ইউএনওর বিষয়ে আদেশ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বিচারকের ‘অসত্য’ দাবি

তন্ময় তপু, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৪ জুলাই ২০১৭, ১৩:৪২ | প্রকাশিত : ২৪ জুলাই ২০১৭, ১৩:০৭

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে বরগুনায় কর্মরত) গাজী তারিক সালমনকে মানহানির মামলায় জামিন বিষয়ক আদেশের বিষয়ে বিচার মাহাম্মদ আলী হোসাইন সুপ্রিম কোর্টে অসত্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির মামলায় বিচারক আলী হোসাইন প্রথমে ইউএনওর জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠান বলে গণমাধ্যমে খবর প্রচার হয়েছে। তবে এ নিয়ে বিতর্ক উঠলে সুপ্রিম কোর্ট বিচারকের কাছে ব্যাখ্যা চাইলে তিনি দাবি করেন, তিনি ইউএনওকে জামিন দিয়েছিলেন।

মেট্রোকোর্ট, বিএসএস বরিশালের হাজতখানার আসামি গ্রহণ রেজিস্ট্রারে ১৯ জুলাই প্রথম নামই রয়েছে গাজী তারিক সালমনের। এ সংশ্লিষ্ট কাগজ হাতে রয়েছে ঢাকাটাইমস এর কাছে।

আরও পড়ুনঃ সার্কিট হাউজের বকেয়া পরিশোধ করলেন ইউএনওর মামলার বিচারক

বিচারক ব্যাখায় বলেছিলেন- গাজী তারিক সালমনের জামিন মঞ্জুর করা হয়। তবে রেজিস্ট্রারের হিসেবে দেখা যাচ্ছে গাজী তারিক সালমনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। অর্থাৎ হাজতের রেজিস্ট্রারে প্রথম নামই লেখা হয় ইউএনওর। রেজিস্ট্রারটিতে ইউএনও সালমনের নাম ছাড়াও রয়েছে তার বাবা আবদুর রহমানের নাম। ঠিকানাও দেয়া হয়েছে সাতক্ষীরা।

রবিবার বরিশাল সিএমএম কোর্টের বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসাইন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর চিঠিতে লিখেন, ‘আাদালতের কার্যপ্রণালী শেষে এজলাস ত্যাগ করে খাস কামরায় এসে শুনি ইউএনও-র জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে মর্মে অনলাইন মিডিয়ায় সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে তার জামিন আবেদন একটি বারের জন্যও নামঞ্জুর করা হয়নি। ফলে জেল হাজতে পাঠানোর কোন প্রশ্নই উঠে না।’

ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়, ‘ইউএনও-র পক্ষে নথি দাখিল হলে এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতির অবসান হলে জামিনের আবেদন এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ২০৫ ধারার আবেদন আইনানুগ প্রক্রিয়া পালনপূর্বক মঞ্জুর ক্রমে জামিন প্রদান করা হয়। ইউএনওর আদালত কক্ষ ত্যাগের পরে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা যাতে বিঘিœত না হয় এবং অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি পরিহারের জন্যই আমি তৎক্ষণাৎ জামিনের দরখাস্তের আদেশ না দিয়ে নথি দাখিল হলে শুনানি শেষে আদেশ দেয়া হবে বলে উদ্ভূত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছি।’

‘মামলাটির শুনানি চলাকালে উৎসুক জনসাধারণের রোষানল হতে ইউএনও-র ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য শুনানি মুলতবি করা হয়। ইউএনওর আইনজীবী মোখলেছুর রহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাগজাত (নথি) দাখিল করতে বলি এবং মৌখিক আদেশ দেয়া হয় যে, নথি দাখিলের পরে পুনরায় শুনানি হবে। আমি তখন ইউএনওকে আদালত কক্ষে বসাতে বলি। আদালতে কর্তব্য পালনরত পুলিশ সদস্যগণ ইউএনও-র সার্বিক ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতে সাধ্যমত চেষ্টা করেন।’

ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘ইউএনওকে আদালতের কাঠগড়া হতে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে আদালতের কক্ষে বসানোর জন্য আদালত কক্ষের এক দরজা দিয়ে বের হয়ে বারান্দা ব্যবহার করে অন্য দরজা দিয়ে আদালত কক্ষে আনতে হয়েছে। এই সময়ে মিডিয়ার কর্মীরা বা অন্য কেউ কোন ছবি তুলেছেন কিনা তা অবলোকন করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এই সময়ে কি সংবাদ প্রচার করা হয়েছে তাও আমি বিচারকার্য পরিচালনাধীন থাকায় তা জানতে পারিনি।’

