তামাক কোম্পানির মতামত না নিতে সরকারের প্রতি জোরালো দাবি ডর্পসহ বিভিন্ন সংগঠনের

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাস করার দাবি জানিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডর্প (ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পুয়র)।
তারা বলছে, সংশ্লিষ্টদের এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল (WHO FCTC)–এর আর্টিকেল ৫.৩ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট ২০২৫) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসির বাস্তবায়ন ও আর্টিকেল ৫.৩ প্রতিপালনে সরকারের কাছে প্রত্যাশা’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও তামাক নিয়ন্ত্রণে যুক্ত নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ সাপোর্ট ট্রাস্টের সভাপতি ড. আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘দেশে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে মারা যায় প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ এবং আরও লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয় নানা অসুস্থতায়। অথচ তামাক কোম্পানিগুলো মুনাফার আশায় মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে যে, আইন পাস হলে সরকার রাজস্ব হারাবে।’
তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হলো, ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন ও ২০১৩ সালের সংশোধনের পর গত ১৮ বছরে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে সাড়ে ১২ গুণ। আর ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে তামাক ব্যবহার ১৮ শতাংশ কমেছে। এটি প্রমাণ করে, তামাক নিয়ন্ত্রণের ফলে রাজস্ব ক্ষতি হয় না, বরং জনস্বাস্থ্য উপকৃত হয়।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, ‘সম্প্রতি গঠিত উপদেষ্টা কমিটি বলেছে, সংশোধনী প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের (তামাক কোম্পানির) মতামত নেওয়া উচিত—এটি WHO FCTC–এর আর্টিকেল ৫.৩-এর সরাসরি লঙ্ঘন। বাংলাদেশ এই কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী দেশ হওয়ায় সরকার এ ধারা লঙ্ঘন করতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকারকে জোরালোভাবে আহ্বান জানাচ্ছি—তামাক কোম্পানির সাথে আলোচনার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করুন এবং প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাস করুন।’
ঢাকা আহছানিয়া মিশন–এর স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের খসড়ায় যেসব প্রস্তাব রয়েছে—যেমন: ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান (DSA) বাতিল, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ, ই-সিগারেট নিষিদ্ধ, তামাক কোম্পানির CSR কার্যক্রম বন্ধ এবং খুচরা বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ—এসব বাস্তবায়নের জন্য সংশোধনীটি দ্রুত পাস করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে ডর্প-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এএইচএম নোমান বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন যে WHO FCTC এর ৫.৩ ধারা অনুযায়ী তামাক কোম্পানির সঙ্গে সরকার আলোচনায় বসতে পারে না। তাহলে উপদেষ্টা কমিটি কীভাবে তাদের মতামত গ্রহণের প্রস্তাব দেয়?’
তিনি বলেন, ‘আমরা জোরালোভাবে আহ্বান জানাচ্ছি—তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের জন্য গঠিত উপদেষ্টা কমিটির কাছে তামাক কোম্পানির সাথে বৈঠকের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। তামাকের ভয়াবহতা থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হলে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’
(ঢাকাটাইমস/২৬আগস্ট/এসএস)

মন্তব্য করুন