বিশেষজ্ঞদের অভিমত: ‘সুষ্ঠু নির্বাচনে’ থামবে বিদেশি হস্তক্ষেপ 

সামিয়া রহমান প্রিমা, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:১৮

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশি শক্তিগুলোর মন্তব্য এখনও থামেনি। মূলত ভারত, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র- বিশ্বের সবচেয়ে পরাশক্তিধর দেশগুলোর মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে পরাশক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে ওয়াশিংটন ও মস্কো পাল্টাপাল্টি অভিযোগও তুলছে। ঢাকার পক্ষ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হলেও কর্ণপাত করছে না কোনো পক্ষ।

সাবেক কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার সুযোগেই বিদেশিদের হস্তক্ষেপ বাড়ছে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচন ব্যতীত এই সংকট থেকে বের হওয়ায় উপায় নেই।

ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে একটি ‘অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচনের তাগিদ রয়েছে। অন্যদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা থাকার কথা জানাচ্ছে ভারত, চীন ও রাশিয়া।

এদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে।

অন্যদিকে এ অঞ্চলে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ বাংলাদেশেই। প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সফিউল্লাহ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘রুশ জাহাজ চলাচলে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা থাকায় ঠিকঠাক সরঞ্জাম পাঠাতে পারছে না রাশিয়া। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। সময়মতো প্রকল্প শেষ করতে না পারলে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। এটা তাদের দুশ্চিন্তার কারণ। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ যে চক্রের মধ্যে রয়েছে, সেটা অবশ্যই ক্ষতিকর একটি দিক।’

তবে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘আজকের রাশিয়া একসময়ের সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব কখনো ভুলবার নয়। প্রতিবেশী ভারতের অবদানও আমরা জানি। সম্প্রতি রুশ মুখপাত্রের বক্তব্যে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে, এখন বাংলাদেশ সফল এবং উপযুক্ত অবস্থানে আছে।’

গত ২২ নভেম্বর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারবিরোধী পরিকল্পনায় যুক্ত আছেন। দেশটির এমন মন্তব্যে পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। পুনরায় ১৫ ডিসেম্বর রুশ মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা অভিযোগ তোলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনের পর ‘আরব বসন্তের’ মতো বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নীরব থাকার নীতিতে দেখা যাচ্ছে।

এসব পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের সঙ্গে কূটনীতির কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে সাবেক কূটনীতিক তৌহিদ হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নিজের দোষেই বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি। দেশের নির্বাচন ঠিক আছে- এটা প্রচার করে বেড়ানো কূটনীতির কাজ না। কূটনীতির কাজ হচ্ছে কূটনৈতিক কার্যক্রম যথা দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক স্বার্থ টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা এবং উদ্যোগ নেওয়া। ৫২ বছরের বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে পারেনি। এক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলেরই দায় আছে।’

গত ২৪ নভেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পাশাপাশি রাজনীতি ও নির্বাচন প্রসঙ্গ গুরুত্ব পেয়েছে। ঢাকায় ফিরে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সরকারের অঙ্গীকারে আস্থা রেখেছে ভারত।’ সেসময় নয়াদিল্লিতে অবস্থান করা বিভিন্ন মিশনের ৫০ জনের অধিক রাষ্ট্রদূতকে দেশের নির্বাচন পরিস্থিতি ব্যাখা করেছেন এই কূটনীতিক। ভোটের আগে পররাষ্ট্রসচিবের দিল্লি সফর নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় সরব হয়ে ওঠে বিভিন্ন মহল।

বাংলাদেশের করণীয়

পরাশক্তিধরদের তৎপরতা থামাতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো পথ খোলা নেই বলে মনে করেন সাবেক কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা। নয়তো দেশে বিপর্যয় নেমে আসবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।

তবে, ভিন্নমত দিয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী। তিনি আশাবাদ রেখে বলেন, ‘কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব- বঙ্গবন্ধুর এই পররাষ্ট্রনীতির ওপর ভর করেই বাংলাদেশ এগোচ্ছে। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের পথেই আছি। তাই সংকট বা ভয়ের কিছু নেই। এই নির্বাচনের পরপরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে পিটার হাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অভিনন্দনপত্র নিয়ে যাবেন। কারণ সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তিনি নির্বাচিত হবেন।’ বিদেশি হস্তক্ষেপ রোধে দেশের পররাষ্ট্রনীতি বেগবান করার পরামর্শও দিয়েছেন সাবেক এই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

‘পররাষ্ট্রনীতিতে কেউ কারও বন্ধু নয়’ উল্লেখ করে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সফিউল্লাহ বলেন, ‘পরাশক্তিধর দেশগুলো যদি বাংলাদেশকে নিয়ে টানাটানি করে তাহলে বাংলাদেশ টিকবে কী করে? সবাই সবার স্বার্থ দেখেই তৎপরতা চালায়। পরাশক্তিদের এই দ্বন্দ্ব থামাতে না পারলে বিপর্যয় নেমে আসবে।’ এমন পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করাই সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত।

আক্ষেপ প্রকাশ করে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব এবং রাষ্ট্রদূত তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘একটি প্রকৃত সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করাই ছিল একমাত্র উপায়। কিন্তু সে লক্ষ্যে তো হাঁটছি না। তাই এভাবেই পরাশক্তিধর দেশগুলো কথা বলতে থাকবে। শুধু কথাবার্তায় সীমাবদ্ধ থাকলেও অসুবিধা ছিল না। সংকটটা হলো- যেসব হুমকির মুখে আছি, সেসব পদক্ষেপ এলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

(ঢাকাটাইমস/২১ডিসেম্বর/এসআরপি/আরআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

প্রতিমন্ত্রীর শ্যালকের অপহরণকাণ্ড: ১৬ দিনেও গ্রেপ্তার হননি আলোচিত লুৎফুল হাবীব

মে দিবস বোঝে না শ্রমিকরা, জানে ‘একদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হবে’

গামছা বিক্রেতা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, মনে আছে সেই গোল্ডেন মনিরকে?

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন: চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের

গাছ কাটার অপরাধে মামলা নেই 

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :