যমুনার ধূ-ধূ বালু চরে কালো জিরার চাষ

শুকনো মৌসুমে যমুনায় জেগে ওঠেছে ছোট-বড় বালু চর বা দ্বীপ। বালু চরে সবুজ প্রকৃতি ফসলের মাঝে মূল্যবান ঔষধি ফসল নামে পরিচিত কালো জিরা ‘কালো সোনা’ চাষ হচ্ছে। বিগত বছরে তেমন চাষ না হলেও এ বছর ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার অংশে যমুনা চরাঞ্চলের কৃষকদের মাঝে। মানুষের কাছে ব্যাপক চাহিদা থাকায় চাষিরা একে তুলনা করছেন সোনার সঙ্গে। সেই প্রাচীনকাল থেকেই বেশ পরিচিতি লাভ করছে ‘কালো সোনা’ নামের এ কালো জিরা মসলা জাতীয় ফসলটি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার যমুনা চরাঞ্চলে কালো জিরা চাষে বিগত বছরগুলোতে তেমন আগ্রহ না থাকলেও এ বছর কালো জিরা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এ বছর ১৮ হেক্টর জমিতে কালো জিরা চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরগুলোর চেয়ে কয়েকগুণ।
যমুনা চরাঞ্চলে বর্তমানে চাষ হচ্ছে বারি কালো জিরা- ১। এ জাতটির জীবনকাল ১৩৫-১৪৫ দিন। এর উচ্চতা ৫৫-৬০ সেন্টিমিটার। প্রতিটি গাছে প্রায় ৫-৭টি প্রাথমিক শাখা এবং ২০-২৫টি ফল থাকে। প্রতিটি ফলের ভেতরে প্রায় ৭৫-৮০টি বীজ থাকে যার ওজন প্রায় ০.২০-০.২৭ গ্রাম।
এ জাতের প্রতিটি গাছে প্রায় ৫-৭ গ্রাম বীজ হয়ে থাকে এবং ১ হাজার বীজের ওজন প্রায় ৩.০০-৩.২৫ গ্রাম। হেক্টর প্রতি এর গড় ফলন ০.৮০-১.০ টন হয়ে থাকে। স্থানীয় জাতের তুলনায় এ জাতের কালো জিরা চাষে রোগবালাইয়ের আক্রমণও খুব কম।
সরেজমিনে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। বিঘায় (৩৩ শতাংশ) ৪ থেকে সাড়ে ৪ মণ কালো সোনা উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতি মণ কালো জিরার দাম ১৬ হাজার টাকা।
অর্জুনার ভরুয়া গ্রামের কালোজিরা চাষি লাল মিয়া বলেন, ‘এ বছর ৩৩ শতাংশ বিঘা জমিতে কালো জিরা চাষ করছি। ফলন ভাল হয়েছে। আশা করছি, প্রায় ৪ মণ কালো জিরা উৎপাদন হবে’।
জগৎপুরা গ্রামের রহিম বলেন, ‘আমার জমিতে অন্যান্য ফসলের মধ্যে বন্ধু ফসল হিসেবে কালো জিরা ফসল বুনেছি। গাছগুলো বেশ বড় হয়ে ফুল ধরছে। আশা করছি, কালো জিরা চাষে লাভবান হতে পারব’।
কালিপুর গ্রামের আব্দুল আলিম জানান, ‘চরাঞ্চলের আবহাওয়া কালো জিরা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এই বছরে জমিতে কালো জিরার যে ফলন দেখছি, তাতে বাম্পার ফলন হবে। আগামীতে আরও বেশি করে কালো জিরা চাষ করব।’
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ড. হুমায়ূন কবির বলেন, ‘কৃষকদের মাঝে কম খরচে বেশি লাভের জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণে মসলা জাতীয় ফসল চাষে উদ্বুদ্ধকরণ হয়েছে বলেই এ বছর যমুনা চরাঞ্চলের কৃষকরা ব্যাপক হারে কালো জিরা চাষ করেছে’।
তিনি আরও বলেন, ‘আশা করছি, এ বছর প্রতি একরে ১৩ থেকে ১৪ মণ কালো জিরা উৎপাদন হবে। ফলন ভাল হওয়ায় চাষিরাও অনেক খুশি। আগামী বছর এ উপজেলার যমুনা চরাঞ্চলের কৃষকদের কাছে কাল জিরা ‘কালো সোনা’ নামে পরিচিতি লাভ করবে। এ লক্ষ্যে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছি’।
(ঢাকাটাইমস/২৪মার্চ/এলএ/এসএ)

মন্তব্য করুন