নগরকান্দায় বিএনপির দু গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত অর্ধশতাধিক

ফরিদপুরের নগরকান্দায় বিএনপির দু গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে কবির ভুঁইয়া (৬৫) নামে এক কৃষকদল নেতা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন উভয় গ্রুপের অর্ধশতাধিক সমর্থক। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরকান্দা পৌর সদরে দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, ফরিদপুর-২ (সালথা-নগরকান্দা) আসনে এমপি পদে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু ও জাতীয় কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল। মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলেছিল। যে কারণে তারা আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচিসহ সভা-সমাবেশ করে আসছিলেন। গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর শামা ওবায়েদ গ্রুপ ও বাবুল গ্রুপ আলাদাভাবে বিজয় মিছিল করেন।
সরকারের পতনের পর প্রথমবারের মতো শোডাউন দিয়ে এলাকায় আসার সিদ্ধান্ত নেন শহিদুল ইসলাম বাবুল। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার দুপুরে নগরকান্দা পৌর সদরে পথসভা করার কথা ছিল তার। বাবুলের আগমন উপলক্ষে একদিন আগে থেকেই তার কর্মী-সমর্থকরা সদরের বিভিন্ন এলাকায় ব্যানার-ফেস্টুন টানান ও তোরণ নির্মাণ করেন। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাতে নগরকান্দা বাজারে থাকা দুটি তোরণ ভেঙে ফেলা হয়। ঘটনাটি নিয়ে মঙ্গলবার রাতভর রিংকু ও বাবুল গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এরই জেরে বুধবার সকালে নগরকান্দা পৌর সদরের জুঙ্গুরদী বাসস্ট্যান্ড, ছাগলদী মোড় ও তেলের পাম্পের সামনে উভয় গ্রুপের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। একপর্যায় বেলা ১১টার দিকে বাবুল গ্রুপের সমর্থকদের ধাওয়া দিয়ে নগরকান্দা পৌর সদর বাজার নিয়ন্ত্রণে নেয় রিংকুর সমর্থকরা। সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের অন্তত ৫০ জন আহত হন। আহতদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও নগরকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে কবির ভুঁইয়া নামে এক কৃষকদল নেতা হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। তিনি শহিদুল ইসলাম বাবুলের সমর্থক।
শহিদুল ইসলাম বাবুলের অনুসারী কোদালিয়া-শহিদনগর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুজ্জামান অনু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পতনের পর কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল তার নিজ এলাকা নগরকান্দায় আসার জন্য বুধবার সকালে ঢাকা থেকে রওনা হন। আমরা তাকে স্বাগত জানানোর জন্য নগরকান্দা পৌর সদরে অবস্থান নিয়েছিলাম।
কিন্তু অবস্থানরত নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ রিংকর সমর্থকরা। হামলার সময় রিংকুর সমর্থকদের সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজনও ছিল। শুধু তাই নয়, তারা কৃষকদলের এক নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করে। তাছাড়া বাবুলের কয়েকটি তোরণ ভাঙচুর করে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এত বড় বিজয়ের পর একজন কেন্দ্রীয় নেতা এলাকায় আসতে পারবেন না, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকুর অনুসারী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান বাবুল বলেন, ‘বুধবার সকাল ১০টায় স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নগরকান্দায় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মিরান। একই সময় কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের পথসভা করার উদ্যোগ নেয় তার সমর্থকরা। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতির সাথে বাবুলের সমর্থকদের কথা কাটাকাটি হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘কৃষকদলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা আসবেন আমরা বিএনপির নেতারা কিছুই জানি না। তিনি আমাদের অবগতও করেননি। তিনি বহিরাগত ও অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে এলাকায় ঢুকেন। তার বহিরাগতরা সমর্থকরা মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে আসার সময় ভবুকদিয়া এলাকায় ফায়ার করেন। এসব ঘটনা নিয়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। একপর্যায় কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষ বাধে।’
ফরিদপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল-নগরকান্দা) মো. আসাদুজ্জামান শাকিল বলেন, ‘সহিংসতার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। পরিবেশ শান্ত রাখতে পৌর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি।’
(ঢাকা টাইমস/২১আগস্ট/এসএ)

মন্তব্য করুন