কারাতে ফেডারেশনের প্রশিক্ষক ও আন্তর্জাতিক রেফারি জঙ্গিবাদে জড়িত!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫:৩৯

মার্শাল আর্টে ব্ল্যাকবেল্টধারী কারাতে ফেডারেশনের প্রশিক্ষক ও আন্তর্জাতিক রেফারি ইমতিয়াজ সেলিম ওরফে ইমাদুল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।

সন্ত্রাসবাদ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ মোকাবিলায় গঠিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এই বিশেষ শাখার দাবি, ইমাদুল আমিন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি সংগঠনের বাংলাদেশের অন্যতম নেতা এবং সর্বশেষ ৩০ সেপ্টেম্বর অনলাইন সম্মেলনের ২য় বক্তা ছিলেন।

বুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান সিটিটিসিপ্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে মঙ্গলবার সিটিসিসি'র ইন্টেলিজেন্স অ্যানালাইসিস ডিভিশন তাকে গ্রেপ্তার করে। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে।

সিটিটিসি বলছে, গ্রেপ্তার ইমাদুল আমিন হিজবুত তাহরীরের অন্যতম নেতা এবং বর্তমান সময়ে সক্রিয় নেতৃত্বদানকারী। রাজধানীতে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার আড়ালে তিনি এই কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।

ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশে জঙ্গি ও মৌলবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। তারা প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে বিশ্বাস করে না। দেশের প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে অমান্য করে যে কোনো বড় ধরনের আঘাত ঘটাতে পারে। ২০০৯ সালে সরকার এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। শুরু থেকেই এ সংগঠনের সদস্যরা দেশের সার্বভৌমত্বকে আঘাত ও মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াসে একটি নিষিদ্ধ সংগঠন বা সত্ত্বার সদস্য হিসেবে সক্রিয়ভাবে অনলাইনে দেশবিরোধী প্রচারনায় অংশগ্রহণ করে।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, হিজবুত তাহরীর গত কয়েক বছর ধরে অনলাইন সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ সত্ত্বা বা সংগঠনকে সমর্থন করে তাদের কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করার উদ্দেশে বিভিন্ন প্রচার প্রচারণায় অংশগ্রহণ করে। তারা দেশের সার্বভৌমত্বকে আঘাত করার জন্য, গণতন্ত্রকে উৎখাত করার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার ষড়যন্ত্র করে আসছে। এ বছর এপ্রিল মাসে একটি অনলাইন সম্মেলনের পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাতটায় তারা ‘জালিম হাসিনা এবং ঔপনিবেশবাদী মার্কিনিদের কবল থেকে মুক্তির উপায়’ শীর্ষক অনলাইন সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনটি লেবানন ভিত্তিক ALWAQIYA.TV নামক ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি প্রচার করা হয়। এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য তারা ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে পোস্টার লাগায় এবং অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা চালায়। সম্মেলনে দুইজন বক্তা এবং একজন উপস্থাপক অংশগ্রহণ করেন। সেখানে সবাই ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। এ সম্মেলনে বক্তারা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে বর্তমান পরিস্থিতি বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আবার ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়েও দেশের সাধারণ জনগণকে হিজবুত তাহরীরের নেতৃত্বে শাসন ব্যবস্থা কায়েমের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র তথা খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য উসকানি দেওয়া হয়েছে।

সিটিটিসিপ্রধান বলেন, সম্মেলনে মহানবী মুহম্মদ (স.) এর বিভিন্ন ঘটনা, ইসলামের ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা প্রভৃতি তাদের মতো করে উদাহরণ দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে হিজবুত তাহরীরের অনুসারী হওয়ার আহবান জানানো হয়, যা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াস। আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ঘটনা ও ব্যক্তিকে ভুলভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে দেশ ও জনগণের স্বার্থবিরোধী মতামত উপস্থান করে দেশের সার্ভভৌমত্বকে খাটো করা হয়েছে। এমনকি দেশের প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে তাদের পক্ষে বিভিন্ন মতবাদ জনগণের মধ্যে প্রচার করারও চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের এ ধরনের কাজ দেশের বিদ্যমান আইনের সুস্পষ্ট লংঘন হিসাবে প্রতিয়মান হয়।

আসাদ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত ইমতিয়াজ সেলিম জানান, তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে বনানীতে অবস্থিত একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে হেড অব বিজনেস, টলিং এবং জেনারেল ম্যানেজার, সেলস হিসাবে কর্মরত আছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পর ২০১০ সালে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে হিযবুত তাহরীর সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন এবং এ সংগঠনে যোগদান করেন। ২০১০ সালে হিজবুত তাহরীর করার অভিযোগে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে। বাড্ডা থানার ওই মামলায় এজহারভুক্ত আসামি হিসেবে ছয় মাস জেলে ছিলেন। এসময় অভিযুক্ত ইমতিয়াজ সেলিম দেশে হিজবুত তাহরীরের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মাওলা ও প্রফেসর মহিউদ্দিনের সান্নিধ্য লাভ করেন এবং তাদের বয়ানে হিজবুত তাহরীরের প্রতি আরও বেশি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। জামিনে মুক্তি পেয়ে পরিবারসহ অস্ট্রেলিয়া একবছর অবস্থান করে আবার দেশে ফিরে হিজবুত তাহরীরের সদস্য হিসেবে কার্যক্রম অব্যহত রাখেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে ইমাদুল ২০২১ সালের ৩ ডিসেম্বর আরও একটি অনলাইন সম্মেলনের বক্তা হিসেবে গণতন্ত্র ও দেশের প্রচলিত আইনকে অস্বীকার করে বক্তব্য দেন।

সিটিটিসি প্রধান জানান, ইমাদুল মার্শাল আর্টে ব্ল্যাকবেল্টধারী এবং বাংলাদেশ জাতীয় কারাতে ফেডারেশনের তালিকাভুক্ত প্রশিক্ষক ও আন্তর্জাতিক রেফারি। তাছাড়া তিনি জাপান কারাতে অ্যাসোসিয়েশনের লাইসেন্সধারী প্রশিক্ষক। তারা সংগঠনের জন্য তৈরি বিশেষ অ্যাপস এবং অপ্রচলিত ইনক্রিপ্টেড অ্যাপসের মাধ্যমে অন্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। ফলে বেশিরভাগ সময় তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকেন। গোপনে ও প্রকাশ্যে তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের কার্যক্রম চলমান রেখেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ও দেশবিরোধী পোস্টার, মসজিদে মসজিদে নামাজের পর বয়ান প্রভৃতি কার্যক্রমেও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তাছাড়া অনলাইন সম্মেলনগুলিতে ইমাদুল সমন্বয়ক ও ক্ষেত্র বিশেষে বক্তা হিসেবে ভূমিকা পালন করে।

এক প্রশ্নের উত্তরে আসাদুজ্জামান বলেন, 'আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো জঙ্গি হামলার সম্ভাবনা নেই। সিটিটিসি সেই সুযোগ জঙ্গিদের দিচ্ছে না।'

(ঢাকাটাইমস/১৩ডিসেম্বর/এসএস/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :