সামনে হয়তো করোনার নতুন কোনো ভেরিয়েন্ট আসবে

আহমেদ রশিদ জয়
 | প্রকাশিত : ০৫ জুলাই ২০২১, ১৫:৫২

২০২০ সালে করোনা নিয়ে আমরা যা যা শিখেছি, দেখেছি এবং বিশ্বাস করেছি, ২০২১ সালের সেগুলার অধিকাংশ উল্টো বা ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। কিছু উদাহরণ দিচ্ছি।

১) ২০২০ সালের মার্চে নিউইয়র্কে যখন অনেক ভারতীয়, পাকিস্তানি আর বাংলাদেশি করোনায় মারা যাচ্ছিলেন তখন নেপালিদের ব্যাপারে বলা হলো এদের ইমিউন সিস্টেম অনেক শক্তিশালী। পাহাড়ি এলাকায় বেড়ে উঠার কারণে এরা স্ট্রং; করোনায় তেমন একটা কাবু হয়নি। অথচ ২০২১ সালের গেল এপ্রিল-মে মাসে ভারতের সাথে সাথে নেপাল, ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্টে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

২। ২০২০ সালে কোভিড মোকাবিলায় ভারতের কেরালা মডেল ছিল বহুল প্রশংসিত। অথচ এবার এপ্রিল-মে তে ঐ একই কেরালা সরকার, রাজ্যে করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে হিমশিম খায়।

৩। ২০২০ সালে আমাদের ধারণা ছিল করোনা গ্রামেগঞ্জে হয় না, শহুরে এলাকায় হয়। এ বিষয়ে ব্যখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, করোনা বন্ধ এসি ঘরে বেশি ছড়ায়। গ্রামের মানুষ খোলামেলা পরিবেশে, এসি ছাড়া বসবাস করে তাই সেখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কম। এবার ভারত, বাংলাদেশ আর নেপালের গ্রামেগঞ্জে করোনার আক্রমণ অনেক।

৪। গতবছর পর্যন্ত জেনেছি অল্প বয়সী যুবক-যুবতীদের করোনা হয় না। এবছর এরাও রেহাই পায়নি।

৫। সর্বোপরি, গত বছরে দক্ষিণ এশিয়ায় করোনার ঢেউ, পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম হওয়ায়, সেটা ব্যাখ্যা করতে দুই একটি রিসার্চ করা হয়। সেখানে "হাইজিন হাইপোথিসিস" টেনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ যেহেতু আনহাইজেনিক পরিবেশে থাকে, ভেজাল খায় আর দূষিত বায়ুর নিশ্বাস নেয়, এদের ইমুইন সিস্টেম করোনা সেভাবে ব্রেক করতে পারেনি। অথচ এবছর করোনায় দক্ষিণ এশিয়া বিপর্যস্ত।

গত বছরে যা যা বলা হয়েছিল সেগুলো ভুল ছিল না। যেটা ঘটেছে তা হলো নতুন স্ট্রেনের আবির্ভাব। নতুন স্ট্রেন এসে সব হিসেব পালটে দিয়েছে। ব্রিটিশ স্ট্রেনে একরকম, ডেল্টা প্লাসে এক রকম। সামনে আরো অনেক স্ট্রেন আসবে। এরপর এমনও হতে পারে নতুন স্ট্রেনে দিন মজুর, রিক্সাওয়ালা, গৃহ পরিচারিকারাও আক্রান্ত হতে পারে।

সমাধান এখনো একটাই, মাস্ক পড়ে সাবধানে থাকা। এতদিন জেলা শহর বা গ্রামে যারা আছেন, ঢাকা থেকে মাস্ক পড়ে কেউ গেলে তাদেরকে নিয়ে হাসাহাসি করতেন। আশা করছি এখন থেকে সেটা আর করবেন না।

এবার স্পষ্ট বোঝা গেল, ডেল্টা প্লাস বাইরোডে এসেছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলো হয়ে ঢাকায় এসেছে। ব্রিটিশ স্ট্রেন বাই এয়ারে এসেছিল। বর্ডার পোর্টগুলো বন্ধ করার পরেও এই স্ট্রেন আসলো। আসলে এসেছে ইনফরমাল চ্যানেলে বা 'ব্যালাকে'।

ভারতের জনসংখ্যা ১৩০ কোটি। বাংলাদেশের ১৭ কোটি। এই হিসেবে ভারত প্রায় ৮ গুন। তুলনা করার সময় আমি ৮ দিয়ে গুন বা ভাগ করে থাকি। যেমন মে মাসে ভারতে সর্বোচ্চ শনাক্ত হত দৈনিক ৪ লাখ করে। ৮ দিয়ে ভাগ দিলে হয়, দৈনিক ৫০ হাজার। এখন বাংলাদেশে দৈনিক আক্রান্ত হচ্ছে ৮-৯ হাজার। এতেই খবর পাচ্ছি অক্সিজেন নাই, হাসপাতালে সীট নাই। আর আমাদের দৈনিক ৫০ হাজার আক্রান্ত হলে আমরা কি করব?

আমাদের ডাবল ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে ৪৫ লাখ মানুষকে। সিংগেল ডোজ দেয়া হয়েছে আরো ১৫ লাখ মানুষকে। এর মধ্যে চীন আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা আসলো ৪৫ লাখ ডোজ। এতে আরো ২২ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া যাবে। সর্বমোট ৮৫ লাখ হবে। বাকি টিকা কোথা থেকে আসবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। আসলে ৫-৬ কোটি মানুষকে টিকা না দিলে নতুন নতুন স্ট্রেন আসতেই থাকবে। সুতরাং, আমাদের করোনার সাথেই মনে হচ্ছে পার্মানেন্টলি বসবাস করতে হবে। আল্লাহ মালিক।

লেখক: ব্যাংক কর্মকর্তা

ঢাকাটাইমস/৫জুলাই/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :