ডেঙ্গু পরীক্ষায় উপচেপড়া ভিড়
দুপুর ১২টা। তাসলিমা রহমান তার ছেলে রিয়াজের কাঁধে ভর দিয়ে মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) ফটক দিয়ে বের হচ্ছেন। তাদের হাতে কিছু ডাক্তারি ব্যবস্থাপত্র। সেখানে তাদের সঙ্গে কথা হলে রিয়াজুল জানান, ডেঙ্গু হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতে রক্তের পরীক্ষা করিয়ে বের হচ্ছেন। তার মায়ের ডেঙ্গু হয়েছে।
তাদের সঙ্গে কথা শেষ করে আইসিডিডিআরবির রোগ পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, পুরো কক্ষ কানায় কানায় পরিপূর্ণ। সেখানে রোগীদের জন্য রাখা একটি চেয়ারও ফাঁকা নেই। নতুন করে যারা রোগ পরীক্ষা করাতে এসেছেন তাদের অনেকেই দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে বিরক্ত হয়ে কক্ষের বাহিরে সিঁড়িতে পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছেন।
আইসিডিডিআরবিতে সকাল ১০টা থেকে বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা শুরু হয়। গতকাল দুপুর ১২টায় গিয়ে দেখা যায়, ৩৭৯ নম্বর সিরিয়াল চলছে। অর্থাৎ সকালে চার ঘণ্টায় প্রায় ৪০০ রোগী নানা পরীক্ষা করিয়েছেন। আর এদের মধ্যে বেশিরভাগই আসেন ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে।
আইসিডিডিআরবির পরীক্ষা কক্ষে কয়েকজন নার্সের ভাষ্য অনুযায়ী, এখানে অনেক রোগী পরীক্ষা করাতে আসেন। তবে গত কয়েক দিনে রোগীর পরিমাণ বেড়ে গেছে।
সোনিয়া তার কন্যাসন্তান নাজিয়াকে নিয়ে বসে আছেন। ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘গত কয়েকদিন থেকে মেয়েটার জ¦র। প্রাথমিক সব চিকিৎসা দিয়েছি, কিন্তু জ¦র সারছে না। তাই এখানে নিয়ে এসেছি ডেঙ্গু হয়েছি কি না সেটা পরীক্ষা করার জন্য। এখন অপেক্ষা করছি সিরিয়ালের জন্য।’
সোনিয়ার সঙ্গে কথা শেষ করে কথা হয় আরেক মায়ের সঙ্গে। তিনিও তার শিশুর ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে এসেছেন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। আইসিডিডিআরবির গত কয়েকদিনে পরিমাণ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে সেটা জানার জন্য বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। কিন্তু কেউই এই প্রতিবেদন দিতে রাজি ছিলেন না। আর একেকজন আরেকজনের কাছে তথ্যের জন্য ঠেলে দিচ্ছিলেন।
সেখানে ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্ট্রির প্রধান সায়েদা মোমেনা আফসানা বলেন, জনসংযোগ বিভাগ এ বিষয়ে তথ্য দিতে পারে। সেখানে যোগাযোগ করা হলে প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা তারিফুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের অরগানাইজেশনের নিয়ম অনুযায়ী আমরা এটা প্রকাশ করি না। আমি বলতে পারব না, এটা বলার নিয়ম নাই।’
গত কয়েক দিনে ঢাকায় ব্যাপক হারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশিতে ঝুঁকিতে পড়েছে শিশুরা।
আইসিডিডিআরবি ছাড়াও আরও কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা পরিস্থিতি ঘুরে দেখেছেন এই প্রতিবেদক। হাসপাতালে ঘুরে দেখা যায়, ডেঙ্গু রোগী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে তারা।
হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, গত কয়েকদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে ৬৯৭ জন। এদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে ভর্তি ১৫০ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, ঢাকা শহরের সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ১২ হাসপাতাল এবং বেসরকারি ১৭টি হাসপাতালে গতকাল ২ হাজার ৫৮ জন রোগী ভর্তি ছিল। আর এ মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৪২১। এ বছর এ পর্যন্ত আক্রান্ত ৮ হাজার ৫৬৫ জন।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক হিসাব বলছে, হাসপাতালভিত্তিক সরকারি হিসাবে মাত্র ২ শতাংশ রোগীর তথ্য পায় সরকার। আবার অনেকে ডেঙ্গু শনাক্তের পরও বহির্বিভাগ থেকে চলে যাচ্ছে বাসায়। যারা ভর্তি হতে আসছে, তাদের সামাল দিতেই হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে।
ঢাকাটাইমস/২৬জুলাই/এনআই/ডব্লিউবি/এমআর