আরও পড়ুনঃ সার্কিট হাউজের সাত মাসের ভাড়া দেননি ইউএনওর মামলার বিচারক

বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করে উপজেলা প্রশাসনের আমন্ত্রণপত্রে ছাপানোর অভিযোগ এনে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার সাবেক ইউএনও গাজী তারিক সালমনের বিরুদ্ধে ৭ জুন মামলা দায়ের করেন বরিশাল আওয়ামী লীগের সে সময়ের ধর্ম বির্ষক সম্পাদক সৈয়দ ওবায়েদ উল্লাহ সাজু। ১৯ জুলাই তারিক সালমন আদালতে জামিন আবেদন করলে তাকে জেল হাজতে প্রেরনের নির্দেশ দেয় আদালত। পরে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল সাপেক্ষে তারিক সালমনের জামিন আবেদন মঞ্জুর করা হয়। যা খোদ বাদী পক্ষ এবং বিবাদী পক্ষ উভয় পক্ষই সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।

১৯ জুলাই এর বক্তব্যে বরিশাল সিএমএম কোর্টের এপিপি রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, ‘বিচারক প্রথমে ইউএনওকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন এবং পরে কী কারণে, কীভাবে জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন সেটা জানা নেই আমাদের। বিচারক জামিন আবেদন মঞ্জুর করলেও বাদী পক্ষ বিষয়টি জানতেন না।’

বিবাদী পক্ষের আইনজীবি মোখলেসুর রহমান বলেছিলেন প্রথমে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হলেও পরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের পর জামিন মঞ্জুর করে আদালত। কিন্তু এর মধ্যে প্রায় দুই ঘন্টা তারিক সালমনকে হাজতে থাকতে হয়।

বিষয়টি স্বীকার করেছেন খোদ গাজী তারিক সালমনও। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ায় আমি মূগূর্তের মধ্যে হতভম্ভ হয়ে পরি। পরে আমার আইনজীবী আদালতে আবেদনের প্রেক্ষিতে আমাকে পুনরায় আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়, তবে আমি এজলাসে দাড়িয়ে থাকলেও বিচারক মহোদয় আমার সামনে আসেননি। তিনি খাস কামড়ায় বসেই আমার জামিন আবেদন পরবর্তীতে মঞ্জুর করে এবং পূর্বের আদেশের কমিটি আমার সামনেই ছিঁড়ে ফেলে ওই আদালতের সংশ্লিষ্টরা।’

তবে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ইউএনও সালমনের জামিন যে নামঞ্জুর করা হয়নি তার নথি আমাদের কাছে আছে। আমরা এই মামলার সব নথি তলব করেছি।’

তারিক সালমনের এই ঘটনাটি তোলপাড় হয়েছে প্রশাসনে। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার বিরুদ্ধে এই মামলায় নাখোশ হয়েছেন। পরে মামলার বাদী আওয়ামী লীগ নেতাকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে ক্ষমতাসীন দল। আর সমালোচনার মুখে রবিবার তিনি মামলা প্রত্যাহার করে নেন।

ইউএনও তারিক সালমন যে ছবি ব্যবহার করে মামলার শিকার হয়েছিলেন, সেই ছবিটি এঁকে শিশু অদ্রিজা কর গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে পুরস্কার পেয়েছিল। আগৈলঝাড়ার উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোর্তজা খান। ইউএনও সালমন গণমাধ্যমকর্মীদেরকে জানিয়েছেন, আগৈলঝাড়ায় দায়িত্ব পালনের সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে তার দ্বন্দ¦ হয়েছিল। এর জেরেই এই মামলা হয়েছে বলে তার অভিযোগ।

ঢাকাটাইমস/২৪জুলাই/টিটি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ভাঙ্গা-রাজবাড়ী-ঢাকা রুটে আসছে নতুন ২ জোড়া ট্রেন

‘৭ জানুয়ারি আ.লীগ প্রার্থীকে জেতাতে অপকর্ম করেছি’, আ.লীগ নেতার বক্তব্য ভাইরাল

পিরোজপুর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ

গজারিয়ায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

প্রশ্নফাঁসে জড়িত ডা. তারিমের ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে লাখ টাকা জরিমানা

পূবাইলে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ

চাঁদপুরে ইলিশ ধরার প্রস্তুতি জেলেদের

দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৩.৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা যশোরে

সিলেটের ৪ উপজেলায় ২৫ চেয়ারম্যান প্রার্থী, ৯ জন স্বশিক্ষিত

পাইনাপেল সিল্ক উৎপাদনে আমাদের সহযোগিতা থাকবে: সমাজকল্যাণমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :