‘ভয়ঙ্কর’ প্রতিবেশী: সহযোগিতার আড়ালে সাত দিনের শিশুকে অপহরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৪ মার্চ ২০২৩, ১৭:২০

মিলি আক্তার। ঢাকার ধামরাই থানার ঢুলিভিটা এলাকার বাসিন্দা। স্থানীয় একটি বাড়িতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করেন তিনি। গর্ভাবস্থায় স্বামী আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র চলে যাওয়ায় অসুস্থ শরীর নিয়ে অন্যের বাসায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। গেল ১৯ই ফেব্রুয়ারি পুত্র সন্তানের জন্মদেন মিলি। তার অসুস্থতার সময়ে দুইমাস আগে পরিচিত রুবেল ও তানিয়া আফরোজা নামের এক দম্পতি নিয়মিত খোঁজ খবর ও নানা সহযোগিতার হাত বাড়ায়। ফলে তাদের সঙ্গে মিলির একটি ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে রুবেল ও তার স্ত্রী তানিয়ার কাছে নবজাতক সন্তানকে রেখে ওষুধ আনতে বাইরে যান। আর এই সুযোগে নবজাতক শিশুটিকে নিয়ে পালিয়ে যান রুবেল ও তানিয়া।

পরবর্তীতে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। না পেলে খুলনার রুপসা নদীতে ফেলে হত্যার হুমকি দেন। পরবর্তীতে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ভুক্তভোগী মিলি আক্তার। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যশোরের অভয়নগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী রুবেল ও তার স্ত্রী তানিয়াকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এ সময় অপহৃত নবজাতকে উদ্ধার করা হয়।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে ধামরাই থানার ঢুলিভিটা এলাকায় মিলি আক্তার নামের এক নারীর সাত দিন বয়সি নারীর সন্তান অপহৃত হয়। এই ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে করেন ভুক্তভোগী নারী। ডায়েরিতে উল্লেখ করেন, গত দেড় থেকে দুই মাস ধরে পরিচিত রুবেল ও তানিয়া দম্পতির সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। ঘটনার দিন রাতে তাদের কাছে সন্তানকে রেখে ওষুধ কিনতে গেলে বাসায় ফিরে সন্তানকে খুঁজে পান নি। পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢুলিভিটা বাজার কমিটির কাছ থেকে রুবেলের বাসার ঠিকানা নিয়ে বাসায় গেলে বাসা তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পায়। ২৮ ফেব্রুয়ারি রুবেল মোবাইল ফোন চালু করে নবজাতক শিশুকে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে মোবাইল বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে পহেলা মার্চ রুবেল অন্য একটি নাম্বার দিয়ে মিলি আক্তারকে ফোন করে জানান, নবজাতক তার কাছে আছে। ফিরে পেতে হলে এক লাখ টাকা দিতে হবে। মুক্তিপণের টাকা না দিলে নবজাতককে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী মিলি আক্তার তার নবজাতক শিশুকে ফিরে পেতে র‌্যাব-৪ এর সহায়তা চেয়ে অভিযোগ দাখিল করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩ মার্চ রাতে র‌্যাব-৪ এর একটি দল যশোর জেলার অভয়নগর থানার আমতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী মো. রুবেল শেখ (৩৫) ও তার স্ত্রী তানিয়া আফরোজ (২৩)কে গ্রেপ্তার করা হয়। অপহৃত সাত দিনের নবজাতক শিশুটিকে উদ্ধার করা হয় ।

প্রাথমিকভাবে জানা যায় যে, ভুক্তভোগী মিলি আক্তার কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার পাঠানপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা এলাকার বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। ঢুলিভিটা বাজারের পাশে থাকার কারণে একই এলাকার ভাড়াটিয়া রুবেল ও তার স্ত্রীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রুবেল মিলি আক্তারকে ফুফু বলে ডাকত। ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। পরবর্তীতে গত ২৬ তারিখ সন্ধ্যায় রুবেল ও তার স্ত্রী ভুক্তভোগীর সঙ্গে দেখা করতে তার বাসায় আসেন। মিলি অসুস্থ থাকায় নবজাতক শিশুকে রুবেল ও তার স্ত্রীর কাছে রেখে ওষুধ কিনতে যান। টাকা নিয়ে ওষুধ কিনে বাসায় ফিরে আসেন। ২০ মিনিট পর বাসায় ফিরে ভুক্তভোগী মিলি আক্তার দেখেন রুবেল ও তার স্ত্রী বাসায় নেই। তার নবজাতক ছেলেও নেই।

জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল ও তার স্ত্রী র‌্যাবকে জানিয়েছেন, ২ থেকে ৩ মাস ধরে ঢুলিভিটা বাজার এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছেন। রুবেল ধামরাই এর ঢুলিভিটার বাজার এলাকায় বিভিন্ন দোকান ও মানুষজনের নিকট থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ করতেন না। পাওনাদাররা ধার পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকায় তিনি ঢুলিভিটা এলাকা থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। পাশাপাশি ভুক্তভোগীর সঙ্গে সু-সম্পর্ক থাকায় কৌশলে ভুক্তভোগী মিলি আক্তারের নবজাতক শিশুকে অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনাও করেন। পরে সুযোগ বুঝে নবজাতক শিশুকে নিয়ে বের হয়ে যান। ধামরাই এলাকা থেকে প্রথমে বাস যোগে খুলনায় যান। সেখানে আত্মগোপনের জন্য তারা সুবিধামত ভাড়া বাসা খুঁজতে থাকেন। পরবর্তীতে খুলনার অদূরে রূপসা নদীর অপর পাশে যশোরের আমতলা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় উঠেন। এই সময়ে বিভিন্নভাবে শিশুটির মা’কে মুক্তিপণের টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। এরই মধ্যে নবজাতক শিশুটি তার মায়ের অনুপস্থিতিতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা সিদ্ধান্ত নেন যে, মুক্তিপণ না পেলে শিশুটিকে গোপনে রূপসা নদীতে ফেলে দিয়ে আত্মগোপন করবেন।

গ্রেপ্তার রুবেলের বিরুদ্ধে যশোরের অভয়নগর থানায় ধর্ষণ ও অপহরণ মামলা রয়েছে। তিনি সাত থেকে আট বছর ঢাকায় গার্মেন্টসকর্মীর পাশাপাশি রাজমিস্ত্রীর কাজ করেছেন। রুবেল ইতিপূর্বে একাধিক বিয়েও করেছেন। গ্রেপ্তার তানিয়া আফরোজ একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। গত তিন বছর আগে পরিবারের অমতে রুবেলকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তারা বিয়ে করে ধামরাই ঢুলিভিটা এলাকায় বসবাস শুরু করেন।

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

ঢাকাটাইমস/০৪মার্চ/এসএস/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :