পাটের পলিথিনের জন্য অপেক্ষা শেষ

নিজস্ব প্রতিবেদ, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১২ মে ২০১৭, ১০:২৫| আপডেট : ১২ মে ২০১৭, ১৪:১৩
অ- অ+

পরিবেশ দূষণ আর পানি নিষ্কাষণ পথের জন্য অন্যতম বাধা পলিথিন সমস্যার সমাধানের পথ বের করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। নিষিদ্ধ করেও যখন পলিথিনের কিছু সুবিধার কারণে এটিকে বন্ধ করা যাচ্ছে না, তখন তারা বিকল্প এক ধরনের পলিথিন উদ্ভাবন করেছেন যা তৈরি হবে পাট দিয়ে। এই পলিথিন অল্প দিনেই মাটিতে মিশে যাবে। আজ রাজধানীর ডেমরায় লতিফ বাওয়ানী জুট মিলসে এই পলিথিন উৎপাদন কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম।

জুন মাসেই বাজারে ছাড়া হবে এই ব্যাগ। গত মার্চে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বহুমুখী পাটপণ্যের মেলায় বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) স্টলে প্রদর্শন করা হয় এই ‘পাট পলিমার’।

দুই রঙের দৃষ্টিনন্দন পাটের পলিথিন ব্যাগগুলো চার কোণ আকৃতির। বাজারে প্রচলিত পলিথিন ব্যাগের মতোই হালকা ও পাতলা।

বিজেএমসির উপব্যবস্থাপক নৃপেন্দ্রনাথ হিরা ঢাকাটাইমসকে জানান, মোবারক খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিএএফআরই) বিজ্ঞানীরা পাট পলিমার তৈরি করছেন। এটি পলিথিনের বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন মোড়কজাতীয় পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হবে।

পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা পাট থেকে পরীক্ষামূলকভাবে পলিথিন উৎপাদন শুরু করেছি। তিন মাসের মধ্যে প্রকল্পের মাধ্যমে বড় পরিসরে কাজ শুরু হবে। আশা রাখি আগামী জুন মাসে ‘পাটের পলিথিন’ বাজারে পাওয়া যাবে। এ পলিথিন মাটিতে পচে যাবে।’

বাজারে প্রচলিত অপচনশীল পলিথিন মাটি কিংবা পানিতে শত শত বছর পড়ে থাকলেও ধ্বংস হয় না। এ সময়ে এটি থেকে ছড়ায় পরিবেশ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদান।

এই পলিথিনে পাটের সুদিন ফেরানোর স্বপ্নও দেখছে সরকার। সেই সঙ্গে পাটকলকে লোকসান থেকে লাভে ফেরানোর এই পলিথিনই হতে পারে অস্ত্র। এ ব্যাপারে মির্জা আজম বলেন, ‘সারা বিশ্ব এখন পলিথিনের বিকল্প খুঁজছে। আমরা এ বাজার ধরতে পারি। পাট পলিথিনের একমাত্র জোগানদাতা হবে বাংলাদেশ। আমাদের পরিকল্পনা আছে, সারা বিশ্বের পাটের পলিমার ব্যাগের বাজার দখল করার।’

বাংলাদেশে পলিথিন

আশির দশক থেকে বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার শুরু। নব্বইয়ের দশকে ব্যাপক আকার ধারণ করে এর ব্যবহার। পলিথিনের অতি ব্যবহারের কারণে ১৯৯৮ সালের বন্যায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে পলিথিন নিষিদ্ধের দাবি জোরালো হয়। পরে ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বাজারজাত ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়।

১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ৬(ক) (সংশোধিত ২০০২) ধারার প্রদত্ত ক্ষমতা বলে ঘোষিত সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের পলিথিন ব্যাগ অর্থাৎ পলিইথাইলিন, পলিপ্রপাইলিন বা এর কোনো যৌগ বা মিশ্রণের তৈরি কোনো ব্যাগ, ঠোঙা বা যেকোনো সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়, কোনো কিছু রাখার কাজে বা বহনের কাজে ব্যবহার করা যায় তার উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা ব্যবহার সমগ্র দেশে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। এই আইনের ১৫(১) এর ৪(ক) ধারা অনুযায়ী উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণের জন্য অপরাধীদের সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাসের কারাদণ্ডের বিধান আছে।

নিষেধাজ্ঞার পর বিভিন্ন সময় বাজারে অভিযান ও নজরদারির মাধ্যমে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বহুলাংশে বন্ধ করা সম্ভব হয়েছিল। এ সময় বিকল্প হিসেবে কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগের প্রচলন হয় বেশ।

পরবর্তী সময়ে বিশেষ করে ২০০৭ সাল থেকে পলিথিন নিয়ে নজরদারি শিথিল হয়ে পড়লে আবার ব্যাপক হারে বাড়তে থাকে এর ব্যবহার। বর্তমানে বাজার সয়লাব পলিথিনে। একটা ডিম থেকে ১০ কেজি চাল- পলিথিন ব্যাগে ভরে দিচ্ছে বিক্রেতা। ব্যবহার শেষে এসব পলিথিন ফেলা হচ্ছে নালা-নর্দমা, এখানে-সেখানে। এতে জলাবদ্ধতা, বন্যা, জনস্বাস্থ্য সমস্যার জন্য হুমিকর সৃষ্টি হচ্ছে।

বিভিন্ন সময় পলিথিনের ক্ষতিকর দিক নিয়ে মতামত দেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, পলিথিন থেকে সৃষ্ট এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ক্যান্সার ও ত্বকের বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে। ডায়রিয়া ও আমাশয় রোগও ছড়াতে পারে। রঙিন পলিথিনে ব্যবহৃত ক্যাডমিয়াম শিশুদের হাড়ের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়। পলিথিনের কাপে চা পান করলে আলসার ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। অন্যদিকে পলিথিনের প্রভাবে মাটির চারটি উপাদান সমভাবে সংবন্ধিত হতে পারে না। ফলে উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। এতে বৈচিত্র্য নষ্ট হয়।

মাটিতে চাপা পড়া পলিথিন কৃষিজমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এর কারণে মাটির অণুজীবগুলোর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে না। মাটির নিচে পানি চলাচলেও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। এর ফলে মাটির স্বাভাবিক কাজগুলো ব্যাহত হচ্ছে।

পলিথিন কী

বাজারে প্রচলিত পলিথিন আসলে পলিইথাইলিন। এটি এক ধরনের পলিমার, যা শক্ত, সাদা ও স্বচ্ছ বস্তু। বর্তমানে দুই ধরনের পলিথিন উৎপাদিত হয়- কম ঘনত্বের নরম পলিথিন এবং উচ্চ ঘনত্বের পলিথিন। পলিথিন তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় অপরিশোধিত খনিজ তেল।

ঢাকাটাইমস/১২মে/ডব্লিউবি

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
জয়পুরহাটে জামিন নিতে গিয়ে কারাগারে দুই আ. লীগ নেতা
সামিট-ইউনাইটেডসহ ১৫৮ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নথি নিল দুদক, ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লুটপাট ১ লাখ কোটি
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধে উদ্বিগ্ন ভারত
নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনতে হবে: আমির খসরু
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা