দিনে ধর্ষণের শিকার ৩ নারী ও শিশু, আইনের ফাঁকফোকরে বেরিয়ে যাচ্ছে আসামিরা 

হাসান মেহেদী, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:২১

দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণ যেন মহামারি আকারে রূপ নিয়েছে। গড়ে প্রতিদিন ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন তিনজন নারী ও শিশু। ধর্ষণের মতো অপরাধের বিচারে বিচার বিভাগ কঠোর অবস্থানে থাকলেও আইনের ফাঁকফোকরে বেরিয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। নিম্ন আদালতে মামলা হলে তা উচ্চ আদালতে ঝুলে থাকে। এতে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে স্পেনভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা এডুকো বাংলাদেশ বলছে, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসেই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ১ হাজার ২২ জন নারী, এদের মধ্যে ৩৬২ জন নারী এবং ৬৬০ জন কন্যাশিশু রয়েছে। এতে সারা দেশে গড়ে দৈনিক ৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। সেই হিসেবে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন।

এ ছাড়াও ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছিল আরও ৫৩ জন নারী এবং ১৩৬ জন কন্যাশিশুকে।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ১৩ জন নারী এবং ৩৪ জন কন্যাশিশু। এছাড়াও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন মোট ৩৫২ জন, যার মধ্যে ৯৬ জন নারী এবং ২৫৬ জন কন্যাশিশু। ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির দিক থেকে বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কন্যাশিশু।

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে শপিং করে দেওয়ার কথা বলে এক স্কুলছাত্রীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় গৌতম নামের স্থানীয় এক জুয়েলারি ব্যবসায়ী। পরে তাকে চেতনানাশক ট্যাবলেট খাইয়ে এক আবাসিক হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ করে গৌতম। অসুস্থ অবস্থায় ওই ছাত্রী বাড়ি ফিরে মা-বাবাকে ঘটনাটি খুলে বললে ছাত্রীর বাবা ১৬ ডিসেম্বর বোয়ালমারী থানায় গৌতমকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।

গত ৩০ এপ্রিল সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলা যুবলীগ নেতা আলী আসলামের স্ত্রীর বান্ধবী ধর্ষণের শিকার হন। স্ত্রীর বান্ধবী হওয়ার সুবাদে যুবলীগ নেতার বাসায় তার যাতায়াত ছিল। এদিন বাড়িতে স্ত্রী না থাকায় ওই তরুণীকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন যুবলীগ নেতা আলী আসলাম। পরে ওই নারীকে বিয়ে করতে অনীহা প্রকাশ করলে গত ১৭ নভেম্বর আসলামের বাড়িতে অনশন করেন ওই নারী। এতে যুবলীগ নেতা ওই নারীর কাছ থেকে জোরপূর্বক কাগজে স্বাক্ষর রাখে এতে ১৬ ডিসেম্বর শনিবার ভুক্তভোগী তরুণী নিজ বাড়িতে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় একটি মামলা হলেও গ্রেপ্তার হয়নি যুবলীগ নেতা।

দেশে এমন ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। এ সকল বিষয়ে কিছু ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হলেও বেশিরভাগ ঘটনার বিচারই চাপা পড়ে যায়। যেসব ঘটনায় বিচার হচ্ছে, সেখানেও অভিযুক্তের সাজার হার খুবই নগণ্য।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, সারা দেশে বিগত পাঁচ বছরে (২০১৮-২২) ২৭ হাজার ৪৭৯টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। অন্যদিকে ডিএমপির তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে শুধু রাজধানীতেই ৩ হাজার ৪২টি ধর্ষণ মামলা করা হয়েছে। এরমধ্যে নারী ২ হাজার ৪৭০ জন এবং শিশু ৫৭২ জন। গত পাঁচ বছরে শুধু ঢাকা মহানগরীতে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা মাত্র ২৪ জন।

নারী সংহতি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শ্যামলি শিল ঢাকা টাইমসকে বলেন, দেশে নারীদের ক্ষমতায়ন করা হয়েছে বলা হলেও নারীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়নি। এখনো নারীরা প্রতিটি পদক্ষেপেই হয়রানির শিকার হয়ে আসছেন। ধর্ষণ যে হারে বাড়ছে সেই হারে এই অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত কম হচ্ছে। অনেক নারীই সঠিক বিচার পাচ্ছেন না। ধর্ষণ মামলাগুলো বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এখনো এই সমাজে নারীদের ক্ষমতায়ন বা নারীদের উন্নয়ন পুরুষতান্ত্রিক সমাজ মেনে নিতে পারছেন না। ধর্ষণের শাস্তিগুলো ঘটনার পর দ্রুত দৃশ্যমান শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

তথ্য বলছে, ধর্ষণের ঘটনায় ভিকটিমের মেডিকেল রিপোর্টের ওপর অতিরিক্ত জোর দেওয়ার ফলে অনেকেই সঠিক বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যদি নারীর শরীরে কোনো ইনজুরি না থাকে কিংবা এমন কোনো চিহ্ন না থাকে যাতে বোঝা যায় যে নারী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, তখনই ধর্ষণ মামলা দুর্বল হয়ে পড়ে। ধর্ষণের অনেক ঘটনায় নারী ভয়ে জ্ঞান হারান অথবা ঘটনার আকস্মিকতায় বাধা দেওয়ার অবস্থাতেও থাকেন না। সেসব ক্ষেত্রে মামলা প্রমাণ করা বাদীর জন্য আরও অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও অনেক ভিকটিম ঘটনা ঘটার দ্রুততম সময়ের মধ্যে গোসল করেন, যেটি তার মেডিকেল রিপোর্টকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে এবং ভিকটিমের জন্য নেগেটিভ হিসাবে কাজ করে।

(ঢাকাটাইমস/১৭ডিসেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :