছক কষেন প্রেমিকা ছলনা। এরপর রোমানকে ডেকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নৃশংসভাবে হত্যা করা করা হয়। লাশটি যে রোমানের তা যেন কেউ বুঝতে না পারে তা নিশ্চিত করতে খুনের পর দেহ থেকে মাথা আলাদা করা হয়।

এঘটনায় জড়িত রোমান সিকদারের সেই পরকীয়া প্রেমিকাসহ আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পিবিআই সূত্রে জানা গেছে।

(ঢাকাটাইমস/২৮নভেম্বর/এইচএম/আরআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিক উপলক্ষে গফরগাঁওয়ে কম্বল বিতরণ
রাশিয়ার ওপর উচ্চ মাত্রার কর-শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞার হুমকি ট্রাম্পের
জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফাতে সরকারের পতনের দাবি ছিল না: জুয়েল
প্রয়োজনে এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে একসঙ্গে নিয়োগ-এমপিওভুক্তি: শিক্ষা উপদেষ্টা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা