কী আছে অ্যালকোহল বিধিমালায়, জানুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:৪১

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রথমবারের মতো অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। এই বিধিমালার আওতায় ২১ বছরের নিচে কেউ মদপানের অনুমতি পাবে না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের করা এই বিধিমালায় মূলত মাদকদ্রব্য কোথায় বেচাকেনা হবে, কোথায় বসে মদপান করবেন, পরিবহন করতে পারবেন কি না - এসব বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে|

এর ফলে এখন থেকে অ্যালকোহল আমদানি, রপ্তানি, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সরবরাহ, বিপণন ও ক্রয় বিক্রয় এবং সংরক্ষণের জন্য অ্যালকোহল পারমিট, লাইসেন্স বা পাস নিতে হবে। বিশেষ করে মদ বা মদ্য জাতীয় পানীয় পানের জন্য পারমিট আর পরিবহনের জন্য পাস বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এ বিধিমালায়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, বিধিমালা না থাকার কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে। পারফিউম স্যানিটাইজার তৈরিতে কিংবা শিল্পে ব্যবহৃত অ্যালকোহল খেয়ে মারা যাওয়া কিংবা অন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরও এসেছে।

অধিদপ্তর জানায়, এবারই প্রথম বিধিমালা করা হলো। এর আগে এ সংক্রান্ত কোনো বিধিমালা ছিল না। শৃঙ্খলা আনার পাশাপাশি অ্যালকোহলের নামে খারাপ কিছু যেন বিক্রি না হয় আর সরকার যাতে রাজস্ব পায়- এসব বিষয় বিবেচনা করে নতুন এই বিধিমালা করা হয়েছে।

দেশীয় কোম্পানি উৎপাদিত মদ

দেশে গত কিছুদিন ধরেই ইয়াবা, আইস বা মেথ, এক্সটেসি এবং এলএসডির মতো মাদকের ব্যাপক ব্যবহার ঠেকাতে মদ বা বিয়ারের ওপর শুল্ক কমানোসহ অ্যালকোহলে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসছে।

গত ডিসেম্বরেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি আলোচনায় এসেছিল। ওই বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, দেশে অ্যালকোহলের ওপর ৬০০ শতাংশ শুল্ক থাকায় যেসব ক্লাবের অ্যালকোহলের লাইসেন্স আছে তারা কেউ আমদানি করে না, কারণ ট্যাক্স দিতে হয় বেশি।

বাংলাদেশে 'মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮' থাকলেও সেই আইনের আওতায় কোনো বিধিমালা ছিল না। মূলত ১৮৫৭ সালের ম্যানুয়ালই বিধিমালা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।

যা আছে নতুন বিধিমালায়

২১ বছরের নিচে কোনো ব্যক্তিকে মদ্যপানের পারমিট দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ এর বেশি বয়সী যে কেউ পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে মুসলিমদের ক্ষেত্রে এসোসিয়েট প্রফেসর পদমর্যাদার কোনো ডাক্তারের সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।

হোটেল, রেস্তোরাঁয় বা যেসব স্থানে সাধারণ খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি অ্যালকোহল সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও পরিবেশন করা হয় তারা বার স্থাপনের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

কোনো এলাকায় একশজনের দেশি মদ বা বিদেশি মদের পারমিটধারী থাকলে অ্যালকোহল বিক্রয়ের লাইসেন্স দেওয়া যাবে। অর্থাৎ কোনো ক্লাব বা প্রতিষ্ঠানে যদি কমপক্ষে একশজন সদস্য থাকেন যাদের এই পারমিট আছে সেখানেই অ্যালকোহল বিক্রি করা যাবে।

অ্যালকোহল বহন বা পরিবহনের জন্য অধিদপ্তর থেকে পাসের জন্য আবেদন করা যাবে। রেল, সড়ক, নৌ ও আকাশপথের যেকোনো পথেই অ্যালকোহল পরিবহন করা যাবে। তবে সেটা পাসে উল্লেখ থাকতে হবে।

অ্যালকোহলে কোনো ধরনের ভেজাল মেশানো যাবে না।

পারমিটধারী ক্লাব সদস্যরা ক্লাবের নির্ধারিত স্থানে বসে মদপান করতে পারবেন।

কোনো ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে দুশো জন অ্যালকোহল পারমিটধারী থাকলে তাদেরকে বার স্থাপনের লাইসেন্স দেওয়া যাবে।

ইপিজেড, থিমপার্ক বা সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে যেখানে বিদেশি নাগরিক থাকবে সেখানে বার স্থাপনের লাইসেন্স দেওয়া যাবে।

বিধিমালার অধীনে হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, ক্লাব, ডিউটি ফ্রি শপ ও প্রকল্প এলাকায় নির্দিষ্টসংখ্যক বার স্থাপন লাইসেন্স দেওয়া যাবে। যেমন ক্লাব ও রেস্টুরেন্টের ক্ষেত্রে একটি করে আবার পাঁচতারকা বা তার চেয়ে বেশি মানসম্পন্ন সাতটিরও বেশি বারের লাইসেন্স দেওয়া যাবে।

বিদেশি মদের জন্য ব্র্যান্ড রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে এমন কোন দেশ থেকে অ্যালকোহল আমদানি করে বিলাতি মদ উৎপাদন করা যাবে।

সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ ও যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামাল ব্যবহার ছাড়া বিয়ার উৎপাদন করা যাবে না।

সরকার নির্ধারিত বিয়ার ছাড়া অন্য কোনো বিয়ার উৎপাদন করা যাবে না।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ নিজ বাসায় মদপান করতে পারবেন।

বিদেশি মদ আমদানি বা রপ্তানির জন্য আবেদন করা যাবে।

বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় না এমন ইথাইল অ্যালকোহল, অ্যাবসলিউট অ্যালকোহল, রেক্টিফাইড স্পিরিট, স্ট্রং অ্যালকোহল ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেথিলেটেড স্পিরিট এবং শিল্প, গবেষণাগার ও অ্যালোপ্যাথিক ঔষধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহার্য অ্যালকোহল আমদানি করা যাবে।

যে ব্রান্ডের জন্য রেজিস্ট্রেশন নেয়া হবে সেই ব্রান্ডের অ্যালকোহল আমদানি করতে হবে।

তবে পর্যটন করপোরেশন, বার বা সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউ আমদানি করতে পারবে না

যে সব ক্লাবে মদ্যপানের পারমিটধারী সদস্যের সংখ্যা দুশো বা তার চেয়ে বেশি সেসব ক্লাব তাদের চাহিদা ৪০ শতাংশ আমদানি করতে পারবে।

শুল্ক ফাঁকি ঠেকাতে প্রায়শই অভিযান হয় ঢাকার অনেক বার ও প্রতিষ্ঠানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন এসব বিধিমালা সঠিকভাবে মানা হলে এটি যেমন সরকারের রাজস্ব বাড়াবে, তেমনি ক্রমবর্ধমান চাহিদা নিরসনে হোটেল রেস্তোরাঁগুলোও কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বার স্থাপন করতে পারবে, যে সুযোগ এতদিন অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন সরকারের অনুমোদিত কিছু ওয়্যার হাউজ, লাইসেন্সকৃত পানশালা ছাড়াও অল্প কিছু তারকা হোটেল থেকে মদ ক্রয়ের সুযোগ আছে পারমিটধারী ব্যক্তিদের জন্য। তবে বিয়ার, ওয়াইন, হুইস্কি কিংবা ভদকার মতো বিদেশি মদের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক থাকায় প্রায়শ ভেজাল মেশানো মদ্যপানের মতো দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। -বিবিসি বাংলা

(ঢাকাটাইমস/১৬ফেব্রুয়ারি/এএ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

বৈষম্য নিরসনে নাগরিক সমাজকে ভূমিকা রাখার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

মাদক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ প্রধান বিচারপতির

তিন জেলায় বজ্রপাতে ৭ জনের মৃত্যু

মোটরযানে হুটার-হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারে বিআরটিএর হুঁশিয়ারি

সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যতীত অভ্যন্তরীণ মাইগ্রেশন ঠেকানো সম্ভব নয়: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

নির্বাচন সংক্রান্ত সহায়তা দিবে ৯৯৯

দাবি আদায় না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ৩য় শ্রেণি সরকারি কর্মচারীদের

সাংবাদিকরা বাংলাদেশ ব্যাংকে ঢুকবে কেন, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের

কুয়েতে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন

সৌদিতে চলতি বছরে প্রথম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :