১০ মাসে ৬ খুন

সালথায় সহিংসতার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন তারা, নিচ্ছেন নানা উদ্যোগ

নুরুল ইসলাম, সালথা (ফরিদপুর)
| আপডেট : ২৪ মে ২০২২, ১৫:০৯ | প্রকাশিত : ২৪ মে ২০২২, ১৪:১৯

আদি যুগ থেকে সহিংসতার বিষাক্ত সংস্কৃতিতে জর্জরিত হয়ে আছে ফরিদপুরেরর সালথা উপজেলা। তুচ্ছ ঘটনায় এখানকার প্রায় গ্রামে প্রতিনিয়ত ঘটে থাকে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা। শত বছর ধরে এমন ঘটনা ঘটে চলেছে সালথায়। আদি যুগ থেকে এখন পর্যন্ত এমন হাজারও সংঘর্ষের ঘটনায় অগণিত ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। পঙ্গুত্ববরণ করেছেন অনেকে। এছাড়া হামলা পাল্টা হামলা চালিয়ে এ পর্যন্ত যেসব বসতবাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে তার সঠিক কোনো হিসাবও নেই।

এর মধ্যে গত দশ মাসেই সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ছয় জন। গত ২৬ ডিসেম্বর ভাওয়াল ইউনিয়নের নারানদিয়া গ্রামে প্রতিবন্ধী মোহাম্মাদ মাতব্বর, ২৫ ডিসেম্বর যদুনন্দী ইউনিয়নের যদুনন্দী গ্রামে গোলাম মাওলা, ৪ জুন ইদ্রিস কারিগর, ২৮ এপ্রিল নান্নু ফকির, ২৩ অক্টোবর খারদিয়া গ্রামে মারিজ শিকদার ও ৫ মে সিরাজুল ইসলাম সংঘর্ষে নিহত হন। এসব সংঘর্ষের ঘটনায় শত শত মানুষ আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক বাড়িঘর।

এতে এখানকার বাসিন্দারা অর্থনৈতিকভাবে যেমন ধ্বংস হচ্ছেন, তেমনি সামাজিকভাবেও হেয় হয়ে আসছেন। শুধু সহিংস কর্মকাণ্ডের জন্য সালথার মানুষকে সারাদেশের মানুষ ঘৃণার চোখে দেখে। এমনকি সালথায় কেউ আত্মীয়ও করতে চায় না। এমন পরিস্থিতি থেকে সালথাকে মুক্ত করতে এক রকম যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন ফরিদপুরের আলোচিত সাহসী পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান। তার কথা- সালথায় আর সহিংস কর্মকাণ্ড চালাতে দেয়া হবে না। সামাজিকভাবে প্রত্যেক দাঙ্গাবাজকে ভালো কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। তার নির্দেশে এ যুদ্ধে সামিল হয়েছেন সহকারী পুলিশ সুপার (সালথা-নগরকান্দা সার্কেল) মো. সুমিনুর রহমান ও সালথা থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শেখ সাদিক।

তারা দুইজনই সহিংসতা বন্ধে নানান উদ্যোগ নিয়েছেন। রাতদিন ২৪ ঘণ্টা মাঠে নেমে কাজ করছেন। সংঘর্ষের খবর পেলেই গোসল ও খাওয়া-দাওয়া বাদ দিয়ে ছুটে যাচ্ছেন ঘটনাস্থলে। সহিংস পরিবেশ থেকে সকলকে বের করে আনতে এমনকি পুলিশ সুপার নিজেও একাধিকবার সালথায় এসে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, গ্রাম্য মাতব্বরসহ বিশিষ্টজনদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন। যারা সহিংস কর্মকাণ্ডে লিপ্ত তাদের চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে করে গেছেন সতর্ক। যার ফল হিসেবে সালথার পরিবেশ কিছুটা হলেও পরিবর্তনের দিকে এসেছে।

সালথা উপজেলার জয়ঝাপ গ্রামের বাসিন্দা মো. রতন মাতব্বর বলেন- শত বছর ধরে আমাদের এলাকার প্রতিটি গ্রাম নিয়ন্ত্রণ করে আসছে মাতব্বররা। তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে এবং প্রভাব বিস্তার টিকিয়ে রাখতে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের নিয়ে গ্রাম্যদল তৈরি করে সহিংস কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে।

সালথা বাজারের ভ্যানচালক আবুল বাসার বলেন, আমাদের এসপি স্যার, সার্কেল স্যার ও ওসি স্যার অত্যন্ত সৎ লোক। যেকারণে থানায় এখন মামলা করতে একটি টাকাও লাগে না। তাদের সততার কারণে সাধারণ মানুষের থানায় যেতে এখন আর ভয় লাগে না। বর্তমানে তারা যেভাবে সংঘর্ষের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন, এটা অব্যাহত থাকলে এক সময় এমনিতেই সংঘর্ষ থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হবে সালথাবাসী।

স্থানীয় সাংবাদিক মনির মোল্যা ও আবু নাসের হুসাইন বলেন- আগে ফরিদপুরে অনেক পুলিশ সুপার এসেছেন। সালথায় সহিংস কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তেমন কেউ কঠোর হয়নি। তবে আমাদের পুলিশ সুপার স্যার ফরিদপুর যোগদানের পর থেকে সালথার সহিংস পরিবেশ নজরে এনেছেন। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সহিংসতা নিরসনের।

নবকাম পল্লী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, সালথার সহিংস সংস্কৃতি থেকে সকলকে বেরিয়ে আসতে হবে। সালথার জনপদে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পুলিশ সুপার সাহেব যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমি তার সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।

ফরিদপুর পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান বলেন, ফরিদপুরের ৯টি উপজেলায় কম বেশি মারামারির ঘটনা ঘটে। তবে সালথায় এর প্রভাবটা বেশি। এখানে স্থানীয় আধিপত্য এবং গ্রাম্য দলাদলির কারণে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মারামারি বা কাইজ্যার ঘটনা ঘটে। পক্ষ প্রতিপক্ষ তৈরি করে বাড়িঘব ভাঙচুরের মাধ্যমে সম্পদের যে ক্ষতি সাধন করা হয়, সেটা আসলে মানুষের অর্থের প্রচণ্ড ক্ষতি হয়। এগুলো থেকে উত্তরণের জন্য আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, সংঘর্ষ এখানকার মানুষের দীর্ঘদিনের অভ্যাস। সেটা শুধু আইন প্রয়োগ করে নিরসন করা সম্ভব হবে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা বিট পুলিশিং কার্যক্রম শুরু করেছি। বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে ছোট ছোট আকারে তাদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি যে, এই কাজগুলো করলে আর্থিক, মানসিক, শারীরিক ও সময়ের ক্ষতি হয়। পাশাপাশি আমাদের পুলিশ অফিসাররাও মাঠে নেমে কাজ করছেন। আমি নিজেও স্কুল-কলেজে গিয়ে যুব সমাজকে সচেতন করছি। উঠান বৈঠকের মাধ্যমেও সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। এটা চলমান থাকলে আশা করি এক সময় সালথার পরিবেশের পরিবর্তন ঘটবে।

(ঢাকাটাইমস/২৪মে/এআর/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :