ভূবনমোহিনী হাসির অধিকারী একজন মানুষের গল্প

সোয়েব হোসেন শামীম
  প্রকাশিত : ০৬ এপ্রিল ২০২১, ১৪:২০
অ- অ+

ঢাকা মাঠে এদেশের ফুটবলে কুশলী রাইট উইং ব্যাকের অভাব না থাকলেও লেফট উইং ব্যাকের বিশাল শূন্যতা ছিলো। স্বপন কুমার দাস, ইমতিয়াজ সুলতান জনি, দস্তগীর নীরা, মাসুদ রানা ও ওয়ালী ফয়সালসহ যাদের নামই বলি না কেন, সবার আগে যে নামটি চলে আসবে তিনি ‘খন্দকার রকিবুল ইসলাম রকিব’।

পরীক্ষিত ও প্রমাণিত রক্ষণের বাম সাইডে তিনি সেরাদের সেরা। সে সময়ের বাংলাদেশ জাতীয় দলের সেরা একাদশে লেফট উইং ব্যাক হিসেবে তার বিকল্প কাউকে ভাবাই যেত না, সে সময়ে দেশে তিন প্রধান দল মোহামেডান, আবাহনী ও বিজেএমসিতে পালাক্রমে খেললেও সাফল্য পেয়েছেন মোহামেডানেই। ১৯৭৫ ও ১৯৭৬ সালে লীগ জয়ী মোহামেডান দলের গুরুত্বপূর্ণ ও গর্বিত সদস্য খন্দকার রকিব, খেলোয়াড়ী জীবনে এ দুটি লীগ টাইটেল না জিতলে জীবনে বিশাল অপূর্ণতা থেকে যেত।

বাংলাদেশ জাতীয় দলেও লেফট উইং ব্যাকে ছিলেন স্বমহিমায় উদ্ভাসিত, যেমনি ছিল চেজিং ও স্লাইডিং তেমনি ছিল ওভারল্যাপিং। যখন যে দলে খেলেছেন সে দলের জন্য শতভাগ উজাড় করে দিয়েছেন লেফট উইং ব্যাকের ক্ষণজন্মা এ প্রাণপুরুষ।

এদেশের মাটিতে জন্ম নিয়ে জাতির ঋণ শোধ করেছেন জাতীয় দলে নিজেকে শতভাগ উজাড় করে দিয়ে। রক্ষণ ভাগের খেলোয়াড় হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে ডিফেন্ডারকে বিধি বহির্ভূতভাবে ট্যাকল করতে হয়, এমন দুচারটি ঘটনা আমি নিজেই দেখেছি রেফারি জেড আলম, মুনির হোসেন, আব্দুল আজিজ, আবদুর রশিদ পকেটে হাত দিয়ে তেড়ে গেছেন রকিব ভাইয়ের দিকে। সামনে গিয়েই তার প্রাণখোলা ভূবনমোহিনি হাসি দেখেই কার্ড বের করা তো দূরের কথা; উল্টো হেসে রকিব ভাইয়ের কাছ থেকে রেফারিকে ফিরে আসতে হয়েছে। হামিদুজ্জামান নোমান নামে ঢাকা মাঠের এক রেফারি একদিন আমার সামনেই বলেছেন যত রুদ্রমূর্তি নিয়েই রকিবের কাছে যান না কেন, তাকে কার্ড দেখানো তো দূরের কথা, তার হাসিতেই আপনি কুপোকাত হয়ে যাবেন। মনে হয় তার শরীরে টগবগে গরম পানি ঢেলে দিলেও তার মুখে হাসি ছাড়া কোনো শব্দ বেরুবে না।

আমরা গ্যালারিতে বসে যতদিন তার খেলা দেখেছি তাকে মেজাজ হারাতে দেখিনি, এখনও ঢাকা মাঠে তার খেলা যারা দেখেছেন যদি সবথেকে ভদ্র কোনো খেলোয়াড়ের নাম আপনার কাছে জানতে চাওয়া হয় নিশ্চিতভাবেই আপনি রকিব ভাইয়ের নামটি বলতে বাধ্য হবেন। এখনো মোবাইলে কথা বললে তার ভূবনমোহিনী প্রাণখোলা হাসির অস্তিত্ব আপনি টের পাবেন।

১৯৭৯ সালে আঁগাখান গোল্ডকাপে আবাহনীর বিরদ্ধে বার্মার রাইট উইংগার মংমং সিনাই রকিবের সাথে পেরে না উঠে তাকে ধাক্কা মারেন, রকিব প্রতিবাদ করেন হাতে বা পায়ে নয়, মুখের সেই হাসি দিয়ে। মংমং অবাক হয়ে যান একজন মানুষ এতোটা বিনয়ী হয় কিভাবে?

১৯৮৪ সালে আবাহনীর আশিষ ভদ্রের সাথে বল দখলের লড়াইয়ে আশিষ দা চটে যাওয়ার আগেই রহমতগঞ্জের রকিব ভাইয়ের হাসিতে আশিষদার ও পাল্টা হাসির দৃশ্যটা এখনো মন থেকে মুছেনি। সে খেলাটি অবশ্য দুঃখজনকভাবে পরিত্যক্ত হয় গাফফারের গোলটি অফসাইডের অজুহাতে বাতিল হওয়ার কারণে। লম্বা থ্রোইনেও বিশেষ পারদর্শী ছিলেন রকিব ভাই। হাসির এই যাদুকর খেলার পাশাপাশি হাসি দিয়ে মোহাবিষ্ট করে রাখতেন ঢাকা মাঠের ফুটবল প্রেমীদের। এমন একজন রকিবের প্রতিচ্ছবি মনে হয় আপনি কোনোকালেই খুজে পাবেন না, বর্তমানে ঢাকায় আছেন, ভাবেন ও কাজ করেন এদেশের ফুটবল নিয়ে। স্বপ্ন দেখেন এদেশের ফুটবল আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার।

এই স্বপ্নদ্রষ্টার জন্য শুভ কামনা থাকলো ফুটবলের সাতকাহন পরিবারের। ভালো ও সুস্থ থাকুন। দীর্ঘজীবন লাভ করুন দেশের ক্ষণজন্মা লেফট উইং ব্যাক ও প্রাণখোলা হাসির অধিকারী খন্দকার রকিব ভাই।

লেখক: ক্রীড়ামোদী

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সেলিম উদ্দিন গ্রেপ্তার
আন্দোলনকারীদের আইনি সুরক্ষা এবং গণঅভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন
জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করছেন প্রধান উপদেষ্টা
কুবিতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা